News update
  • US May Ease Tariffs Further as Trade Gap Narrows     |     
  • Arab-Islamic summit over Israeli strike on Doha Monday     |     
  • NASA Rover Uncovers Strongest Hint of Ancient Life on Mars     |     
  • Eminent Lalon singer Farida Parveen passes away     |     
  • Dr Yunus mourns Farida Parveen's death     |     

খাবার বারবার গরম করলে কী হয়?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক স্বাস্থ্য 2024-06-07, 6:30pm

riiwtoweotlw-3f949f78d4ee4bb50bbb92d98bca4f511717763414.jpg




বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর প্রতি ১০ জন মানুষের মাঝে একজন অনিরাপদ খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে, বয়স্ক, গর্ভবতী নারী, পাঁচ বছরের কম বয়সীরা, অপেক্ষাকৃত কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ এই সমস্যার প্রধান শিকার।

খাবার যদি নিরাপদ না হয়, তাহলে তা শরীরের সুস্থতার জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে পড়ে। কারণ খাবারে সামান্য গড়মিল হলেই সেখান থেকে পেটের পীড়াসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে খাদ্যের কারণে সৃষ্ট গণ্ডগোলের পর নানা ধরনের আলাপ-আলোচনা ওঠে। জনগণও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, পরিবার চাইলেই যথাযথভাবে খাবার সংরক্ষণ করার মাধ্যমে খাদ্য থেকে সৃষ্টি রোগবালাইকে প্রতিরোধ করতে পারে। সেক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মেনে চলা উচিৎ।

নিরাপদ খাবারের প্রথম ধাপ ‘আমাদের ঘর’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপদ খাবারের ব্যাপারে সর্বপ্রথম সচেতনতা শুরু হওয়া উচিৎ নিজেদের ঘর থেকে।

কারণ রান্না করা বা কাঁচা খাবার কীভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, খাবারের বিষক্রিয়া এড়াতে করণীয় কী, একই খাবার বারবার রান্না করলে খাবারের গুণমান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কি না; এরকম আরও নানা বিষয়ে যদি মানুষ শুরু থেকেই সচেতন থাকে, তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ এড়ানো সম্ভব।

খাবার নিরাপদ রাখতে যেসব পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, তার মধ্যে রয়েছে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, কাঁচা ও রান্না করা খাবার আলাদা রাখা, খাবার ভালোভাবে রান্না করা, খাবারকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখা এবং রান্নার সময় নিরাপদ পানি ও নিরাপদ কাঁচামাল ব্যবহার করা।

রান্না করার সময় যেভাবে সতর্কতা মানতে হবে

রান্না করার সময় নিজের এবং খাদ্যদ্রব্যের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অন্যতম মৌলিক শর্ত। কিন্তু এর বাইরেও কাঁচা খাবার ও রান্না করা খাবারের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা মেনে চলা প্রয়োজন।

উদাহরণস্বরূপ, কাঁচা মাংস, সি ফুড, এমনকি ডিম থেকে শুরু করে রেডি-টু-ইট (যা এখনই খাওয়া যাবে) খাবারে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সেজন্য, যে বোর্ডের ওপর রেখে কাঁচা মাংস কাটা হয়, সেটি যথাযথভাবে না ধুয়ে তাতে ফলমূল বা শাকসবজির মতো খাবার কাটা-কুটি করা উচিৎ না।

এছাড়া, মাংস, পোল্ট্রি, ডিম ও সি ফুড রান্না করার সময় একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যে তা যেন অন্তত ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রান্না করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, খাবার সংরক্ষণের বেলায় তাপমাত্রা পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে ও ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে গেলে খাবারে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় না।

খাবার বারবার গরম করলে কী হয়

তাপমাত্রার বিষয়ে ডব্লিউএইচও’র সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও অনেক সাধারণ মানুষ তা জানেন না।

সেজন্যই অনেকেই আছে, যারা ফ্রিজে সংরক্ষিত খাবারকে বাইরে নামিয়ে বারবার গরম করেন।

এ বিষয়ে ল্যাবএইড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ সামিয়া তাসনিম জানান, “খাবার বারবার গরম করলে প্রথমত খাবারের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়। দ্বিতীয়ত, এতে খাবারে ব্যাক্টেরিয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে।”

এটি পেটের জন্য বেশ ক্ষতিকর এবং এটি থেকে থেকে ডায়রিয়া বা বদহজম দেখা দেয়।

“আবার, খাবারে বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদান দ্বিতীয়বার গরম করলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে বিষাক্ত উপাদান তৈরি হতে পারে, যা পরবর্তীতে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়,” তিনি বলেন।

ফ্রিজে কীভাবে খাবার রাখতে হবে?

ফ্রিজের সহজলভ্যতার কারণে ফ্রিজে খাবার রাখাটা আমাদের নিত্যকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু পুষ্টিবিদরা বলেন, ফ্রিজে বেশিদিন খাবার সংরক্ষণ করা উচিৎ না। ফ্রিজে দীর্ঘদিন খাবার রেখে দিলে খাবারের রং পরিবর্তন হয়ে যায়, স্বাদ গন্ধযুক্ত হয় ও পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়; যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না।

তবে যেগুলো পচনশীল খাবার, সেগুলোকে দুই ঘণ্টার মাঝে ফ্রিজে রাখতে হবে এবং নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। তবে সেই খাবারকে খুব বেশিদিন ফ্রিজে রেখে দেওয়া যাবে না।

এক্ষেত্রে মিজ তাসনিমের পরামর্শ, গরমের সময় খাবার সঠিকভাবে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে এবং বাসি খাবার একদমই খাওয়া যাবে না।

তবে ফ্রিজে খাবার রাখে মানেই যে তা ‘নিরাপদ’, এমন না। বছরের এই সময়ে বারবার লোডশেডিং হয়, তাই ফ্রিজের খাবারেও ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে পারে।

তিনি বলেন, “ফ্রিজের টেম্পারেচার ঠিকঠাক রাখতে হবে এবং খাবার বাইরে ফেলে রাখা যাবে না। তবে বড়জোর দুইদিন ফ্রিজে খাবার রেখে তা খেতে পারি আমরা। তারপর আবার নতুন করে রাঁধতে হবে।”

এদিকে ফ্রিজ থেকে বের করা খাবার সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া যাবে না। ফ্রিজ থেকে খাবার বের করার পর তা কিছুক্ষণ স্বাভাবিক তাপে রেখে দিয়ে গরম করতে হবে। আবার খাবার গরম করার পরও তা সঙ্গে সঙ্গে না খেয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রা রেখে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে।

খাবার থেকে বিষক্রিয়া

আমাদের অনেকেই আছেন, যারা পলিথিন বা প্লাস্টিকের মোড়কে খাবার আনি। কিন্তু পলিথিন বা প্লাস্টিকের মোড়কে গরম খাবার নেওয়া শরীরের জন্য ভালো কোনও বিষয় না।

কারণ, “প্লাস্টিক বা পলিথিনে গরম পানি বা গরম খাবার ঢালার সঙ্গে সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সেখানে বিসফেলন-এ তৈরি হয় এবং এটি থাইরয়েড হরমনকে বাধা দেয়।”

বিসফেনল-এ একটি সাধারণ রাসায়নিক পদার্থ, যা সাধারণত প্লাস্টিকের পাত্রে তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন যে এটি মানুষের শরীরে নানা রকম নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

“বিসফেনল-এ থাইরয়েড হরমনকে বাধা দেয়। এর কারণে মস্তিষ্কের গঠনও বাধাপ্রাপ্ত হয়। গর্ভবতী নারীদের রক্ত থেকে বিসফেনল-এ ভ্রুণে যায়। ফলে ভ্রুণ নষ্ট হতে পারে এবং বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, শিশুও বিকলাঙ্গ হতে পারে,” বলেন মিজ তাসনিম।

এইসব বিবেচনায় গরম খাবার পলিথিন বা প্লাস্টিকে না নেওয়া উত্তম। বাজার থেকে বিভিন্ন কাঁচা খাবার কিনে নেওয়ার ক্ষত্রে পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করা যায়।

সেজন্য, প্লাস্টিকের বোতলে গরম পানি না খাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়।

পরিবারে খাদ্য নিরাপত্তার সুবিধা

বাসাবাড়িতে খাবারের নিরাপত্তার বিষয়টি মেনে চলা হলে কী কী সুবিধা হতে পারে, সে সম্বন্ধে কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যথা—

পরিবারের শিশুদের বেড়ে ওঠা ও বিকাশে উন্নতি

খাবার যদি নিরাপদ হয়, তাহলে তা শিশুদের স্ক্লুলে উপস্থিতি ও পরিণত বয়সে কর্মক্ষেত্রে মানুষের উৎপাদনশীলতা বাড়ায়

খাদ্য নিরাপদ হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার খরচও বেঁচে যাবে

নিরাপদ খাবার কর্মক্ষেত্রে উপস্থিতি ও উপার্জন ক্ষমতা বাড়ায়

নিরাপদ খাবার দীর্ঘমেয়াদে শরীরের উন্নতির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে

বাংলাদেশে নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করার উপায় কী

এখন ঘরের খাবারের নিরাপত্তার বিষয়টি তো গেল, কিন্তু বাইরের খাবারের বেলায় কী হবে? ক্রেতারা কীভাবে বুঝবেন যে কোন খাওয়া খাবার তাদের জন্য নিরাপদ, কোনটি অনিরাপদ?

বাংলাদেশে যে কোনো খাদ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের। ২০১৩ সালে সরকার নিরাপদ খাদ্য আইন পাশ করে।

এরপর ২০১৫ সালে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত হয় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সংস্থাটি পুরোদমে কাজ শুরু করতে পেরেছে ২০২০ সাল থেকে।

গত বছরের মার্চে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক এক প্রতিবেদন তৈরির সময়ে বিবিসিকে সংস্থাটির খাদ্যভোগ ও ভোক্তা অধিকার বিভাগের সদস্য মো. রেজাউল করিম বলেছিলেন, “আমাদের খুবই সীমিত লোকবল নিয়ে আমরা সারা বাংলাদেশে কাজ করার চেষ্টা করে চলেছি। প্রতিটি জেলায় আমাদের মাত্র একজন করে কর্মকর্তা রয়েছেন। তাকেই পুরো ফুড চেইনটা দেখতে হয়।”

এই কর্মকর্তা বলছিলেন, উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোগ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে খাদ্য অনিরাপদ হতে পারে। আর এক্ষেত্রে তারা কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করে থাকেন।

রাসায়নিক মিশ্রণ; যেমন, সার বা কীটনাশকের ব্যবহার

জৈবিক বা অনুজীবের দূষণ; এটি পরিবেশ দূষণ থেকেও হতে পারে

খাদ্য সংরক্ষণ; সঠিক তাপমাত্রায় সঠিক মোড়কে ঠিকঠাক সংরক্ষণ করা না হলে

ভৌত দূষণ; যা মানুষের শারিরীক স্পর্শ বা স্থাপনা থেকেও হতে পারে

আর এসব ব্যাপারে সবাইকে সচেতন করাই নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রধান কাজ বলছেন মি. রেজাউল।

তবে শুধু ভোক্তারা সচেতন হলেই খাদ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না, বরং এ বিষয়ে সরকারের আরও জোরালো ভূমিকা নেয়া দরকার বলে মনে করেন অনেক বিশ্লেষক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন বলছিলেন, "সচেতনতা তৈরী হলেই কি মানুষ বুঝবে যে এই খাবার নিরাপদ না নিরাপদ নয়? সরকারের যে সমস্ত সংস্থা যারা বিভিন্ন অনুমতি দিয়ে থাকে, তাদেরকে ঠিকমত কাজ করতে হবে।”

তবে যদি কোনও ক্রেতার কোনও খাবারকে অনিরাপদ মনে হয়, তবে তারা বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অফিসে সরাসরি এসে কিংবা ইমেইলে অভিযোগ জানাতে পারে। তাছাড়া, সংস্থাটির ওয়েবসাইটে দেয়া বিভিন্ন জেলার কর্মকর্তাদের ফোনেও অভিযোগ জানাতে পারবে তারা।

সাধারণত খাবারের অভিযোগ গ্রহণ করে থাকে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তবে খাদ্যে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আইনি বাধার কথাও বলছেন মি. রেজাউল করিম।

“বাংলাদেশে খাদ্য ব্যবসা করতে এখনো পর্যন্ত কোনও লাইসেন্স বা রেজিট্রেশন সিস্টেম নেই। আমরা সেটা আইন সংশোধনের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি,” তিনি বলেছিলেন।