News update
  • BNP weighing review of some nominations amid grassroots unrest     |     
  • US presses for Gaza resolution as Russia offers rival proposal     |     
  • 35 crude bombs, bomb-making materials found in Geneva Camp     |     
  • 8 Islamic parties want referendum before polls, neutral admin     |     
  • Stocks sink on week’s last trading day; DSEX plunges 122 points     |     

হিটলারের ডিএনএ নিয়ে গবেষণা, অসাধারণ কিছু তথ্যের সন্ধান

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিবিধ 2025-11-15, 7:39pm

afp_20251113_83wv29f_v1_highres_filesgermanybritainwwiihistoryscience-0fdf4080ddfdded5112d3143cc1c75f91763213996.jpg




অ্যাডলফ হিটলারের রক্তের ডিএনএ বিশ্লেষণে উঠে এসেছে তার বংশধারা ও সম্ভাব্য স্বাস্থ্যগত অবস্থার অসাধারণ কিছু তথ্য। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা পুরোনো রক্তমাখা কাপড়ের টুকরো বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করেছেন—হিটলারের ইহুদি বংশধারার গুজব সত্য নয়। পাশাপাশি তারা শনাক্ত করেছেন, তার ছিল যৌনাঙ্গের বিকাশে প্রভাব ফেলা এক জেনেটিক সমস্যা।

যদিও অনেকে ‘মাইক্রোপেনিস’ বা ‘টেস্টিকল’-সংক্রান্ত গুজবের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন, কিন্তু আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো—ডিএনএ দেখাচ্ছে তার মধ্যে অটিজম, স্কিৎজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিসঅর্ডারের প্রবণতা অত্যন্ত বেশি (শীর্ষ ১ শতাংশের মধ্যে)। খবর বিবিসির। 

তবে বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করে বলছেন—এটি কোনো রোগ নির্ণয় নয় বরং জেনেটিক প্রবণতার একটি সূচক মাত্র।

এই গবেষণাকে ঘিরে নৈতিকতা ও সম্ভাব্য কলঙ্কের আশঙ্কা সামনে আসায় প্রশ্ন উঠেছে—এ গবেষণা আদৌ করা উচিত ছিল কিনা?

গবেষকদের দোটানা

চ্যানেল ৪–এর ডকুমেন্টারি হিটলার্স ডিএনএ: ব্লুপ্রিন্ট অব এ ডিকটেটর–এ প্রথমেই গবেষক প্রফেসর টুরি কিং বলেন, ‘আমি ভীষণ দোটানায় ছিলাম।’

বিবিসিকে তিনি জানান, হিটলারের মতো ব্যক্তির ডিএনএ নিয়ে গবেষণায় কী ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, তা তিনি জানতেন। তবু মনে করেছিলেন—এ কাজ যেকোনোভাবেই কেউ না কেউ করবে; তাই অন্তত তার নেতৃত্বে গবেষণাটি নৈতিকতা, সতর্কতা ও বৈজ্ঞানিক মান বজায় রেখে করা সম্ভব হবে।

প্রফেসর টুরি কিং এর আগে রিচার্ড তৃতীয়ের কঙ্কাল শনাক্তকরণ প্রকল্পেও নেতৃত্ব দিয়েছেন।

হিটলারের রক্ত পাওয়া গেল কীভাবে?

যে কাপড়ে রক্ত ছিল, সেটি নেওয়া হয়েছিল হিটলারের বাঙ্কারের সোফা থেকে—সেখানেই ১৯৪৫ সালে তিনি আত্মহত্যা করেন। মার্কিন সেনা কর্নেল রোজেনগ্রেন কাপড়টি যুদ্ধ–স্মারক হিসেবে সংগ্রহ করেন, যা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের গেটিসবার্গ মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হচ্ছে।

পরে বিজ্ঞানীরা হিটলারের এক আত্মীয়ের ডিএনএ–এর সঙ্গে তার ওয়াই-ক্রোমোজোম মিলিয়ে নিশ্চিত হন—এটি সত্যিই হিটলারের রক্ত।

গবেষণায় পাওয়া প্রধান তথ্য

হিটলারের ইহুদি বংশধারা ছিল না। দীর্ঘদিনের গুজব ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে।

তার ছিল ‘কালম্যান সিনড্রোম’

যার ফলে যৌনাঙ্গের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হয়, লিবিডো কমে যায় এবং টেস্টিস নেমে না আসা এবং মাইক্রোপেনিস দেখা দিতে পারে।

ব্যক্তিগত জীবনে তার শূন্যতার ব্যাখ্যা মিলতে পারে

ইতিহাসবিদ ড. অ্যালেক্স কায়ের মতে, হিটলারের প্রায় কোনো ব্যক্তিজীবনই ছিল না। এই জেনেটিক অবস্থাই তার সম্পূর্ণ রাজনীতিমুখী চরম মনোযোগের একটি কারণ হতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য ও নিউরোডাইভার্সিটি নিয়ে বিতর্ক

ডিএনএ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, হিটলারের অটিজম, এডিএইচডি, স্কিৎজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিসঅর্ডারের প্রবণতা ছিল খুবই বেশি।

কিন্তু প্রবণতা মানেই রোগ নয়, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন।

কিছু বৈজ্ঞানিক মনে করছেন—গবেষণাটি অতিরঞ্জিত হয়েছে এবং ভুল ব্যাখ্যার ঝুঁকি রয়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন—অটিজম বা মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে নতুন করে কলঙ্ক তৈরি হতে পারে।

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল অটিস্টিক সোসাইটি এই গবেষণাকে ‘সস্তা কৌশল’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

ডকুমেন্টারির নাম নিয়েও সমালোচনা

ডকুমেন্টারির নামের ‘ব্লুপ্রিন্ট অব এ ডিকটেটর’ অংশটি নিয়ে ইতিহাসবিদেরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে—কোনো ‘ডিকটেটর জিন’ নেই এবং এই নাম ভুল বার্তা দিতে পারে।

চ্যানেল ৪ অবশ্য দাবি করছে—‘ডিএনএ–কে সাধারণত জীবনের ব্লুপ্রিন্ট বলা হয়’—এ কারণেই এই নামকরণ।

নৈতিকতা: হিটলারের অনুমতি ছাড়া কি গবেষণা করা উচিত ছিল?

হিটলারের কোনো বংশধর নেই। তিনি মানব ইতিহাসের ভয়ংকর অপরাধী। তাই অনেকেই মনে করেন—এ গবেষণা নৈতিকতার বিরুদ্ধে নয়।

কিন্তু সমালোচকেরা বলছেন, ডিএনএ বিশ্লেষণ দিয়ে হিটলারের নৃশংসতার কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এতে বরং ইতিহাসের আসল শিক্ষা আড়াল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

ইতিহাসবিদ অ্যান ভ্যান মওরিক বলেন, ‘হিটলারের যৌনাঙ্গ বা জেনেটিক অবস্থার ওপর ফোকাস করলে গণহত্যা কীভাবে ঘটে, তা বোঝা যায় না।’

গবেষণা কি করা উচিত ছিল?

এ প্রশ্নের উত্তর বিভক্ত। সমর্থকেরা বলছেন, এতে হিটলারকে আরও ভালো বোঝা যায়, ভবিষ্যতের গবেষণার পথও খুলে যায়।

বিরোধীরা মনে করেন, ডিএনএ বিশ্লেষণে ‘অশুভতার উৎস’ খোঁজা বিভ্রান্তিকর এবং ভুল ব্যাখ্যার ঝুঁকি তৈরি করে।

গবেষণাটি এখনও পিয়ার–রিভিউ পর্যায়ে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করছেন, এ ফলাফল অত্যন্ত সাবধানে ব্যবহার করা উচিত।

ড. কায়ের মতে, ‘যা জানি তা স্পষ্টভাবে বলতে হবে, আর যা জানি না তা স্বীকার করতে হবে।’

এ ধরনের গবেষণা সমাজে কীভাবে প্রভাব ফেলবে—তা ভবিষ্যতই বলে দেবে।