নিহত পাইলট তৌফিক ইসলাম সাগর ও তার স্ত্রী। ছবি: সংগৃহীত
প্রশিক্ষণের চূড়ান্ত ধাপে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান ‘এফ-সেভেন বিজিআই’ জঙ্গি বিমান নিয়ে একাকী আকাশে উড়েছিলেন পাইলট তৌকির ইসলাম সাগর কিন্তু রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন তিনিসহ ২০ জন। পাইলট তৌকির ইসলাম সাগর মাত্র বছর আগে বিয়ে করেছিলেন।
সোমবার (২১ জুলাই) রাজশাহীর উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ ভারি হয়ে উঠেছে।
তৌকির ইসলাম সাগরের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট এলাকায়। তবে তার পরিবার রাজশাহী উপ-শহরের সপুরা এলাকায় ‘আশ্রয়’ নামে একটি বহুতল ভবনে ভাড়া থাকেন। সেখানে তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন, বোন সৃষ্টি ও বোনজামাই থাকেন।
তৌকিরের স্ত্রীর নাম আকশা আহম্মেদ নিঝুম, তিনি ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। ঢাকায় বিমানবাহিনীর কোয়াটারে থাকতেন এই নবদম্পতি। সর্বশেষ গেল কোরবানি ঈদে (জুন মাসে) রাজশাহীর বাসায় এসেছিলেন তৌকির। এরপরে ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরে আর রাজশাহীতে আসেননি পাইলট তৌকির।
তৌকিরের রাজশাহীর উপশহরের বাসার মালিক আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, তৌকির ইসলাম সাগর প্রথমবারের মত একা প্রশিক্ষণ বিমান চালাবেন- এই খবরে পুরো পরিবারের সদস্যরা আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত ছিলেন। দুপুরের পর তারা বিমান বিধ্বস্তের খবর পান।
পাইলট তৌকিরের মেজ চাচা মতিউর রহমান জানান, সাগরের বিয়েটা মাত্র ছয় মাস আগে হয়েছে। এখনও কোনো সন্তান হয়নি। সে সম্প্রতি রাজশাহীতে এসেছিল পরিবার দেখতে। আজ দুপুরে হঠাৎ তার মৃত্যুর খবর পেলাম।
সাগরের মামা শওকত আলী জানান, ছোট থেকেই সাগরের স্বপ্ন ছিল পাইলট হবেন। পরিবারের ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে অফিসার হবেন তিনি। তবে নিজের স্বপ্নেই অটল ছিল সাগর। পড়ালেখায় ছিলেন মেধাবী। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন রাজশাহী গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলে। এরপর ভর্তি হন পাবনা ক্যাডেট কলেজে, সেখান থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। পরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন তিনি।
তৌকিরের আরেক মামা সেলিম জানান, প্রায় বছর খানেক তার বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু দুইমাস আগে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে। তার স্ত্রী ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। আগামীকাল (মঙ্গলবার) রাজশাহীতে তার দাফন সম্পন্ন হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, সোমবার দুপুরে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী ভবনে এফ-৭ বিজেআই প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও দুর্ঘটনায় শতাধিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ১৭১ জনকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে নেয়া হয়েছে। হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন, দগ্ধদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী এবং কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।