News update
  • BUET team awarded for early breast cancer screening system     |     
  • Greater worker-owner bonhomie needed to speed up dev: Yunus     |     
  • Dhaka’s Rickshaws: The untold mystery of their numbers     |     
  • Historic May Day today - Thursday     |     
  • 248 arrested, illegal nets seized in 6-day drive: River Police     |     

আমাদের ছোট্টগ্রাম :

প্রবাস 2025-04-28, 12:53am

nazrul-islam-enayetpur-d535aa1c26118458cd6080737a9f5aca1745779993.jpg

Nazrul Islam



নজরুল ইসলাম

গত ৪২ বৎসর রুটি রোজগারের জন্য আমার “ছোট্টগ্রাম” এনায়েতপুর এর মায়া ছেড়ে বিদেশে রয়েছি। এই দীর্ঘ সময়ে বিদেশে থেকে কি পেয়েছি হিসাব মিলাতে গেলে দেখি অনেক কিছু হারিয়েছি। এই ছোট্টোগ্রামে কিছু কিছু লোক যারা আমাদের অগ্রগামী এবং যাদের হাত ধরে আমরা এগিয়েছি, তাদের প্রায় সবাই এই দীর্ঘ সময়ে একে একে বিদায় নিয়েছেন। এদের- ই একজন জনাব: খোরশেদ আলম (এক্স -চেয়ারম্যান) এবং তাঁর

স্ত্রী তিন দিন পর দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। খোরশেদ আলম সাহেবের সঙ্গে ছিল ছোটকালে আমার অন্তরঙ্গতা। বয়সে অনেক বড়,দেশে গেলে হাসিমুখে খোঁজ খবর নিতেন। তিনি স্থানীয় উনিয়নের দুই টার্ম চেয়ারম্যান এবং একজন সমাজকর্মী হিসাবে কচুয়া উপজেলায় পরিচিত । তিনি উনিয়নের সড়ক ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। জন সেবামূলক কাজে যোগদানের পূর্বে তিনি কয়েক বৎসর “চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টে” কর্মরত ছিলেন।

খোরশেদ আলম সাহেব আমাদের গ্রামের এক অবস্থা সম্পর্ণ পরিবারের একমাত্র ছেলে। বাবামায়ের অতি আদরের ছেলে, বাবা অঢেল সম্পত্তির মালিক, স্কুল জীবনেই বিয়ে করিয়ে মাবাবা পুত্রবধূ ঘরে তুলে নেন।

অনেকেই স্কুল জীবনে বিয়ে করলে, বেশিদূর পড়াশুনায় এগুতে পারে না। কিন্তু ওনার ব্যাপারে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম, চাঁদপুর কলেজ থেকে গ্রাডুয়েশন করে চাকুরীতে যোগদান করেন।মাবাবার শখ, উনি চেয়ারম্যান ইলেকশন করে দেশের কাজ করবেন; তাই চাকুরী ছেড়ে ১৯৮০র দিকে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। সেবার আমি নিজেও ওনার সঙ্গে এলাকায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছি এবং তিনি অনেক ভোটের ব্যবধানে পাশ করেছিলেন। আমি খোরশেদ আলম সাহেবকে একজন সামাজিক মানুষ হিসাবে ছোটকাল থেকেই দেখে আসছি। হাসিখুশি মানুষ, সবাই ওনাকে ভালোবাসতেন।

খ ) এনায়েতপুর একটি ছোট্টগ্রাম, সে যুগে এই গ্রামে ৭-৮ টি বাড়ি এবং লোকসংখ্যা ও কম ছিল। এই গ্রামটি ছিল আম,জাম,কাঁঠাল,খেজুর,তাল ও নানাহ গাছগাছালি ভর্তি । সন্ধ্যা হতেই গ্রামে ভুতুড়ে অন্ধকার নেমে আসতো। গ্রামের লোকজন সে যুগে রাতে চেরাগ,কুপি বা হারিকেন ব্যবহার করতো এবং রাতের খাবার খেয়ে সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়তো। সে যুগে মানুষের তেমন কোনো চাওয়া পাওয়ার আকাঙ্খা ছিল না। ভোর হতেই

মসজিদ থেকে সু-মধুর আজানের ধ্বনি “আসসালাতু খাইরুম মিনান্নাউম, ঘুম থেকে নামাজ ভালো” শুনা যেত । এ ছাড়া গোয়ালঘরে গরুর হাম্বা হাম্বা ডাক এবং পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে মা- চাচীরা জেগে বলতেন “সকাল হয়েছে, ঘুম থেকে উঠো এবং হাতমুখ ধুয়ে নামাজ পড়তে যাও।“ সকালে চিড়ামুড়ি খেয়ে কাচারীতে চাচাতো ভাইবোনেরা মিলে জোরে জোরে আওয়াজ করে আরবি পড়ে ঘরে ফিরতাম। ওই যুগে কারও বাড়িতে পানির কল ছিল না, সবাই পুকুরের পানি দিয়ে গোছল,রান্না ও খাওয়ায় ব্যবহার করতো। প্রতিটি বাড়িতেই ছিল কয়েকটা পুকুর, এবং বাড়িগুলি ছোটছোট খাল দ্বারা আলাদা করা ছিল , বর্ষা হলে মনে হতো যেন এক একটি বাড়ি ছোট্ট এক একটি দ্বীপ। আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে বিরাট আন্দি (দীঘি) যার চারিদিকে বসত বাড়ি, এক

বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যেতে হলে সাঁকু বা নৌকা ব্যবহার করা হতো।

এই গ্রামটি বৃহত্তর কুমিল্লা এবং বর্তমান চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলায় অবস্থিত। চাঁদপুর বাংলাদেশের নিচু এলাকার মধ্যে একটি; বৈশাখ- জৌষ্ঠ মাসে সর্বত্র পানি, বেঙের ডাক এবং মাঠ ভর্তি সবুজ আর সবুজের খেলা । আমরা ছোটরা সে যুগে এই পানিতে ঝাপাঝাপি করে আনন্দ করতাম, বাড়ির কয়েকজন সমবয়সী চাচাতো ভাই মিলে পুকুরের এ পার থেকে ওপার সাঁতার কেটে আনন্দ করে চোখ লাল করে ঘরে আসলে মা- চাচীরা বকুনি দিতো। সুদিনে পুকুর বা খালে মাছ ধরে নিয়ে আসলে মাচাচিরা খুশি হয়ে রান্না করতো।

গ ) বৃষ্টির রসিকতা:

ক্যানাডায় প্রতি বৎসর গ্রীষ্মের আবহাওয়ায় বাংলাদেশী,পাকিস্তানী বা অনেক দেশের লোকজন বিভিন্ন পার্কে বনভোজন করে থাকে। কিছুদিন হয় কানাডার স্কারবোরো( থমসন মেমোরিয়াল পার্ক ) এ বৃহত্তর ফরিদপুর এসোসিয়েশনের বাৎসরিক বনভোজন হয়ে গেলো। পুরা থমসন পার্কের পিকনিক স্পটগুলি বিভিণ্ণ দেশের লোকে লোকারণ্য ছিল। সকাল এগারটা থেকেই সুন্দর সুন্দর সাজে ফরিদপুর এসোসিয়েশনের ছেলেমেয়ে ও লোকজন আসা শুরু করে। পরিচিত মুখদের মধ্যে ছিল ইমাম হোসাইন ভাই,ভাবি, মোস্তফা এবং ওর ছেলেমেয়ে যাদের সঙ্গে ১৯৯০ থেকে পরিচিত। এ ছাড়া আমার ফেইসবুক বন্ধু রোকেয়া পারভীন ( আপা ) যিনি আমাকে ইনফরমেশন দিয়েছিলেন। আমার ভালো লেগেছে কিছু সমবয়সী বন্ধু পেয়ে যাদের সঙ্গে কর্ম জীবনের বিভিন্ন দেশের (নাইজেরিয়া,লিবিয়া,কেনিয়া,সোমালিয়া) অতীত অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রাণ খুলে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ ছেলে মেয়েরা ঝোপ ঝাড়ে বসে নিজেদের বন্ধুদের সঙ্গে গল্পচারিতা,দেখে বেশ ভালো লেগেছে। এ ছাড়া সারাদিন ব্যাপী নানাহ

আয়োজনের মধ্যে ছেলেমেয়েদের যার যেমন খুশি অঙ্কন, দৌড় ও বয়স্কদের খেলাধুলার প্রতিযোগিতা, গল্পের আড্ডা , গান ও প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশন বেশ ভালো ভাবে শেষ হয়েছে। সকাল থেকেই সূর্য ও মেঘলা আকাশের রসিকতা; বারটার পর থেকে আকাশ একটু একটু মেঘলা হতে থাকে, হঠাৎ করে দিনের দুইটার দিকে মুষলধারে বৃষ্টি,ছোট্ট ছাউনিতে লোকজনের ঠাসাঠাসি, তিল ধারণের জায়গা ও নেই। তবে ঘন্টা খানের মধ্যেই বৃষ্টির তীব্রতা কমে আসে;এই বৃষ্টির মধ্যে দিয়েই ভলান্টিয়ার গণ, ছাতা, প্লাস্টিকের আবরণ মাথায় দিয়ে কষ্ট করে দূরে পার্কিং স্পট থেকে খাওয়া নিয়ে এসে অতিথিদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছেন, ওদের আন্তরিকতার প্রশংসা না করে কি থাকা যায়?

যদি ও ছাউনিতে ঠাসাঠাসি বসা, তবে খাওয়াদাওয়া ছিল ভারী মজাদার এবং বেশ উপভোগ করেছি।

এ দেশে বৃষ্টি বেশি সময় থাকে না ; হঠাৎ করে শুরু হয়ে কিছুক্ষনের মধ্যে থেমে গিয়ে সূর্য দেখা দেয় এবং মনেই হয়ে না যে একটু পূর্বেই বৃষ্টি হয়েছিল।

ঘ) মেঘলা দিনের পরিবেশ আর পাঁচটা দিনের চেয়ে আলাদা । কারও কাছে মেঘলা দিন মন খারাপের একটি বিশেষ দিন, আবার কারও কাছে তা ভালবাসায় স্মৃতিবিজড়িত একটি বিশেষ দিন। সুন্দর সূর্যাস্তের অনুভবের জন্য মেঘলা আকাশের প্রয়োজন। বাংলাদেশে আষাঢ় -শ্রাবন একটানা বৃষ্টি শুরু হলে আর যেন শেষ হতো না। আকাশ ঘুমোট মেঘাচ্ছন্য,কখনও কখনও দিনে সূর্যের লুকোচুরি যেন এই এলো আর এই গেলো,একটানা বৃষ্টি শুরু হলে তো আর শেষ হবার নেই। পল্লী গ্রামে বৃষ্টির দিনে পাতলা বা ছাতা যা ব্যতীত ঘরের বের হওয়া যেত না। মনে পড়ে বৃষ্টির দিনে পুকুর থেকে কৈ,টাকি সোল্ মাছ স্রোতের সঙ্গে উঠানে ধাপাধাপি এবং পাতলা মাথায় দিয়ে গিয়ে ধরে নিয়ে আসার স্মৃতি। এই যে বৃষ্টি শুরু হলো তা আর শেষ হবার নয়;দেখতে দেখতে বন্যা নেমে আসতো। এরই মধ্যে চাষীরা মাঠের আধা- কাঁচা আধা- পাকা ধান কেটে এনে বাড়ির উঠোনের এক কোনে জমা করতেন । মাঠে পাট কাটা বাকি, চাষীরা পানিতে ডুব দিয়ে সে

পাট কেটে জাগ্ দিয়ে রেখে দিতো। বৃষ্টির দিনে অলস মন, কাচারী ঘরে ভাইবোনদের নিয়ে লুড্ডু খেলা,পুঁথি পড়া এবং মা-চাচিদের খেচুরি রান্না হলে হাফুস হুফস করে খাওয়া। সব চেয়ে বেশি মনে পড়ে তালের কোন্দা, বা ছোট নৌকা নিয়ে জমি থেকে শাপলা উঠানো। এ নিয়ে “আমার ছোট্টগ্রাম” বিভিন্ন সময় যা লিখেছি, তারই ছিটাফোটা তুলে ধরলাম।