News update
  • Seafood Without Transparency is a Recipe for Disaster     |     
  • Govt Moves to Drop Over 10,000 Political Cases     |     
  • Health Workers in Conflict Zones Experience an Epidemic of Violence     |     
  • ICC Deputies Take Over Amid Prosecutor Msconduct Probe     |     
  • National leaders demand raising Bangladesh's water problem at the UN     |     

অভিবাসী ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি কেমন হবে?

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস প্রবাস 2024-11-10, 9:24am

ryertert-5654e61cce72867325469f0622c422f41731209045.jpg




অভিবাসন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একটা বড় ইস্যু ছিল। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী কমালা হ্যারিস দু’জনেই মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলেছেন।

মি. ট্রাম্পকে বারবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে দেখা গেছে, নথিবিহীন অবৈধ অভিবাসীদেরকে ফেরত পাঠানো হবে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘উস্কানি’ দিচ্ছেন এমন কথা বললেও কমালা হ্যারিস অবশ্য একথাও জানিয়েছিলেন যে তিনি সীমান্ত নিরাপত্তা বিলের পক্ষে। এই বিলের আওতায় সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের জন্য শত শত কোটি ডলার বরাদ্দের বিষয়ে বলা হয়েছে।

প্রশ্ন হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের ভূমিকা কী? যদি অভিবাসী না থাকে তাহলে তার কী প্রভাব পড়তে পারে দেশটিতে?

যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা

অভিবাসী না থাকলে আমেরিকার জনসংখ্যা অনেক কম হবে। দেখা গেছে, ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিদেশি বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বেশি। সেই তথ্য বলছে, বিদেশে জন্মগ্রহণকারী চার কোটি ৭৮ লক্ষ মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেন যা মোট মার্কিন জনসংখ্যার ১৪.৩ শতাংশ।

এই তালিকায় সবার প্রথমে রয়েছে মেক্সিকো থেকে আসা মানুষ। সেখানকার এক কোটি ছয় লক্ষ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। অন্যদিকে, সেখানে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষের সংখ্যা ২৮ লক্ষ এবং চীন থেকে আসা মানুষের সংখ্যা ২৫ লক্ষ।

প্রসঙ্গত, অভিবাসী কর্মচারীর সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ হলেও যুক্তরাষ্ট্রে জন্মহার কমে যাওয়ার ফলে সে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি।

জন্মের হার ১৯৩০-এর দশকে ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’-এর ফলে হ্রাস পেয়েছিল।

এর অর্থ হলো অন্যান্য অনেক দেশের মতোই যুক্তরাষ্ট্রও প্রবীণদের সংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যার সঙ্গে লড়ছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত খরচ। অন্যদিকে, কাজকর্ম করতে সক্ষম অল্প বয়সী মানুষ কমে যাচ্ছে।

কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস বলছে, ২০৪০ সালে মৃত্যুর সংখ্যা জন্মকে ছাপিয়ে যাবে। তখন অভিবাসনের ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।

এই কারণে অনেক অর্থনীতিবিদ ও অভিবাসনপন্থী গোষ্ঠী দাবি জানিয়েছে, অর্থ ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে অভিবাসন দরকার, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে অভিবাসনের অনুমতি দেওয়া হোক।

অর্থ ব্যবস্থায় এর প্রভাব

বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারিক হাসান জানিয়েছেন অভিবাসীদের অনুপস্থিতির বড় প্রভাব পড়বে মার্কিন অর্থনীতিতে।

তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, “যদি অভিবাসীদের পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়, তাহলে ধরে নিন মাথাপিছু জিডিপি পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ কমে যাবে। অর্থাৎ কিছু মানুষ কমে যাওয়ার (অভিবাসীদের অনুপস্থিতি) যে প্রভাব, তার প্রতিফলন ঘটবে জিডিপিতে।”

তার গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে তারিক হাসান বলেছেন, “অভিবাসন উদ্ভাবনী শক্তিতে ইন্ধন যোগায়, উৎপাদনশীলতা বাড়ায় এবং এটা কিন্তু শুধুমাত্র কোনও একটা বিশেষ সেক্টরেই সীমাবদ্ধ নয়।”

প্রসঙ্গত, অভিবাসীরা তুলনামূলকভাবে কম বয়সী এবং তাদের কাজ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল সেক্টরে কর্মরত তিন কোটি ১০ লক্ষ মানুষের মধ্যে প্রায় ১৯ শতাংশই অভিবাসী।

সরকারি সংস্থা ‘ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিসটিক্স’- এর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমশক্তিতে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে অভিবাসীদের হার আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিদের চাইতে চেয়ে বেশি।

কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের অনুমান অনুযায়ী, ২০২২ থেকে ২০৩৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আসা ১৬ বছর বা তার বেশি বয়সী অভিবাসীদের প্রায় ৯১ শতাংশের বয়স ৫৫ বছরের কম হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রে বয়স্কদের মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ।

অর্থ ব্যবস্থা ভূমিকা পালন করে এমন সেক্টর যেমন কৃষি- সম্পূর্ণরূপে অভিবাসী শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীল।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের জাতীয় কৃষি শ্রমিক জরিপ অনুযায়ী, ৭০ শতাংশ শ্রমিক অভিবাসী। যদিও এদের মধ্যে অনেক শ্রমিকের কাছে এখনও পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নথিপত্র নেই।

আমেরিকান ইমিগ্র্যান্ট কাউন্সিলের (এআইসি) গবেষণা নির্দেশকের দায়িত্বে রয়েছেন নান ব্যু । তিনি অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটা সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন। তার মতে, “অভিবাসীদের সরিয়ে দেওয়ার অর্থ হলো কৃষিকাজ করা, ফল এবং শাক সবজি তোলা আর উৎসবের মৌসুমে ক্রমবর্ধমান বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক পাবেন না ক্ষেতের মালিকরা।”

অন্যদিকে, যারা অভিবাসনের সমালোচনা করেন, তাদের একটা যুক্তি হলো, বিদেশ থেকে আসা বিপুলসংখ্যক শ্রমিক কম মজুরিতে কাজ করতে প্রস্তুত এবং এর ফলে মার্কিন নাগরিকরাও কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন আর ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া ২০১৪ সালে অর্থনীতিতে অভিবাসনের প্রভাব নিয়ে ২৭টি গবেষণার পর্যালোচনা করেছে।

এই পর্যবেক্ষণ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী নাগরিকদের বেতনের উপর অভিবাসনের গড় প্রভাব প্রায় শূন্যের সমান।

সাম্প্রতিক সময়ে ইস্টার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে একটা গবেষণা করা হয়েছে। সেই গবেষণা বলছে, “অভিবাসীর সংখ্যা বাড়লে তা মজুরি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যদিও পরিসংখ্যানের দিক থেকে তা একেবারে ক্ষুদ্র।”

ট্যাক্সের উপর প্রভাব

প্রশ্ন হলো, ট্যাক্স রেভিনিউ বা কর রাজস্বের উপর এর কী প্রভাব পড়বে?

এআইসির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২২ সালে অভিবাসী পরিবারগুলো মোট করের এক-ষষ্ঠাংশ (৫৮হাজার কোটি ডলার) কর জমা দিয়েছে।

এআইসির তরফে নান ব্যু জানিয়েছেন, শুধুমাত্র বৈধ অভিবাসীরাই যে কর দিয়ে থাকেন, এমনটা নয়।

পিউ রিসার্চ সেন্টার থিংক ট্যাংকের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, নথিভুক্ত নন এমন অভিবাসীর সংখ্যা মোট অভিবাসী জনসংখ্যার প্রায় ২৩ শতাংশ। প্রায় এক কোটি ১০ লক্ষ অভিবাসীর মধ্যে ৪০ লক্ষই মেক্সিকো থেকে আসা।

ইনস্টিটিউট অন ট্যাক্সেশন অ্যান্ড ইকোনমিক পলিসির এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২০২২ সালে নথিভুক্ত নন এমন অভিবাসীরা ফেডারেল, রাজ্য ও স্থানীয় কর বাবদ প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার দিয়েছেন।

থিক ট্যাঙ্ক ‘ইকনমিক পলিসি ইন্সটিটিউট’-এর ‘ইমিগ্রেশন ল অ্যান্ড পলিসি রিসার্চ’ বিভাগের নির্দেশক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ড্যানিয়েল কোস্টা। তার মতে, অর্থনৈতিক দিক থেকে অভিবাসনের প্রভাব জাতীয়স্তরে ইতিবাচক হতে পারে। তবে কিছু রাজ্যে এটা নেতিবাচকও হতে পারে, বিশেষত স্বল্প সময়ের নিরিখে বিচার করলে।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় তিনি এবং তার টিমের সদস্যরা স্বল্প বেতন পান কিন্তু যোগ্য অভিবাসীদের ‘স্বল্প মেয়াদে আর্থিক ভারসাম্য নেতিবাচক প্রভাবের দিকে ঝুঁকে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে' বলে উল্লেখ করেছেন।

তাদের যুক্তি, আরও বেশি পরিমাণ অর্থ ফেডারেল থেকে রাজ্য পর্যায়ে পুনরায় বিতরণ করা হোক যাতে জনবহুল অভিবাসন অঞ্চলগুলোর চ্যালেঞ্জ দূর করা যায়।

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক জিওভান্নি পেরি বলছেন, “নির্মাণ কাজ সংগঠিত না হলে সেবা ও আবাসনের ওপরও চাপ বাড়বে। এটা ঠিক যে অভিবাসীদের বাদ দিয়ে দেওয়ার বিষয়টা বেশ সহজ।”

অভিবাসীদের ব্যবসায় সাফল্য

অভিবাসী বা তাদের সন্তানদের একটা বড় অংশ ব্যবসা ক্ষেত্রে সুনাম অর্জন করেছে।

রাজস্বের দিক থেকে ৫০০টি বৃহত্তম মার্কিন কোম্পানির বার্ষিক তালিকার প্রায় ৪৫ শতাংশ সংস্থাই অভিবাসী বা তাদের সন্তানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।

একই সময়ে, ১০০ কোটি ডলার বা তার বেশি মূল্যের মার্কিন স্টার্ট-আপগুলোর ৫৫ শতাংশই প্রতিষ্ঠা করেছে অভিবাসীরা।

বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে অভিবাসীরা, যাদের মধ্যে অনেকেই প্রাথমিকভাবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল।

অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল এডুকেটরসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ১০ লক্ষেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে চার হাজার কোটি ডলারের অবদান রেখেছে।

জনমত

সম্প্রতি গ্যালাপ জরিপে দেখা গিয়েছে, মার্কিন অর্থনীতিতে অভিবাসীদের ভূমিকা থাকলেও ৫৫ শতাংশ মার্কিন নাগরিক চাইছেন অভিবাসন হ্রাস পাক।

অভিবাসনকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে বিশেষত মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ প্রবেশ রুখতে রাজনৈতিক ঐকমত্যও রয়েছে।

অধ্যাপক পেরি বলেন, কিছু রাজনীতিবিদ ও সংবাদমাধ্যম অভিবাসনকে ‘সীমান্তে বিশৃঙ্খলার’ সঙ্গে তুলনা করে।

অভিবাসনের প্রভাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বদলে অবৈধ অনুপ্রবেশের বিভিন্ন ‘গল্পের’ দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

"ফলে অর্থনীতিতে অভিবাসীদের প্রভাব এবং জনসংখ্যার হ্রাসের ক্ষেত্রে তারা কী ভূমিকা পালন করে সে বিষয়ে আলোচনা করার পরিবর্তে, মানুষ প্রায়শই দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত থেকে অভিবাসনকে বন্যা হিসাবে দেখে। মানুষ মনে করে অভিবাসনের পরিমাণ অত্যধিক এবং এটা আদতে ক্ষতিকারক।”

বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের তারিক হাসান বলেন, “গত দুই দশকে অভিবাসন অনেক বেশি হয়েছে।”

“যদিও অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অভিবাসন ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, তবে এর এমন কিছু দিক থাকতে পারে যা অন্যদের স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে বাধা দেয়।”