দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম খারাপ অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট হার দিয়ে শুরু। এরপর আইসিসির সহযোগী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে সিরিজ হার। পাকিস্তানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে গিয়ে তো পাত্তাই পায়নি টাইগাররা। শ্রীলঙ্কা সফরে প্রথম ম্যাচটাই ভালো প্রতিরোধ দেখালেও পরের ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হার। সবমিলিয়ে, সময়টা খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকেই এগোচ্ছে।
কলম্বো টেস্টে চারদিনের মধ্যেই হেরে গেছে বাংলাদেশ। আজ (২৮ জুন) চতুর্থ দিন টাইগাররা অলআউট হয়েছে প্রথম সেশনের মাত্র ৬ ওভারের মধ্যেই। এমন হারের পর টাইগারদের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে অবনতির কারণ নিয়ে কথা বলেছেন বিসিবির অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
বিসিবিতে আসার আগে ক্রিকেট কোচিং করাতেন ফাহিম। সাকিব আল হাসানের মতো তারকা ক্রিকেটার তার নিজের হাতে গড়া। তাই মাঠের ক্রিকেট নিয়ে জ্ঞানটা বেশ ভালোই তার। কলম্বো টেস্টের পর সাবেক এই কোচ জানান, বাংলাদেশের আসল কমতিটা বোলিংয়ে।
কলম্বো টেস্টে দলের পারফরম্যান্স দেখে আক্ষেপ করে ফাহিম বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই অনেক অধারাবাহিক। সত্যি বলতে, মাঝেমধ্যে ভালো খেলি। বেশিরভাগ সময়েই খেলাটা মানসম্মত বা সন্তোষজনক হয় না। গলের ম্যাচটা একটু ভিন্ন ছিল। বেশকিছু দিন পরে খেললেও প্রথম ইনিংসে আমরা অনেক রান করেছিলাম। দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কা বড় একটা ইনিংস খেলার পরেও রান করা, লঙ্কানদের ওপর দাপট দেখানো এবং চাপে ফেলা... সেদিক থেকে মনে হয়েছিল খেলোয়াড়দের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন হয়তো এসেছে। তবে দুর্ভাগ্যবশত সেটা এখানে দেখতে পারলাম না।’
‘এখানে যে চারিত্রিক দৃঢ়তাটা দরকার ছিল... এখানে বেশি রানের উইকেট ছিল না, উইকেট কিছুটা কঠিন; কিন্তু যে শৃঙ্খলাটা আমাদের দেখানোর কথা ছিল, ব্যাটিংয়ে তো বটেই, বিশেষ করে বোলিংয়ে... বোলিং আরেকটু শৃঙ্খল হলে হয়তো ওরা এত বেশি রান করতে পারত না। সেটা আমাদের জন্য সহজ হতো ম্যাচে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে। যেভাবে ম্যাচটা এগিয়েছে, তাতে আমরা দ্রুতই বুঝতে পেরেছি যে শ্রীলঙ্কা এগিয়ে আছে এবং আমরা হারতে যাচ্ছি।’
সাবেক কোচ ফাহিম অবশ্য ঠিকই ধরেছেন বাংলাদেশের সমস্যাটা। আরব আমিরাত সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ২০৫ রান করেও সেটা ডিফেন্ড করতে পারেনি বাংলাদেশ। একই চিত্র দেখা গেছে পরের ম্যাচেও। অপেক্ষাকৃত বোলিং সহায়ক পিচে ওই দিন ১৬২ রান ডিফেন্ড করতে গিয়ে ৫ বল বাকি থাকতেই হেরেছে টাইগাররা।
পাকিস্তান সফরেও বাংলাদেশের বোলিং ছিল বেশ গড়পড়তা। এই সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে আগে বোলিং করে দুইশোর্ধ্ব রান হজম করেন বাংলাদেশের বোলাররা। তৃতীয় ম্যাচে পাকিস্তান ১৯৭ রান করে পরে ব্যাটিং করে। গল এবং কলম্বো টেস্টেও বোলাররা যথেষ্ট সহযোগিতা করতে পারেননি। অথচ এক সময় বাংলাদেশের শক্তির জায়গা ছিল এই বোলিং-ই।
বোলাররা ঘুরে দাঁড়াতে পারলেই সাদা বলের সিরিজে বাংলাদেশ ভালো করবে বলে বিশ্বাস ফাহিমের। তিনি বলেন, ‘আমাদের বোলিংটা নিয়ে এতদিন স্বস্তি ছিল, সন্তুষ্টি ছিল, সেখানে কিছু ঘাটতি দেখতে পাচ্ছি। বোলারদের সেই পারফরম্যান্সটা (ভালো পারফরম্যান্স) দেখিনি। সামনে যে কয়েকটা দিন সময় আছে, সেটা নিয়ে কাজ হবে। বোলাররা যদি নিজেদেরকে আবার জাগিয়ে তুলতে পারে... সম্প্রতি তাদের যে পারফরম্যান্স ছিল, যেটা নিয়ে আমরা স্বস্তিতে ছিলাম সেটা ফিরে পেলে দল ভালো করবে। শুধু ব্যাটারদের পক্ষে তো সবকিছু করা সম্ভব না। বোলিংয়ে মেকআপ করতে পারলে ভালো করা সম্ভব।’
কলম্বো টেস্টে হার নিয়ে ওয়ানডে সিরিজে পা রাখতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এটা মানসিকভাবে কতটা পিছিয়ে রাখবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে ফাহিম বলেন, ‘মানসিকভাবে বাংলাদেশ খুব একটা পিছিয়ে থাকবে না। নতুন খেলোয়াড় যুক্ত হবে৷ তারা হয়তো আরেকটু মনোবল বাড়াবে। তবে এটা ঠিক যে প্রতিপক্ষ অনেক আত্মবিশ্বাসী থাকবে। আমরা মানসিকভাবে ব্যাকফুটে না থাকলেও ওরা ভালো অবস্থানে থাকবে। ওদের জন্য ইতিবাচক। আমার মনে হয় ওরা আগেও এরকম পরিস্থিতিতে পড়েছে৷ ওরা ফিরে আসবে, আমি বিশ্বাস করি। এই ফরম্যাটে কিছু কিছু খেলোয়াড় আছে যারা এখানে উপযোগী। আশা করছি এই ফরম্যাটে আমরা আরও প্রতিযোগিতা দেখাতে পারব।’