রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, পশ্চিমা শক্তির চাপে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং ‘আতঙ্কজনক’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যা ইরানের উপর ইসরাইল ও মার্কিন আগ্রাসনকে প্ররোচিত করেছে। তারা ওই প্রতিবেদন আক্রমণের জন্য একটি অজুহাত হিসেবে ব্যবকার করেছে।
আইএইএ পরিচালনা পর্ষদ গত ১২ জুন ইরানবিরোধী একটি প্রস্তাব পাস করে। তাতে দাবি করা হয়, ইরান তার পারমাণবিক বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করছে। এর পরদিনই বিনা উসকানিতে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করে ইসরাইল।
সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনার পাশাপাশি একাধিক পারমাণবিক কেন্দ্রে দফায় দফায় বিমান হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এর কয়েকদিন পর একই পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রও।
পরমাণু ইস্যুতে আইএইএর বিতর্কিত ভূমিকার সমালোচনা করেছে ইরান। শুধু তাই নয়, আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক ছিন্ন করেছে দেশটি। যুদ্ধবিরতির পরদিন গত বুধবার (২৫ জুন) ইরানের পার্লামেন্টে এ সংক্রান্ত একটি বিল পাস হয়। পরদিন বৃহস্পতিবারই (২৬ জুন) সেটি অনুমোদন করে দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার আওতাধীন সংস্থা গার্ডিয়ান কাউন্সিল ইরান।
গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে আইএইএর প্রতিবেদন নিয়ে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ বলেন, এই প্রতিবেদনটি ‘ইচ্ছাকৃতভাবে উদ্বেগজনক সুরের’ করা হয়েছিল। যা ইসরাইলকে ইরানে আগ্রাসন শুরু করার কারণ তৈরি করে দিয়েছে।’
ল্যাভরভ আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র চাপের মুখে আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসির ব্যাপক দিকনির্দেশনায় উপর ভিত্তি করে প্রস্তাবটি তৈরি করা হয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রতিবেদনের বেশিরভাগ ভাষাই ছিল অস্পষ্ট।’
আগের আরেকটি বক্তব্যে ল্যাভরভ বলেছিলেন, ইউরোপীয় নেতারা ইরানের কর্মসূচি নিয়ে নেতিবাচক মূল্যায়ন জারি করার জন্য আইএইএর ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। তাই ইরানে ইসরাইলের আগ্রাসনের দায় তাদের উপরও বর্তায়।
রাশিয়ার শীর্ষ কূটনীতিক এই পদক্ষেপকে ‘সম্পূর্ণরূপে নব্য উপনিবেশবাদী’ বলে বর্ণনা করেন এবং বলেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও পরে যুক্তরাষ্ট্র ইরানবিরোধী প্রস্তাব পাসের লক্ষ্যে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য সংস্থাটিকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছে।
ল্যাভরভ সতর্ক করে বলেন, যদি আইএইএকে ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা পরিদর্শনের অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে উদ্বেগের বিষয় হলো এই তথ্য ফাঁস হতে পারে। কারণ বর্তমানে গোপনীয়তার কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই।
গ্রোসি ইরানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলি আগ্রাসনের নিন্দা জানাননি। তার বিরুদ্ধে ইসরাইলের পক্ষ নেয়া এবং চোখ বন্ধ রাখার অভিযোগ করেছে তেহরান। এরপরও ফের ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পরিদর্শনের সুযোগ চাইছেন তিনি।
ৎইরানের পক্ষ নিয়ে আইএইএর সমালোচনা করলেও জাতিসংঘের এই পারমাণবিক সংস্থার সাথে সহযোগিতা বন্ধ করার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, রাশিয়া চায়, ইরান আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সাথে সহযোগিতা অব্যাহত রাখুক।
তার কথায়, ‘আমরা ইরান ও আইএইএর মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে আগ্রহী, যাতে সবাই ইরানের বারবার বলা এই বিবৃতিকে সম্মান করে যে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা নেই এবং থাকবেও না।’ তথ্যসূত্র: মেহের নিউজ ও এএফপি