পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানে ভারতের সামরিক হামলার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, "প্রতিশোধ নেওয়ার সমস্ত অধিকার পাকিস্তানের রয়েছে।"
এর আগে ভারত সরকারের তরফে একটি বিবৃতি জারি করে জানানো হয়েছে, ভারতীয় সেনা ইতোমধ্যে 'অপারেশন সিঁন্দুর' শুরু করেছে।
ভারত সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, "পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে এই অভিযান চালানো হয়েছে, যেখান থেকে ভারতে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল।"
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে "মোট নয়টি জায়গায় নিশানা করা হয়েছে। আমাদের পদক্ষেপ কেন্দ্রীভূত ও পরিমাপ করে বাস্তবায়িত করা হয়েছে এবং এটি উস্কানিমূলক নয়। পাকিস্তানের কোনও সামরিক স্থাপনাকে টার্গেট করা হয়নি।"
পাকিস্তান দাবি করছে, দেশটির বেসামরিক নাগরিকদে ওপর হামলা চালিয়েছে ভারত।
সামরিক হামলার পর প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ছাড়াও অন্যান্য মন্ত্রী এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা বিলওয়াল ভুট্টো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
ভারত শাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে গত ২২শে এপ্রিল পর্যটকদের উপর হামলা করা হয়েছিল, যে ঘটনায় কমপক্ষে ২৬ জনের মৃত্যু হয়। এই হামলায় পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে ভারত, যদিও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া হয়।
এই হামলাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।এরমধ্যেই গভীর রাতে ভারতের পক্ষ থেকে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা শুরু করা হয়।
শাহবাজ শরিফ কী বলেছেন?
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ ভারতের তরফে এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, "প্রতিশোধ নেওয়ার সমস্ত অধিকার পাকিস্তানের রয়েছে।"
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ শাহবাজ শরিফ লিখেছেন, "পাকিস্তানের পাঁচটি জায়গায় কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছে শত্রুরা।"
তিনি ভারতের এই হামলাকে 'অ্যাক্ট অফ ওয়ার' বলে আখ্যা দিয়েছেন।
শাহবাজ শরিফ তার পোস্টে লিখেছেন, "ভারতের এই যুদ্ধের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার পূর্ণ অধিকার পাকিস্তানের রয়েছে এবং তাদের যোগ্য জবাবও দেওয়া হচ্ছে।"
তিনি বলেন, "পাকিস্তানের পুরো জনগণ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়িয়েছে এবং দেশের মনোবল একেবারে মজবুত রয়েছে।"
মি. শরিফ জানিয়েছেন, পাকিস্তান কখনওই ভারতকে নিজেদের 'উদ্দেশ্যে সফল' হতে দেবে না।
তিনি বলেছেন, "পাকিস্তান ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী খুব ভাল করেই জানে কীভাবে শত্রুদের মোকাবিলা করতে হয়। আমরা কখনওই শত্রুকে তার অসৎ পরিকল্পনায় সফল হতে দেব না।"
'সাতটি টার্গেট নিশ্চিত হয়েছে'
বিবিসি উর্দু পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের সঙ্গে কথা বলেছিল। তিনি বলেছেন, "দেখুন, ওরা (ভারত) দাবি করছে যে ওরা সন্ত্রাসী ঘাঁটিকে নিশানা করেছে।"
"কিন্তু আমি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলব, তারা নিজেরাই সমস্ত জায়গা ঘুরে দেখে যাক যে স্থানগুলি সন্ত্রাসী ঘাঁটি নাকি বেসামরিক জনগোষ্ঠী ছিল।"
"এর মধ্যে আমাদের দু'টি মসজিদও ছিল। এক শিশু শহীদ হয়েছে এবং এক নারী শহীদ হয়েছেন।"
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মতে সাতটি লক্ষ্যবস্তুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। তার কথায়,
"হতাহতের সর্বশেষ সংখ্যা আমার কাছে নেই, তবে নিশ্চিত হওয়া সাতটি লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে দু'টি কাশ্মীরে এবং পাঁচটি পাকিস্তানে। সবক'টি ক্ষেত্রে নিশানা ছিল বেসামরিক নাগরিকেরা।"
এই হামলার পর পাকিস্তানের পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ শরিফ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন, সব কর্মচারীকে অবিলম্বে দায়িত্ব নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মরিয়ম নওয়াজ এক্স হ্যান্ডেলে বিজ্ঞপ্তির অনুলিপি পোস্ট করেছেন। সেখানে সিভিল ডিফেন্সসহ অন্যান্য সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও তলব করা হয়েছে। বুধবার পাকিস্তানের পাঞ্জাব জুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
'আগ্রাসনের জবাব দেওয়া হবে'
পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ একটি বিবৃতি জারি করে বলেছেন, "আমি পাকিস্তানের ভূখণ্ড এবং বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ভারতের কাপুরুষোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।"
"এ ধরনের আগ্রাসনের জবাব দেওয়া হবে।"
তিনি জানিয়েছেন, ভারতকে দৃঢ়তার সঙ্গে জবাব দিচ্ছে পাকিস্তান।
তিনি লিখেছেন, "আমাদের সাহসী বিমান বাহিনীসহ পাকিস্তানের সাহসী সশস্ত্র সেনাবাহিনী দৃঢ়তার সঙ্গে জবাব দিচ্ছে। যে কোনও দুঃসাহসিক কাজের সর্বশক্তি দিয়ে মোকাবিলা করা হবে। পাকিস্তান ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।"
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার অভিযোগ তুলেছেন, ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে "সন্ত্রাসী শিবির নয়, বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করেছে।"
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার প্রসঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন তিনি।
আতাউল্লাহ তারার বলেন, "এই হামলা অনাকাঙ্ক্ষিত। এটি সম্পূর্ণ বেপরোয়া হামলা। আমরা অবশ্যই এর জবাব দেব। আমাদের প্রতিক্রিয়া স্থলে এবং আকাশপথে অব্যাহত রয়েছে।"
সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, "ভারতীয় সেনাবাহিনী তিন জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।"
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ ও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গিয়েছে।"