হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ সুজাত মিয়ার ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। দুপুরে হামলার ঘটনার পর রাতে তার বাসায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। বিএনপি নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে পরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। এদিকে হামলার ঘটনা নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১ মে) আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে নবীগঞ্জ-হবিগঞ্জ সড়কের তিমিরপুর এলাকায় নবীগঞ্জ উপজেলা শ্রমিকদলের উদ্যোগে আয়োজিত র্যালি ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন শেখ সুজাত মিয়া। অনুষ্ঠান শেষে দুপুরের দিকে গাড়িতে ওঠার সময় হঠাৎ করে মৃত আহমদ মিয়ার ছেলে ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা জামির হোসেন রানা এবং তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন যুবক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। শেখ সুজাত মিয়ার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তুললে হামলাকারীরা পালানোর চেষ্টা করে।
খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি মো. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জামির হোসেন রানাকে অস্ত্রসহ আটক করে। এ ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা দেখা দেয়। শেখ সুজাত মিয়া দাবি করেন, 'এই হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। আমাকে টার্গেট করেই অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়েছে।'
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলা যুবদল নেতা শেখ মো. শিপন মিয়া বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্ত হামলাকারী পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের জামির হোসেন রানা (৪২) কে প্রধান আসামি করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিরা হলেন—মৃত আহমদ মিয়ার ছেলে ইউসুফ মিয়া (৩৬), ছাদির মিয়া (২৮), আলতাব আলীর ছেলে আব্দুর রশীদ (৫০), আব্দুর রশীদের ছেলে মামুন মিয়া (৩০), ফিরোজ মিয়ার ছেলে ছালেক মিয়া (৩০), পশ্চিম তিমিরপুর গ্রামের নূর উদ্দিনের ছেলে শরিফ মিয়া (২৭) এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫/৬ জন।
হামলার প্রতিবাদে বিকেলেই নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহরের প্রধান প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি নতুন বাজার মোড়ে গিয়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। বক্তারা হামলার নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এছাড়া হামলার প্রতিবাদে বাহুবল উপজেলার বিভিন্নস্থানে পৃথক পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর, রাত আনুমানিক ১১টার দিকে শেখ সুজাত মিয়ার নবীগঞ্জ শহরের হাসপাতাল সড়কের আক্রমপুর এলাকার নিজ বাসায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুন লাগে বাড়ির পেছনের একটি পরিত্যক্ত কক্ষে, যেখানে কেউ বসবাস করতেন না। আগুনে কিছু আসবাবপত্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়। স্থানীয়দের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি মো. কামাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন জানান- বৃহস্পতিবার দুপুরে হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি রামদা ও ছুরিসহ জামির নামে একজনকে আটক করে, এ ঘটনায় ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। এছাড়া তিনি বলেন, রাতে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছি। আগুন কীভাবে লেগেছে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত চলছে।
সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া বলেন, গতকালই আমার ওপর হামলা হয়েছে, আর রাতে বাসায় আগুন লাগানো হলো। এটি নিঃসন্দেহে একটি ধারাবাহিক ও পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। আমার পরিবার আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। সময়।