দেশের রিজার্ভ শক্তিশালী করতে যখন নানা উদ্যোগ নিতে মরিয়া বাংলাদেশ ব্যাংক তখন সেই পদক্ষেপকে আরও সহজ করতে চায় রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডা। তাদের দাবি, ফিটনেস মানদণ্ডে জোর দিয়ে বয়সসীমার শর্ত শিথিল করলে যেমন কমবে গাড়ির দাম; তেমনি বেচাকেনা বেড়ে, রাজস্ব আদায়ও বাড়বে। পলিসি এক্সচেঞ্জের গবেষণাও বলছে, সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করা হলে গাড়ি আমদানিতে ডলার সাশ্রয় হবে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।
বারভিডার সাবেক সভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, ‘জাপানি রিকন্ডিশন গাড়ি ৫ বছর পুরাতন হলেও অনায়াসে ২৫-৩০ বছর চলে। জাপানিজ গাড়ির প্রতি মানুষের আস্থা, কারণ এটা মোবাইল চেকের মতো। এবং বিক্রি করতে গেলে কিন্তু অনেক বেশি পার্থক্য তৈরি হয় না।’
এমন বাস্তবতাতেই এক সময়ের এক গাড়ি ব্যবসায়ী, রাজধানীর শো-রুমে শো-রুমে ঘুরছেন পরিবারের জন্য একটি জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি কিনতে। কিন্তু গেল ৩ বছরে ডলারের দাম বৃদ্ধিতে গাড়ির দাম বেড়ে গেছে ৩০-৩৫ শতাংশ। যা ভাবাচ্ছে তাকে। নিরুপায় হয়ে বাড়তি চাপ সামলানোর উপায়ও জানালেন তিনি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৫ বছরের বেশি পুরনো গাড়ি আনা যায় না। এটা যদি ৭ বছর করা হয়, তাহলে আমাদানিকারকও কম টাকায় আনতে পারবে। এবং ক্রেতাদের নাগালের ভেতর থাকবে।
২০২৪ সালে দেশে রিকন্ডিশন্ড হ্যাচব্যাক ও সেডান কারের নিবন্ধন হয়েছে ১০ হাজার ৪৯৯টি। যা গেল ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। মানসম্পন্ন গাড়ির বাজারের মন্দাভাব কাটাতে ক্রেতার সামনে বিকল্প বাড়ানোর দাবি ব্যবসায়ীদের।
বারভিডার পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক এস এম মনসুরুল কবির লিংকন বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সার্ভাইব করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে উত্তরণের একমাত্র উপায় ক্রেতাদের কাছে বেশি পরিমাণে অপশন হাজির করা।’
কিন্তু বিকল্প বাড়ানোর উপায় কী? বারভিডার দাবি, বাড়াতে হবে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির বয়সসীমা। তবে, জোর দিতে হবে পরিবেশ ও ফিটনেস মানদণ্ডে।
বারভিডার যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ জগলুল হোসেন বলেন, ‘৫ বছর পুরনো একটা গাড়ি যদি এখন হয় ৪০ লাখ টাকা। সেই একই মডেল ৭ বছরের পুরনো হলে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা কম হবে। ফলে সাশ্রয়ীমূল্যে গাড়ি আনতে পারলে ডলার কম যাবে, বিপরীতে রাজস্ব বেশি আসবে।’
বারভিডার মহাসচিব রিয়াজ রহমান বলেন, ‘অ্যাসেম্বলি বা সিকেডি যেসব গাড়ি আছে, সেগুলোর বাজার আলাদা। জাপানিজ ডোমেস্টিক গাড়ির বাজার আলাদা আছে। এখন ওপেন মার্কেট, কাস্টমার যে যেটা পছন্দ করে, তারা সেটা নিবে। তাই বয়স বিষয় না, বয়সসীমা তুলে দিয়ে ফিটনেস ও পরিবেশ বান্ধব কিনা সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে।’
বয়সসীমা বাড়ালে শুধু কি কম দামে গাড়ি কেনার সুযোগ পাবেন ক্রেতারা? গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বলছে, জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করা হলে আমদানি ব্যয়ও কমবে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, খুব দ্রুতই আমরা ব্যান্ড নিউ গাড়িতে শিফট করতে পারব; এটা বাস্তব সম্মত না। সুতরাং রিকন্ডিশন গাড়ির ওপর আমার নির্ভরতা থেকে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘পৃথিবীজুড়ে যে ট্রেন্ডটা এখন চলছে, সেটা হলো একটা মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করে দেয়া আছে, গাড়ির সার্টিফাইড কোয়ালিটি ঠিক করা আছে; সেটা পূরণ করলে গাড়ি আনা যাবে। তাতে বয়স ৫ হোক আর ১০ হোক। আমার মনেহয় বাংলাদেশকেও সেটা ভেবে দেখা উচিত।’
বারভিডা বলছে, পরিবেশ দূষণ আর গাড়ির ফিটনেসকে অগ্রাধিকার দিয়ে বয়সসীমার কোন শর্তই রাখেনি থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশ। কানাডায় আমদানি করা যায় ১৫ বছরের পুরনো গাড়ি।
উন্নত বিশ্বে কি গাড়ির আমদানির সময়সীমা নেই? তথ্য বলছে, পুরাতন গাড়ির আমদানিতে বয়সসীমার শর্তে আটকে নেই যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড হংকং ৭, নিউজিল্যান্ড ৮ ও কানাডায় আমদানি করা যায় ১৫ বছরের পুরনো জাপানি গাড়ি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চের এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ গাড়ির আমদানির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করা হলে আমদানি ব্যয় কমবে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।