Former Water Resources Minister addressing a roundtable against water aggression on Tuesday.
ঢাকা, ১৩ মে ২০২৫ঃ আজ মংগলবার ভারতীয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বত্র তুমুল প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়।
১৯৭৬ সালের ১৬ মে মওলানা ভাসানী আয়োজিত ফারাক্কা লংমার্চ স্মরণে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এই আহবান জানান। লক্ষ জনতার ঐ সফল লংমার্চ পরের বছর ১৯৭৭ সালের গংগা পানি বন্টন চুক্তি গ্যারান্টি ক্লজসহ সম্পাদনে সহায়ক হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি (আইএফসি), নিউইয়র্কের সহায়তায় বাংলাদেশ ফারাক্কা কমিটি এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
বক্তাগন পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন বেগবান করার লক্ষ্যে ১৬মে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত জাতীয় গণ সমাবেশ সফল করার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহবান জানান।
উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তারা গংগার পানি চুক্তি গ্যারান্টিসহ নবায়ন, তিস্তা চুক্তি সম্পাদন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও বাদবাকি ৫২ যৌথ নদীর সার্বিক ব্যবস্থাপনা চুক্তির জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহনের জন্য অন্তর্বর্তি সরকারকে আহবান জানান।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী, মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমাদ, সাবেক ভিসি, জাহাংগীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রধান উপদেষ্টা, আইএফসি, রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বিএনপি, সৈয়দ টিপু সুলতান, চেয়ারম্যান, আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি (আইএফসি), নিউইয়র্ক, ব্রিঃ জেঃ মোঃ হাসান নাসির (অব), ভূ-রাজনীতি বিশ্লেষক, প্রকৌশলী আ ন হ আকতার, পানি বিশেষজ্ঞসহ আরো অনেকে। সভাপতিত্ব করেন আইএফসি বাংলাদেশ সভাপতি, মোস্তফা কামাল মজুমদা।
মেজর হাফিজ উদ্দিন বীর বিক্রম বলেন ৫৪ যৌথ নদীর প্রত্যেকটিতে অসংখ্য বাধ দেয়াতে বাংলাদেশে পানির প্রবাহ কমে গেছে। তিনি বলেন ব্রহ্মপূত্র নদীর পানিও তারা উপরে পর্বত দিয়ে গংগায় নিয়ে ফেলতে চায়। অথচ এ নদী থেকে আমরা ৬৫ ভাগ পানি পেয়ে থাকি।
তিনি পানি বন্টন নিয়ে বিভিন্ন বৈঠকের তিক্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন ভাটির দেশে আমাদের পানির চাহিদাকে তারা পাত্তাই দিতে চায়না। ভারত মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বন্ধু ছিল কিন্তু তার পরবর্তী বছরগুলোতে বন্ধুত্বের চেয়ে কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা বেশি করেছে।
বিগত ১৫ বছরে তারা অনুগত সরকার কায়েম রেখে বাংলাদেশকে একটা উপনিবেশে পরিনত করেছিল। ঐ সরকার এদেশে বসে অন্যদেশের স্বার্থ রক্ষা করে যাচ্ছিল। বাংলাদেশের ছাত্র জনতা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের বিতাড়িত করে।
মজার ব্যাপার এখন যখন চীন ব্রহ্মপূত্রের উজানে বাধ নির্মান করছে তখন ভাটির দেশের অধিকার রক্ষার জন্য ভারত বাংলাদেশের সহায়তা কামনা করছে। তিনি বলেন বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনগন ঐক্যবদ্ধ থাকলে অবশ্যই পানির ন্যায্য অধিকার কায়েম করতে পারবে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন ভারত সরকার তাদের আধিপত্য কায়েমের পুরোনো খায়েস পোষনের মানসিকতা থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পানি আগ্রাসন চালাচ্ছে। এদেশে ১৮ কোটি মানুষ বসবাস করে। তাদের পরিবেশ প্রতিবেশের বিরুদ্ধে যথেচ্ছ আচরণ করে যাচ্ছে।
তিনি দুঃখ করে বলেন ভারতের আধিপত্যবাদি মানসিকতার বিরুদ্ধে যত কঠিন ভাষা ব্যবহার করা হয় তার সবগুলোই তৈরি করেছেন বামপন্থিরা। কিন্তু এখন ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তারা কথা বলছেননা। এ মানসিকতা পরিবার করে দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।
তিনি পানির অধিকার কায়েমে সংগ্রামরত কর্মিদের সাধুবাদ জানিয়ে সবাইকে পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার আহবান জানান।
ব্রি জে মো হাসান নাসির বলেন বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলোর প্রবাহ অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে এদেশের ভৌগোলিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। একমাত্র ১৯৭৭ সালের গংগা চুক্তি ব্যতীত আর অন্য কোন চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা হয়নি।
সৈয়দ টিপু সুলতান আইএফসি'র পানি আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, মানুষ আন্দোলন করলে তা ভারতের সরকারের পানি নীতিকেও প্রভাবিত করে। তিনি বলেন পানির অধিকার কায়েমের জন্য প্রয়োজনে আবারো লক্ষ মানুষের জমায়েত ডাকা হবে।
অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমাদ বলেন শুধুমাত্র ১৯৭৭ সালের গংগা চুক্তিতেই গ্যারান্টি ক্লজ ছিল। পরবর্তী অন্যকোন চুক্তিতে পানিচুক্তির এই অপহার্য ধারা অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি।