
সেন্টমার্টিন দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যা কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। মনোমুগ্ধকর দ্বীপটির স্ফটিক-স্বচ্ছ নীল জলরাশি, জীবন্ত প্রবাল প্রাচীর, নারকেল গাছের সারি আর সামুদ্রিক জীবনের প্রাচুর্য পর্যটকদের সব সময় কাছে টানলেও, সেখানে ভ্রমণে বিধি-নিষেধ আরোপ করে অন্তর্বর্তী সরকার। বন্ধ করা হয় দ্বীপটিকে রাত্রিযাপন। অবশেষে সেখানে রাত্রিযাপনের সুযোগ মিলছে।
দীর্ঘ ১০ মাস পর ১ ডিসেম্বর সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে। থাকছে রাতযাপনের সুযোগও। তবে দৈনিক দুই হাজারের বেশি পর্যটক এই প্রবাল দ্বীপটিতে যেতে পারবেন না। কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া জেটিঘাট থেকে সকাল ৭টায় জাহাজ ছেড়ে যাবে। পরদিন বেলা ৩টায় সেন্টমার্টিন থেকে সেই জাহাজ কক্সবাজারে ফিরে আসবে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা দুই মাস পর্যটকরা এই ভ্রমণ করতে পারবেন।
সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াতের বিষয়ে রোববার (৩০ নভেম্বর) বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বিশেষ প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মান্নান। সভায়, পরিবেশ অধিদপ্তর, ট্যুরিজম বোর্ড, পুলিশ ছাড়াও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) শাহিদুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, চারটি জাহাজ কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়েছে। এর মধ্যে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বার আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ নামে তিনটি জাহাজ ১ ডিসেম্বর থেকে যাতায়াত শুরু করবে। সেন্টমার্টিন যাতায়াতে যাতে পর্যটকদের কোনো সমস্যা না হয়, তার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা বলেন, একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিককে নিরুৎসাহিত করতে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে জাহাজে ওঠার সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পর্যটকদের অ্যালুমিনিয়ামের পানির বোতল ফ্রি (বিনামূল্যে) দেওয়া হবে।
সেন্টমার্টিন রুটের পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে’র সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, তিনটি জাহাজ সকাল পর্যন্ত টিকিট বেচবে। ফলে মোট যাত্রীর সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারছি না।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উপপরিচালক মহিবুল ইসলাম বলেন, সেন্টমার্টিনে যাতায়াতের জন্য পর্যটকদের ১২টি নির্দেশনা মানতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করা। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে। এসব নিশ্চিত করার জন্য ট্যুরিজম বোর্ডের পক্ষ থেকে ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক (ভলান্টিয়ার) জেটি ঘাটে অবস্থান করবেন।
তথ্য অনুযায়ী, আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও ৯ মাসের জন্য দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এবারের মৌসুমে দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১২টি নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম হলো- বিআইডব্লিউটিএ এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি পাবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, পর্যটকদের ভ্রমণকালে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষেধ। এ ছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
ভ্রমণকালে নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না। একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক- যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।