কারবালার প্রান্তরে ন্যায়বোধ আর আত্মত্যাগের যে অগ্নিপর্ব রচিত হয়েছিল, বিশ্বজুড়ে সেই আশুরা এবার পালিত হচ্ছে যুদ্ধ, শোক ও প্রতিরোধের আবহে। ইরাকের কারবালা থেকে লেবাননের দাহিয়াহ পর্যন্ত প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ইমাম হোসাইনের আত্মত্যাগের মহিমা। দেশে দেশে নিজস্ব ঐতিহ্য ও রীতিতে দিনটি স্মরণ করছেন লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমান।
হিজরি ৬১ সালের ১০ মহররম। ফোরাৎ তীরবর্তী কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদি সেনাদের হাতে শহীদ হন মহানবী (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইন। শাহাদাৎ বরণ করেন তার ৭২ জন সফরসঙ্গীও। তাদের এই আত্মত্যাগ স্মরণে প্রতিবছর এই দিনটিতে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন বিশ্বের নানা প্রান্তের মুসলমানরা।
তারই ধারাবাহিকতায় এবার কারবালার চত্বরে নেমেছে লাখো মানুষের ঢল। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে তারা পালন করেন শোক। অংশ নেন তাজিয়া, মাতম আর মাহফিলে। দর্শনার্থীদের স্বস্তিতে রাখতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে মিস্টিং ফ্যান, বিতরণ করা হচ্ছে ঠাণ্ডা পানি ও শরবত। কারবালার অলিগলিজুড়ে শোকের আবহে চলছে নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া পাহারা, আছে চিকিৎসাকেন্দ্র ও ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল।
লেবাননের দাহিয়াহ, দক্ষিণ বেইরুতসহ বিভিন্ন শহরে আশুরার আয়োজনে এবার বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ। তার মৃত্যুর পর এবারই প্রথম আশুরায় যোগ দিয়েছেন হাজারো আহত যোদ্ধা। যাদের কেউ হারিয়েছেন চোখ, কেউ হাত, কেউ বা হারিয়েছেন পা। তাদের এই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যেন ফিরে এসেছে কারবালার স্মৃতি। সংগঠকরা বলছেন, কারবালা এখন আর শুধু ইতিহাস নয়, কারবালা তাদের অনুপ্রেরণা।
নানা অস্থিরতার মধ্যেই আশুরা উদযাপন করেছে ইরান। সম্প্রতি ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাতে নিহত হয়েছেন দেশটির একাধিক জেনারেল ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী। এমন প্রেক্ষাপটে বহুদিন পর প্রকাশ্যে এসেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। সরকারি এক ভবনে আয়োজিত আশুরা মাহফিলে হাজারো অনুসারীর উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন তিনি।
পাকিস্তানে করাচির নিশতার পার্ক থেকে শুরু হওয়া প্রধান তাজিয়া মিছিলে অংশ নেন চার হাজারের বেশি মানুষ। মোতায়েন করা হয়েছে সাত হাজার পুলিশ সদস্য, স্নাইপার আর ড্রোন টিম। সারা দেশের শিয়া অধ্যুষিত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার, সেনা টহল ও ইন্টারনেট সীমিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘কারবালার বার্তা হলো, সত্যের পক্ষে অটল থাকা’।