News update
  • Can Dhaka’s arms recovery drive ensure peaceful polls?     |     
  • ‘Unhealthy’ air quality recorded in Dhaka Monday morning     |     
  • BD peacekeepers' deaths: UN chief calls Dr. Yunus, offers condolence     |     
  • Bangladesh Plans Rockets, Satellites, and Space Industrial Park     |     
  • India willing to work together inspired by shared sacrifices of past     |     

পারভেজ হত্যাকাণ্ডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা গ্রেপ্তার

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক ক্যাম্পাস 2025-04-22, 10:42pm

rtreterter-fb70f3bfb0ffdac0784f51e50e0276d81745340178.jpg




প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে হত্যার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম সদস্য সচিব হৃদয় মিয়াজিকে (২৩) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি এজাহারভুক্ত আসামি বলে পুলিশ দাবি করেছে।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহিদ গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, হৃদয় মিয়াজি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি। তাকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইননানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এর আগে পারভেজ হত্যায় ১১ জনকে শনাক্ত করেছেন পুলিশ। এর মধ্যে রয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, অছাত্র, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তাদের মধ্যে তিনজনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

নিহত পারভেজ ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কাইচান গ্রামের কুয়েতপ্রবাসী মো. জসীম উদ্দিন ও পারভীন ইয়াসমিন দম্পতির একমাত্র ছেলে। 

গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে খুন হন পারভেজ। ছাত্র হত্যার ঘটনার পর থেকেই প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। 

ঘটনাস্থলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়টির চার নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজন হলেন- মাহামুদুল, সোয়েব ও মনির। অপরজনের নাম জানা যায়নি। তিনজনই ফটকের ভেতরের দিকে ছিলেন। সেদিনের এই হত্যাকাণ্ডের পর কর্তৃপক্ষ ওই নিরাপত্তাকর্মীদের কথা বলায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নিরাপত্তাকর্মী বলেন, প্রথমে সড়কে পারভেজের সঙ্গে হামলাকারীদের কথা-কাটাকাটির পরই ঘটে হামলার ঘটনা। খুব দ্রুততার সঙ্গে এই হামলা ঘটনা ঘটে এবং কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই হামলাকারীরা চলে যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অন্যদিকে, পারভেজ হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে সৈকত নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ঘটনার সময় প্রধান ফটকে চারজন নিরাপত্তাকর্মী, আট-দশজন শিক্ষার্থী থাকলেও কেউই পারভেজ ও বন্ধুকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। একপর্যায়ে পারভেজ হামলাকারীদের ধাক্কা দিয়ে প্রধান ফটকের ভেতরে প্রবেশ করলে নিরাপত্তাকর্মীরা শাটার নামিয়ে দেন। তখনও হামলাকারীদের কেউ ধাওয়া দেননি। বরং হামলার পর হামলাকারীরা নিরাপদে সেখান থেকে চলে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মিডটার্ম পরীক্ষা শেষে গত শনিবার বেলা ৩টার দিকে পারভেজ তার বন্ধু সুকর্ণ, তরিকুল, ইমতিয়াজসহ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে র‍্যানকন বিল্ডিংয়ের সামনের একটি পুরি-শিঙাড়ার দোকানে দাঁড়িয়ে নিজের মধ্যে হাসি-ঠাট্টা করছিলেন। তাদের পেছনেই দাঁড়ানো ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের দুই ছাত্রী ও তাদের বন্ধু প্রাইমএশিয়ার মেহেরাজ ইসলাম, আবু জহর গিফফারি পিয়াস ও মাহাথির হাসান।

তারা একপর্যায়ে পারভেজ ও তার বন্ধুর হাসাহাসি নিয়ে জানতে চান- কেন তাদের কটাক্ষ করে হাসাহাসি করা হচ্ছে। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হলে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোশাররফ হোসেন বিষয়টি জানতে পারেন। পরে প্রক্টরের উপস্থিতিতে দুই পক্ষকে ডেকে মীমাংসা করে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষক সুষমা ছোঁয়াতী ও সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক আবুল হাশেম। তবে ওই মীমাংসার পরেও বান্ধবীদের কাছে নিজেদের ক্ষমতা ও আধিপত্য দেখাতে হামলা চালিয়ে পারভেজের ওপর হামলা করে তাকে হত্যা করে হামলাকারীরা। 

পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনা ও হামলায় অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে কয়েকজন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ছিল। তারা ‘বেনসন গ্রুপ’ নামে কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত। ওই গ্রুপের সদস্যরা বনানী, মহাখালী ও কড়াইল বস্তি এলাকায় মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গেও জড়িত। সব মিলিয়ে হামলাকারী ১৫-২০ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১১ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলো- মেহেরাজ ইসলাম, আবু জহর গিফফারি পিয়াস, মো. মাহাথির হাসান, সোবহান নিয়াজ তুষার, হৃদয় মিয়াজি, রিফাত, আলী, ফাহিম, আল কামাল শেখ ওরফে কামাল, আলভী হোসেন জুনায়েদ ও আল আমিন সানি। 

তাদের মধ্যে মেহেরাজ ইসলাম প্রাইমএশিয়ার বিবিএর শিক্ষার্থী। তিনি মহাখালীর নাসিম গ্যাংয়ের সদস্য। মেহেরাজ থাকেন মহাখালীর হাজারীবাড়ী এলাকায়। হামলার সময় যেসব বহিরাগত দেখা যায়, তারা সবাই মেহেরাজের পরিচিত।

এ ছাড়া, অভিযুক্ত আবু জহর গিফফারি পিয়াস প্রাইমএশিয়ার এলএলবির শিক্ষার্থী। মহাখালী আমতলা কাঁচাবাজার এলাকায় থাকেন এবং কড়াইল বস্তি কেন্দ্রীক আড্ডা দেন। সিসি ক্যামেরায় সেই ফুটেজে দেখা গেছে- এই পিয়াসই ধারালো অস্ত্র দিয়ে পারভেজকে আঘাত করেন। 

অন্যদিকে, মাহাথির হাসান প্রাইমএশিয়ার ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। গাজীপুরের কাপাসিয়ায় তার গ্রামের বাড়ি। প্রাইমএশিয়ায় তার সহপাঠীরা অভিযোগ করেছেন, মাহাথির কাপাসিয়ায় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। 

এই মাহাথির, মেহেরাজ ও পিয়াস মহাখালীর হাজারীপাড়া এলাকায় পরিচিত। তাদের সঙ্গে বেনসন কিশোর গ্যাং সদস্যদের সম্পর্ক রয়েছে। শিক্ষকদের মীমাংসার পরও তারা কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের খবর দেন। তাদের ডাকে হামলায় অংশ নেয় কিশোর গ্যাং সদস্য আল কামাল শেখ ওরফে কামাল, আলভী হোসেন জুনায়েদ ও আল আমিন সানি, রিফাত, আলী ও ফাহিম।

তারা সবাই মহাখালী, বনানীর কড়াইল বস্তি ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্য কিশোর গ্যাংগুলো যেভাবে প্রচারণা চালায়, এই গ্রুপটিকেও সেভাবে প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে মাদক সেবন, ছিনতাই ও এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

এ ছাড়া হামলার সময় সিসি ক্যামেরার ফুটেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক সোবহান নিয়াজ তুষার ও যুগ্ম সদস্যসচিব হৃদয় মিয়াজিকে দেখা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার সময় পারভেজ ও তার বন্ধু তরিকুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এলে কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ধাওয়া করে পারভেজ ও তার বন্ধু তরিকুলের ওপর হামলা চালায়। সেখানেই মেহেরাজ ইসলাম, আবু জহর গিফফারি পিয়াস, মাহাথির হাসানসহ কয়েকজন ছুরি ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। একপর্যায়ে পারভেজকে শক্ত করে ধরে রাখেন আবু জহর গিফফারি পিয়াস ও মাহাথির হাসান এবং পারভেজের বুকের বাঁ পাশে ছুরিকাঘাত করেন মেহেরাজ ইসলাম। এ সময় পারভেজের বন্ধু তরিকুল ইসলামকে মাথায় ও বাঁ হাতের কনুইয়ে আঘাত পান। পরে দুজনকে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পারভেজকে মৃত ঘোষণা করেন।  

পরে নিহত পারভেজের চাচাতো ভাই হুমায়ুন কবীর বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি মামলা করেছেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় পরিবার হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে। তার চাচা কুয়েতে থাকেন। তবে তিনি সন্তানের মৃত্যুর খবরে দেশে এসেছেন। পরিবারের দুই ভাই–বোনের মধ্যে পারভেজ ছিলেন বড়। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বলেও জানান তিনি।

এ ঘটনায় তিন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল, আলভী হোসেন জুনায়েদ ও আল আমিন সানি। গ্রেপ্তার কামালের বাড়ি খুলনার তেরখাদা উপজেলার বিলদুড়িয়ার শেখপাড়ায়, আলভীর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল দক্ষিণ জাহাঙ্গীরপুরে, আর আল আমিনের বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে। তবে তারা সবাই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাস করেন।

এ ছাড়া, খুনের ঘটনায় ইন্ধনদাতা হিসেবে সেই কথিত ‘প্রেমিকাকে’ শনাক্ত করা হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের ওই ছাত্রীর বিস্তারিত নাম, পরিচয় ও ঠিকানা খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে পারভেজ হত্যার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।

মামলার সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সারোয়ার বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মহাখালীর ওয়্যারলেস গেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা তিনজন এজাহারভুক্ত আসামিদের পরিচিত। সিসিটিভি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যে হত্যাকাণ্ডে তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। হত্যায় জড়িত পলাতক অন্য আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।আরটিভি