যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তিনি আবারও বৈঠকে বসবেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টােবর) সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ঘোষণায় তিনি বলেন, হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে বৈঠক করবেন তিনি, যা দীর্ঘ এবং ফলপ্রসূ ফোনালাপের পর নির্ধারিত হয়েছে। বৈঠকের তারিখ এখনও ঠিক হয়নি। খবর আল জাজিরার।
ফোনালাপটি এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন ট্রাম্পকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করতে হবে। জেলেনস্কি ট্রাম্পকে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রির আবেদন পুনরায় উপস্থাপন করবেন, যা ইউক্রেনকে রাশিয়ার গভীর অঞ্চলে হামলা চালানোর ক্ষমতা দেবে।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে পোস্টে জানিয়েছেন, তিনি আগামীকাল ওভাল অফিসে জেলেনস্কিকে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার আপডেট দেবেন। তিনি বলেন, “আজকের ফোনালাপে বড় অগ্রগতি হয়েছে।”
সিনিয়র মার্কিন ও রাশিয়ান কর্মকর্তারা আগামী সপ্তাহে পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকের প্রস্তুতি নিতে বৈঠক করবেন বলে ট্রাম্প জানিয়েছেন। এটি প্রথম পরিচিত আলাপচারিতা, যা আগস্টে আলাস্কায় অনুষ্ঠিত সামিটের পর থেকে দুই নেতার মধ্যে হয়েছে।
রাশিয়ার বাহিনী বৃহস্পতিবারও ইউক্রেনে আকাশ থেকে হামলা চালিয়েছে, শত শত ড্রোন এবং বহু ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ইউক্রেনের জাতীয় শক্তি অপারেটর জানিয়েছে, আটটি অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে।
দেশের বৃহত্তম প্রাইভেট এনার্জি কোম্পানি ডিটিইকে জানিয়েছে, রাজধানী কিয়েভে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটেছে এবং পোলটাভা অঞ্চলে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন বন্ধ করতে হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল ও গ্যাস কোম্পানি নেফটোগ্যাজ বলেছে, চলতি মাসে এটি ষষ্ঠবার গ্যাস অবকাঠামোতে আঘাত।
এই সপ্তাহের শুরুতে রাশিয়ার হামলায় একটি হাসপাতাল ও জাতিসংঘের কনভয় লক্ষ্যবস্তু হয়েছে, ৫৭ জন আহত হয়েছেন এবং ৫০ জন রোগীকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জেলেনস্কি যুক্তি দিয়েছেন, দীর্ঘ দূরত্বের হামলার সক্ষমতা বাড়ালে পুতিনকে সরাসরি আলোচনার জন্য আরও গুরুত্বসহকারে মনোযোগ দিতে বাধ্য করা সম্ভব হবে। টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের পরিসীমা প্রায় এক হাজার ৬০০ কিমি, যা মস্কোসহ রাশিয়ার প্রধান শহরে আঘাত নিশ্চিত করতে সক্ষম।
পুতিন ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছেন যে, এই ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি “সম্পূর্ণ নতুন স্তরের উত্তেজনা” সৃষ্টি করবে। তবে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি বিষয়টি বিবেচনা করছেন। ট্রাম্প বলেন, “আমি হয়তো পুতিনকে বলব, যদি এই যুদ্ধ সমাধান না হয়, আমি টমাহক পাঠাব।”
ট্রাম্প সম্প্রতি গাজার যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের পর ইসরায়েল পরিদর্শন করেছেন এবং সেখানে বলেছেন, এই চুক্তি ইউক্রেন-রাশিয়ার শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য ভিত্তি স্থাপন করতে পারে। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, প্রথমে রাশিয়াকে মোকাবিলা করতে হবে।
ট্রাম্প এবং পুতিন আগস্টে আলাস্কায় বৈঠক করেছিলেন, তবে কোনো চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এরপর থেকে ট্রাম্প বিশ্বের নেতাদের ওপর চাপ বাড়িয়েছেন যাতে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করা হয়। ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।