
বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) ২৬ জনকে গুম, নির্যাতনের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং সাবেক-বর্তমান ১১ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ আজ।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ আদেশের পর অভিযোগ গঠন করা হবে কি না তা জানা যাবে।
এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও রয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ দেওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনাল ১৪ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছিলেন। তবে সেদিন কোনো আদেশ না দিয়ে আজকের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। যদিও ওই দিন মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামিকে পুলিশ ট্রাইব্যুনালে হাজির করে।
গ্রেপ্তার তিন আসামি হলেন—ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
মামলার পলাতক ১০ আসামির মধ্যে পাঁচজন বিভিন্ন সময়ে ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা হলেন—লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী ও মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক।
অন্য পলাতক আসামিরা হলেন—শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক।
গত ৭ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জেআইসি সেলে সরকারবিরোধী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে গুম ও নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত গুম হওয়া ২৬ জনের ঘটনা উপস্থাপন করেন।
এসব ঘটনার ভিত্তিতে পাঁচটি অভিযোগ এনে ১৩ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে চার্জ গঠনের আবেদন করেন তিনি। পরে স্টেট ডিফেন্স এবং গ্রেপ্তার তিন আসামির পক্ষ সময় চাইলে ট্রাইব্যুনাল আজকের দিনটি শুনানির জন্য নির্ধারণ করে।
এর আগে ২৩ নভেম্বর পলাতক আসামিদের জন্য স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেয় ট্রাইব্যুনাল। স্বেচ্ছায় আত্মপক্ষ সমর্থনে লড়তে চাইলে শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না নিয়োগ পান। তবে শারীরিক কারণে ৩ ডিসেম্বর তিনি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালে শেখ হাসিনার পক্ষে মো. আমির হোসেনকে নিয়োগ করা হয়।
গত ২২ অক্টোবর গ্রেপ্তার এ মামলার তিন সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি পলাতক আসামিদের হাজিরের জন্য সাত দিনের মধ্যে দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়।
৮ অক্টোবর ১৩ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। অভিযোগ আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।