News update
  • Tk 500cr Drive to Turn Haor Fallow Land Into Farmland     |     
  • Tarique Rahman returns home amid rapturous reception     |     
  • Home After 17 Years: Tarique Returns to Gulshan Residence     |     
  • Tarique Calls for United Effort to Build a Safe Bangladesh     |     
  • Tarique leaves for 300 feet area from airport     |     

ছোট্ট কাকুলির চিঠি পেয়ে সাতক্ষীরায় ছুটে এলেন ইতালির আন্দ্রেয়া

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিবিধ 2023-02-06, 8:38am

resize-350x230x0x0-image-210685-1675633090-078d13eda911bd1c63f449a24c39c7671675651104.jpg




নয় বছরের শিশু কাকুলি সরকার। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এই শিশুটির বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামে। তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠেছে সুদূর ইতালির ৩২ বছরের যুবক আন্দ্রেয়া ডেলসোলভাটোরের সঙ্গে। তাও আবার চিঠি ও ছবি আদান-প্রদানের মাধ্যমে। এই ছোট্ট কাকুলি চিঠি লিখে আন্দ্রেয়াকে তার হরিণখোলা গ্রামে আসার জন্য বলেছিল। তার আবদার রাখতে ইতালির মিলান থেকে স্কুটার চালিয়ে হরিণখোলা গ্রামে চলে এসেছেন আন্দ্রেয়া।

হরিণখোলা গ্রামটি সাতক্ষীরা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। হাতেগোনা ১৪-১৫টি পরিবার ছাড়া বেশিরভাগেরই নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। সেই গ্রামে এসে দিব্বি পুরনো একটি ভেসপা চালিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আন্দ্রেয়া। তার আমন্ত্রণে আরও দু’জন বিদেশি এসেছেন। তারা হলেন, রোমানিয়ার এলেনা এক্সিনটের ও ইতালির ইলারিও লাভাররা। হরিণখোলা গ্রামে বিদেশি এই তিনজনের আগমনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

হরিণখোলা গ্রামের গোবিন্দ সরকারের মেয়ে কাকুলি সরকার। ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি বেসরকারি সংস্থা কাকুলির পড়ালেখার বিষয়ে সহযোগিতা করে। এই সংস্থার মাধ্যমেই আন্দ্রেয়ার সঙ্গে কাকুলির যোগাযোগ। শিশু কাকুলির শিক্ষার জন্য গত তিন বছরে ধরে সহযোগিতা করে আসছে আন্দ্রেয়া।

কাকুলি বেসরকারি সংস্থা ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল পরিচালিত কমিউনিটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবার সম্বল বলতে পাঁচ শতক জমির ওপর আধাপাকা একটি বাড়ি। দুই বোনের মধ্যে কাকুলি বড়। ছোট বোনের বয়স চার বছর। গোবিন্দ সরকার ও বিথিকা সরকার দুজনই কৃষিকাজ করেন। কোনো রকমে চলে তাদের সংসার।

এ ব্যাপারে কাকুলির মা বলেন, তিন বছর আগে কাকুলির সঙ্গে চিঠি ও ছবির মাধ্যমে পরিচয় হলেও তাদের দেখা হয়নি। শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কাকুলির সঙ্গে দেখা করতে বাড়িতে আসেন আন্দ্রেয়া।

তিনি বলেন, আন্দ্রেয়া আমাদের বাড়িতে প্রথম আসেন ৩ জানুয়ারি। ওই সময় তিনি কাকুলিকে কোলে নিয়ে আদর করেন। পরে তাকে মোটরসাইকেলে চড়িয়ে গ্রামের মধ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এ ঘটনায় আমাদের বাসায় গ্রামের লোকজনের ভিড় জমে গিয়েছিল। তাকে প্রথম দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন আন্দ্রেয়া। প্রথম দেখাতেই তিনি বলেছিলেন, ‘সম্ভব হলে আমি তোমার জন্য বাংলাদেশে থেকে যেতাম। আমি সবসময় তোমার খোঁজখবর রাখব। সময় ও সুযোগ পেলে তোমার কাছে চলে আসব।’ এরপর আসেন ২৬ জানুয়ারি সরস্বতি পূজার দিন। সেদিনও কাকুলিসহ গ্রামে অন্য শিশুদের নিয়ে স্কুটারে করে ঘুরে বেড়িয়েছেন আন্দ্রেয়া। এরপর এসেছেন গত শুক্রবার।

ইতালির নাগরিক আন্দ্রেয়া মা-বাবার একমাত্র সন্তান। পড়ালেখা করেছেন পরিবেশ বিজ্ঞান নিয়ে। ইতালিতে বর্জ্য থেকে পানি বিশুদ্ধকরণ নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থায় চাকরি করতেন তিনি। এরপর জমানো টাকা দিয়েই ভ্রমণে বের হয়েছেন তিনি।

আন্দ্রেয়া বলেন, মূলত কাকুলির জন্যই এসেছি। সে আমার মেয়ের মতো। কাকুলি যতদিন পড়ালেখা করতে চায়, আমি সহযোগিতা করব। বড় হয়ে কাকুলি ভালো মানুষ হবে, মানুষের জন্য কাজ করবে এটাই আন্দ্রেয়া প্রত্যাশা করেন।

পাঁচ মাস আগে ইতালির মিলান শহর থেকে স্কুটারে করে বেড়িয়েছিলেন আন্দ্রেয়া। গত ২৪ ডিসেম্বর ভারতের ঘোজাডাঙ্গা ইমিগ্রেশন দিয়ে সাতক্ষীরায় এসেছেন তিনি। আসার পথে সাতটি দেশ অতিক্রম করতে হয়েছে তাকে। এলেনা এক্সিনটেরের সঙ্গে আন্দ্রেয়ার পরিচয় পাকিস্তান ভ্রমণের সময়।

তিনি রোমানিয়ার নাগরিক হলেও থাকেন ইতালির মিলান শহরে। আন্দ্রেয়ার মতো এলেনারও মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়ানোর শখ। তিনি পেশায় মঞ্চ অভিনেতা। মিলান শহর থেকে তিনি যাত্রা করেছেন ২০১৯ সালের ৯ আগস্ট। এই সাড়ে তিন বছরে তিনি ২৮টি দেশ ভ্রমণ করেছেন।

সাতক্ষীরায় আসা এলেনা জানান, আন্দ্রেয়ার অনুরোধে তিনি কাকুলিকে দেখতে বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশে এসে তার খুব ভালো লেগেছে। তার ভিসার মেয়াদ আর এক মাস আছে। পুরো সময়টাই তিনি বাংলাদেশ থাকবেন। প্রয়োজনে ভিসার মেয়াদ বাড়াতেও পারেন।

আন্দ্রেয়া ও এলেনার আমন্ত্রণে সাতক্ষীরায় আসা আরেকজন হলেন ৪০ বছর বয়সী ইলারিও লাভাররা। তিনি অর্থনীতিতে পিএইচডি করেছেন। ইতিমধ্যে ৯৭টি দেশ ঘুরেছেন ইলারিও। ২০১০-১২ সালে আমেরিকার ২১টি দেশ ঘুরে ‘টোয়েন্টি আমেরিকান বুকস’ নামের একটি বই লিখেছেন।

ইলারিও জানান, ইতালিতে ফিরে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে আরেকটি বই লিখতে চান তিনি।

ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক ভিনসেনজো ফালকনো বলেন, এই সংস্থার অধীনে ৩৫টি কমিউনিটি বিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার উপকরণ ছাড়াও স্কুল পোশাক, জুতা ও ব্যাগ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। আন্দ্রেয়ার মতো পরোপকারী ব্যক্তিরাই ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করেন। তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।