News update
  • Young disabled people of BD vow to advocate for peace     |     
  • World Leaders Urged to Defend Human Rights and Justice     |     
  • Vegetable prices remain high, people buy in small quantities     |     
  • Off-season watermelon brings bumper crop to Narail farmers     |     
  • Climate Change Drives Deadly Floods, Storms, and Water Crises     |     

সারাবিশ্বের বনাঞ্চলে যত বাঘ, যুক্তরাষ্ট্রে আছে তার প্রায় দ্বিগুণ

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিবিধ 2022-07-29, 10:34pm




সারা বিশ্বের বনাঞ্চলে যতো বাঘ আছে, তার প্রায় দ্বিগুণ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সাম্প্রতিক কয়েকটি গবেষণার বরাতে এমন তথ্য পেয়েছে বিবিসি।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এসব বাঘ রয়েছে বন্দি অবস্থায়, সেখানকার বন্য পরিবেশে কোন বাঘ নেই।

বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, বাঘ মূলত এশিয়া মহাদেশের একটি প্রাণী। বিশ্বে যতো প্রজাতির বাঘ রয়েছে তারমধ্যে শুধু একটি প্রজাতি, সাইবেরিয়ান টাইগার রয়েছে রাশিয়ায়। এছাড়া বাকি সব বাঘের অবস্থান ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, চীনসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে।

সে হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে যতো বাঘ রয়েছে সেগুলো ঘুরেফিরে এশিয়ারই বাঘ। যেগুলো তারা বন্দি রেখে প্রজননের মাধ্যমে সংরক্ষণ করছে।

 তথ্য সূত্র আরটিভি নিউজ।

বাঘ পালনে বাধা নেই

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন চিড়িয়াখানা বা ব্যক্তিগত মালিকানায় সাত হাজারের বেশি বাঘ রয়েছে, যেখানে কিনা সারা বিশ্বে মোট বাঘের সংখ্যা ৩ হাজার ৮৯০টি।

পার্থক্য একটাই, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্য বাঘগুলো বিভিন্ন বনে-জঙ্গলে বিচরণ করছে।

এক সময় সারা আমেরিকা জুড়েই বাঘ লালন-পালনের অনুমোদন দেয়া হতো, তবে প্রাণী অধিকারকর্মীদের চাপে বর্তমানে দেশটির ৩৫টি রাজ্যে ব্যক্তিগতভাবে বাঘ পালনে নিষেধাজ্ঞা আছে।

বিগ ক্যাট স্যাংচুয়ারি অ্যালায়েন্সের তথ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪টি রাজ্যে বাঘসহ যে কোনো বিপজ্জনক বন্য প্রাণীকে পোষা প্রাণী হিসাবে রাখার বিরুদ্ধে কোনও আইন নেই। সেই রাজ্যগুলো হল অ্যালাব্যামা, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং উইসকনসিন।

অন্যদিকে ডেলাওয়্যার এবং ওকলাহোমায় কিছু বন্যপ্রাণী পালনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাঘের মতো বিগ ক্যাট সেই তালিকায় নেই। বাঘ পালনে সেখানে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই, নিয়ন্ত্রণও নেই।

যেসব রাজ্যে এখনও ব্যক্তিগতভাবে বাঘ পালন অনুমোদিত সেখানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে আইন পাসের জন্য কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের হিউম্যান সোসাইটি- এইচএসইউএস।

এছাড়া ১৩টি অঙ্গরাজ্যে বাঘ পালনে কোন আইনি বাধা নেই। তবে আলাদাভাবে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। সেরকম একটি রাজ্য টেক্সাস।

আমেরিকায় বাঘের সংখ্যা বেশি কেন?

বাঘ বিশেষজ্ঞ মনিরুল খান বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে বন্য পরিবেশে একটি বাঘিনী দুই বছর বয়স থেকেই সন্তান জন্মদানে সক্ষম হয়।

যদি মেয়ে বাঘটির আয়ুকাল ২০ বছর হয় তাহলে প্রতি তিন বছর অন্তর ৩/৪টি বাচ্চা জন্ম দিতে পারে।

সে হিসেবে ছয় বারের গর্ভধারণে ১৮-২৪টি শাবক জন্ম দিতে পারে একটি মা বাঘ।

তবে বন্য প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে সব শাবক পূর্ণাঙ্গ জীবনকাল কাটাতে পারে না।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একবারে জন্ম নেয়া তিনটি শাবকের মধ্যে একটি শাবক পূর্ণাঙ্গ জীবন কাটাতে পারে। বাকিগুলো মারা যায়।

বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ জানান, খাঁচায় বন্দি বাঘদের কোন প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় না।

সেখানে বাঘ শিকার হয় না। বরং বন্দি অবস্থায় পর্যাপ্ত খাবার ও চিকিৎসা পেয়ে এসব বাঘের আয়ুষ্কাল বেড়ে যায়।

এতে মা বাঘ বেশি গর্ভ ধারণ করতে পারে।

আবার বন্দি অবস্থায় প্রতিটি শাবককে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়। এভাবেই আমেরিকায় বাঘের সংখ্যা বনে থাকা বাঘের সংখ্যাকে দ্বিগুণ ছাড়িয়ে গেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

"কুকুরের চাইতে বাঘের মালিক হওয়া সহজ"

টেক্সাসকে বলা হয় রক্ষণশীলদের রাজ্য। যেকোনো প্রাণীর মালিকানা নেয়াকে এখানে ঈশ্বর প্রদত্ত অধিকার হিসেবে ধরা হয়।

রাজ্য সরকারও সেই ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে না। এ নিয়ে সেখানে কোন রাষ্ট্রীয় আইন নেই। বাঘ পালতে হলে সেগুলো শুধু নিবন্ধন করলেই হয়।

কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ এই নিয়মটিও মানে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই রাজ্য জুড়ে প্রকৃত ব্যক্তিগত বাঘের সংখ্যা কতো সেটা আজও অজানা।

ধারণা করা হয়। শুধু এই রাজ্যেই ২০০০ থেকে ৫০০০ বাঘ থাকতে পারে।

টেক্সাসে কুকুরের চেয়ে বাঘের মালিক হওয়া সহজ।

কারণ ওই রাজ্যে বাঘকে নয়, বরং কুকুরকে বিপজ্জনক প্রাণী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এ কারণে রাজ্যের অনেক বাসিন্দা নিজেদের বাড়ির আঙিনায় কুকুর বেড়ালের মতো বাঘ পোষে। এমনকি অনলাইনেও বাঘ বিক্রি হয়।

নেটফ্লিক্স সিরিজে আলোড়ন

২০২০ সালে নেটফ্লিক্সের সিরিজ, টাইগার কিং প্রচারিত হওয়ার পর বাঘ নিয়ে এই বাণিজ্যের দিকটি সবার সামনে নতুন করে উন্মোচিত হয়।

সেখানে দেখা গিয়েছে যে, মানুষ কীভাবে আমোদ-স্ফূর্তি এবং লাভের জন্য বাঘের অপব্যবহার করছে।

এসব বাঘ লালন পালন করার পরিবেশ, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও প্রজনন প্রক্রিয়া কতোটা নিম্নমানের সে বিষয়টিও উঠে এসেছে।

যদিও নেটফ্লিক্সে এই সিরিজ বের হওয়ার আগে থেকেই আমেরিকায় ব্যাপকভাবে বাঘ পালন হয়ে আসছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭৩ সালের বিপন্ন প্রজাতি সংরক্ষণ বিষয়ক আইন থাকলেও 'বাঘ' তার আওতায় পড়ে না।

কারণ আমেরিকার কোন বাঘ বন থেকে ধরে এনে বন্দি করা হয় না। সব বাঘ সংগ্রহ করা হয় প্রজননকারীদের থেকেই।

এই আইন শুধুমাত্র বন থেকে নেওয়া প্রাণীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

প্রাণী কল্যাণ কর্মী বেন ক্যালিসন বলেছেন "যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল সংখ্যক বাঘ আসে বন্দি বাঘ থেকে প্রজননের মাধ্যমে। এভাবেই দেশটির পোষা বাঘের শিল্পকে চাঙ্গা রেখেছে।"

তবে সংরক্ষণবাদী ও প্রাণী আন্দোলনকর্মীদের চাপের মুখে যুক্তরাষ্ট্রে এসব বন্দি বাঘের হার কমে আসছে।

ফেলাইন কনজারভেশন ফেডারেশন ২০১১ সালে প্রথম বিগ ক্যাটের আদমশুমারি শুরু করে যা টানা ৫ বছর চলে।

এটি রিপোর্ট করেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মোট বড় বিড়ালের সংখ্যা ২০১১ সালে ৬৫৬৩ থেকে কমে ৫১৪৪ হয়েছে, যা ২২% কমেছে।

আইন পাস হলেও প্রয়োগ নেই

বেশিরভাগ প্রাণী গবেষক মনে করেন, বাঘের মতো একটি বন্যপ্রাণীকে কেনা, বন্দি বানিয়ে পালন করা এবং প্রজনন বন্ধ করা দরকার।

এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী বাঘ নিয়ে বাণিজ্যের অর্ধেকই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।

কেন্দ্রীয় তদারকি ছাড়া এই সমস্যা বাড়তেই থাকবে বলে জানিয়েছেন সংরক্ষণবাদীরা।

দেশটির জু অ্যান্ড অ্যাকোয়ারিয়াম অ্যাসোসিয়েশনের অনুমোদিত অভয়ারণ্যগুলোয় বাঘের ব্যক্তিগত লালন পালন রোধ করতে ২০১৩ সালে, বিগ ক্যাটস এবং পাবলিক সেফটি প্রোটেকশন অ্যাক্ট প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু এটি আইনে পরিণত করা যায়নি।

অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার ইন্সটিটিউট জানায়, পরে ২০২১ সালে বিগ ক্যাট পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট নামে একটি বিল এনে দেশটির বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইনকে সংশোধন করা হয়েছে।

ওই আইনে "সিংহ, বাঘ, চিতাবাঘ, জাগুয়ার, কুগার বা এই প্রজাতির যেকোনো হাইব্রিড বিগ ক্যাটের ব্যক্তিগত লালন পালনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।"

আইনটি গত বছর প্রতিনিধি পরিষদে পাস হলেও এরপর থেকে তা আটকে আছে।

বিশেষজ্ঞ এবং প্রাণী অধিকার সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারকে জড়িত হওয়ার আহ্বান জানান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঘের মতো বন্য প্রাণী বন্য পরিবেশে বেঁচে থাকার গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা শেখে। কিন্তু বন্দী অবস্থায় সেটা সম্ভব হয় না।

যারা বাঘ পোষেন, তাদের ধারণা, একটি বাঘশাবককে পোষা প্রাণী হিসেবে বড় করা হলে এটি আর হিংস্র হবে না। কিন্তু বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোষ মানানো হলেও বাঘ একটি বন্য প্রাণীই থেকে যাবে, আর এই হিংস্রতা আছে বাঘের ডিএনএ'র মধ্যেই। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।