হাত ঘুরতেই বদলে যায় ইলিশের দাম। কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না দাম বাড়তির ঊর্ধ্বগতি। ৫ বছরে দেশের বাজারে ইলিশের দাম বেড়েছে ৫৭ শতাংশ। দাম বৃদ্ধির এই প্রবণতাকে অস্বাভাবিক বলছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। সংস্থাটির মতে, চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা, ব্যয় বৃদ্ধি, রফতানিসহ ১১ কারণে বাড়ছে দাম। দেশের মানুষকে প্রাধান্য দিয়ে রফতানি কমিয়ে যৌক্তিক দাম নির্ধারণ ও বাজার মনিটরিং বাড়ানোর পরামর্শ কৃষি অর্থনীতিবিদদের।
বাংলাদেশে মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশই ইলিশ। গত কয়েক বছর ইলিশের সরবরাহ বাড়লেও কমেছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। যদিও এককভাবে জাতীয় আয়ের সঙ্গেও যুক্ত এই মাছ।
স্বাদে অনন্য এই মাছের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি দামও বাড়ছে। গত কয়েক বছরে এর দাম বেড়ে চলে যাচ্ছে ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।
সরকারি বিপণন সংস্থা— টিসিবির তথ্য, ২০২০-২১ অর্থবছরে ইলিশের খুচরা দাম ছিল কেজিপ্রতি ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা বেড়ে ঠেকে ১৬০০ টাকায়। আরও বাড়তে বাড়তে ২০২৫ সালে দাম হয় ৯০০ থেকে ২২০০ টাকা।
ইলিশের দাম বৃদ্ধির এই প্রবণতাকে অস্বাভাবিক বলছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। এর পেছনে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্যহীনতা, পরিবহন ও সংরক্ষণ ব্যয় বৃদ্ধি, মজুদ, মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য ও রফতানিসহ ১১টি কারণ উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কমিশন। মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে কার্যকর নীতি প্রণয়ন, সরবরাহ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ, পাইকারি বাজারে নজরদারি ও জেলেদের সহায়তা বাড়ানো জরুরি বলেও মনে করছে সংস্থাটি।
দেশের চাহিদা প্রাধান্য দিয়ে রফতানি কমানোর পাশাপাশি যৌক্তিক দাম নির্ধারণ ও কার্যকর করার পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভারতে শুভেচ্ছা হিসেবে ৪-৫ টন ইলিশ রফতানি করা সুবিবেচনা সম্মত ছিল। কিন্তু এত বেশি ইলিশ রফতানি করা আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ নিম্ন আয়ের মানুষ তো বটেই মধ্য আয়ের মানুষও ইলিশ কিনে খেতে পারছে না। বর্তমানে ইলিশের আহরণ খরচ যা আছে তাতে করে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকার বেশি প্রতি কেজি ইলিশের দাম হওয়ার কথা না। সেক্ষেত্রে এক কেজির একটা ইলিশের দাম কমপক্ষে ২৫০০ টাকা নিচ্ছে, এটা খুবই বেশি। সরকারের উচিৎ ছিল দাম নির্ধারণ করে দেয়া এবং দামটা যাতে কার্যকরী হয় সেটা বাজারে, বিপণিবিতনে পরীক্ষানিরীক্ষা করা
২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ১৪০০ টন এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০১ টন ইলিশ রফতানি করেছে সরকার। আর চলতি বছর ভারতে ১২০০ টন ইলিশ রফতানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।