News update
  • US Faces Pressure as UN Votes on Gaza Ceasefire     |     
  • Prof Yunus includes 4 political leaders in UNGA tour del     |     
  • Tarique calls for vigilance to prevent troubles during Puja     |     
  • Parties divided on constitution order move over July Charter     |     
  • Khulna’s ‘white gold’ shrimp eyes Tk 22,600cr export goal     |     

বরমচাল চা-বাগান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতি, তিনিই প্রথম

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক পরীক্ষা 2025-06-26, 10:02pm

3b8066c9d8b0c40234b1430b4aa44c7bbc3c70ea3641cefd-2794e53cdab23b43da34aa3251bd38e91750953761.jpg




ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছায়াঢাকা ক্যাম্পাসে বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ছিল এক অন্যরকম সকাল। কাঁধে ব্যাগ, চোখে স্বপ্ন, মুখে দৃঢ়তা— চা শ্রমিকের মেয়ে ইতি গৌড় ভর্তি হলেন দেশের শ্রেষ্ঠ এ বিদ্যাপীঠের ফিন্যান্স বিভাগে। এই দিনটি শুধু ইতির একার নয়, বরং মৌলভীবাজারের বরমচাল চা বাগানের পুরো জনগোষ্ঠীর জন্য গর্বের দিন। কারণ, ইতি গৌড় এই বাগান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া প্রথম শিক্ষার্থী।

চা পাতার গন্ধমাখা শ্রমের ঘ্রাণ নিয়ে বেড়ে ওঠা ইতির এই সাফল্য এসেছে অসংখ্য সীমাবদ্ধতা আর সংগ্রামের দেয়াল পেরিয়ে।

জানা গেছে, ইতির মা সুমিত্রা গৌড় ছিলেন বাগানের একজন শ্রমিক, যিনি অসুস্থ হয়ে দু’ বছর আগে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আর বাবা শংকর গৌড় এখন অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। কিন্তু এই পরিবারটি স্বপ্ন দেখতে কখনো কার্পণ্য করেনি।

চা শ্রমিক বাবা-মায়ের তিন মেয়ের বড় স্বপ্ন ছিল শিক্ষার আলো। বড় মেয়ে স্মৃতি ও মেজো মেয়ে সুইটি শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে সংসার জীবনে পা রেখেছেন। স্মৃতির স্বামী ঢাকার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আর সুইটি এখন ঢাকায় একটি নার্সিং কোর্সে অধ্যয়নরত। আর এই তিন বোনের সবার ছোট— ইতি, যাকে নিয়ে ছিল সবার সবচেয়ে বেশি স্বপ্ন।

ইতির শিক্ষা শুরু বরমচাল প্রাথমিক মিশনারি স্কুলে, সেখান থেকেই তার মেধার পরিচয় মিলেছিল। বরমচাল উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসিতে পেয়েছেন জিপিএ ৪.৬৭, এরপর এইচএসসিতে ইউছুফ গণি কলেজ থেকে পেয়েছেন ৪.৮৩। শুরু হয় নতুন অধ্যায়। একের পর এক ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধার প্রমাণ রেখেছেন ইতি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অপেক্ষমাণ তালিকায় ছিলেন, পরে ভর্তি হলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএতে। কিন্তু মনের গহীনে বাসা বেঁধে থাকা এক স্বপ্ন— ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করার। অবশেষে বাস্তবে ধরা দিল। ঢাবির ফল প্রকাশের পর ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়ে তিনি সেই স্বপ্নকেই বেছে নেন।

মেজো বোন সুইটিকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় এসে বৃহস্পতিবার ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন ইতি।

ইতি সময় সংবাদকে বলেন, ‘আজ আমার স্বপ্নটা সত্যি হলো। মা বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন। বাবা বাড়িতে, অসুস্থ, কিন্তু খুব খুশি। আমি ভালোভাবে পড়াশোনা করে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হতে চাই।’

এদিকে ইতির সাফল্যের খবরে বরমচাল চা বাগানে যেন আনন্দের জোয়ার বইছে। তারা বলছেন, ইতির মতো আরও ছেলেমেয়েকে এগিয়ে যেতে হবে। বাগানের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এরইমধ্যে তার পড়াশোনার খরচ বহনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

ইতির বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় চা শ্রমিক বস্তিতে চলছে এক অন্যরকম উন্মাদনা। যেখান থেকে প্রতিদিন মানুষ চা পাতা তুলে জীবিকা নির্বাহ করে, সেখান থেকেই এক মেয়ে স্বপ্নের রাজধানীতে পৌঁছে গেছে। এই গল্প শুধু ইতির নয়, এটা চা বাগানের প্রতিটি অবহেলিত পরিবারের গল্প, যারা প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলেছে শিক্ষা আর সম্ভাবনার হাত ধরতে।