তীব্র গ্যাস সংকটে জ্বলছে না চুলা। কঠিন হয়ে পড়েছে রান্না। রাজধানীর কোনো কোনো এলাকায় প্রায় দেড় বছর ধরে গ্যাস নেই। অথচ প্রতি মাসে গুনতে হচ্ছে বিল। এ নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই গ্রাহকদের। সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে তিতাসের পরামর্শ, যেসব বাসা-বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস থাকছে না, সেসব গ্রাহকদের সংযোগ না রাখাই ভালো।
রাজধানীর মগবাজারের দিলু রোড এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রান্নার সব প্রস্তুতি নিয়ে গ্যাসের অপেক্ষায় বাসিন্দারা। কিন্তু চুলা জ্বালাতে গিয়ে দেখেন গ্যাস নেই। এক গৃহবধূ জানান, এই এলাকায় গ্যাসের সংকট অনেক পুরোনো। আর এখন তো গ্যাসের দেখা পাওয়াই মুশকিল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১ ঘণ্টাও পুরোপুরি গ্যাস থাকে না।
একই অবস্থা রাজধানীর সেন্ট্রাল রোড, কাঁঠাল বাগান, কলাবাগান, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়। বাধ্য হয়ে অনেকেরই রান্না করতে হচ্ছে সিলিন্ডার কিংবা বৈদ্যুতিক চুলায়। বাসিন্দারা জানান, গ্যাস একদমই থাকে না। কখনও কখনও ২-৩ দিনেও গ্যাস আসে না। যদিও কিছুটা আসে, সেটিও গভীর রাতে। সংশ্লিষ্ট অফিসে জানিয়েও মিলছে না কোনো সমাধান।
গাড়ির জন্য গ্যাস পাওয়াও কঠিন হয়ে উঠছে। সিএনজি স্টেশনগুলোতে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা যেন স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত। ভুক্তভোগীরা বলেন, দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে নিতে হচ্ছে গ্যাস। তবু মিলছে না অনেক সময়।
তিতাস বলছে, চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট কম। এই ঘাটতির কারণেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
তিতাসের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ সাইদুল হাসান বলেন, যারা দীর্ঘসময় ধরে গ্যাস পাচ্ছেন না, তারা গ্যাস সংযোগ কেটে দিতে পারেন। সেই টাকা দিয়ে সিলিন্ডার খরচ চালাতে পারেন।
আপাতত গ্যাসের বিকল্প ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, তিতাসের অনেক কর্মকর্তাই বাসায় গ্যাসের পাশাপাশি সিলিন্ডার ব্যবহার করেন। গ্যাস না থাকলে আপাতত বিকল্প ব্যবহার করুন। তিতাস ধীরে ধীরে উন্নতি করছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংকট মোকাবিলায় দেশে আরও ভূগর্ভস্থ গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ বদ্বীপ অঞ্চল হওয়ায়, পর্যাপ্ত আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন করে চাহিদা মেটানো সম্ভব।
ভূতত্ত্ব ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, বাংলাদেশে গ্যাসের অভাব থাকাটা যুক্তিসংগত নয়। কারণ দেশের ভূগর্ভে গ্যাসের যে অবস্থান, সেটি সন্তোষজনক। সংকট মোকাবিলায় ভূগর্ভস্থ গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন বাড়াতে হবে।
এদিকে, গ্যাস সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে চরমভাবে।