জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সম্মেলনের মধ্যদিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি ফিরেছে এ সংকটের প্রতি। অন্তর্বর্তী সরকার মনে করছে এরমধ্যে দিয়ে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এতো দিনের যে অচলাবস্থা তা কাটতে শুরু করবে। বরাদ্দ পেয়েছে ৯৬ মিলিয়ন ডলার যা চলবে তিন থেকে চার মাস। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ধীরে ধীরে আসবে চাহিদার বাকি বরাদ্দও।
মিয়ানমারে সেনাবহিনীর নির্যাতন, জাতিগত নিধনের মুখে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল এখন অনেকটাই স্মৃতির আড়ালে।
ওই সময় মানবতার দুয়ার খুলেছিল বাংলাদেশ। এখন নিজেই শিকার অমানবিকতার। ক্যাম্পগুলোতে কমেছে বরাদ্দ। বেড়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি চরমে। প্রত্যাবাসেনর কয়েক দফা উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ায় কক্সবাজার যেন বিপর্যয়ের অপেক্ষায় থাকা অঞ্চল।
এমন প্রেক্ষাপেটে প্রথমবারের মতো এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দফতরে আয়োজিত হয় রোহিঙ্গা বিষয়ক সম্মেলন। এতে অংশ নেয় ৭৫ রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান। সংকট নিরসনে জোরালো বক্তব্য দেন বিশ্বের ৬৩ জন ব্যক্তি। প্রত্যেকেই চূড়ান্ত মত দেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে।
এ নিয়ে সম্প্রতি নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে কি হলো সেই প্রশ্নটা জাতি করতেই পারে। এতো জন বক্তৃতা দিলেন আর টাকা পেলেন দুটি দেশের কাছ থেকে। যেটা বলো হলো একবছরের জন্য যা প্রয়োজন তার ৩০ শতাংশ। বাকি ৭০ শতাংশ কে দেবে।
সরকার বলছে, সম্মেলনে সরাসরি রোহিঙ্গাদের কণ্ঠ শুনেছে বিশ্ববাসী। পাওয়া গেছে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের ৯৬ মিলিয়ন ডলারের অশ্বাস। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির ওপর চাপ প্রয়োগের সুপারিশের বাস্তবায়ন, প্রত্যাবাসন জটিলতা কমাতে পারে। এদিকে ওই সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সাত দফা প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধান উপেদষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপেদষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, রোহিঙ্গা সম্মেলনটা হওয়া একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বক্তব্য দেয়ার জন্য সারা বিশ্বে এ সমস্যা নিয়ে নতুন করে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। যার কারণে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য থেকে ৯৬ মিলিয়ন ডলারের অশ্বাস পাওয়া গেছে। এই অর্থ দিয়ে কয়েক মাস রোহিঙ্গাদের ভালোমতো চলবে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর মনে করেন, আড়ালে থাকা রোহিঙ্গাদের নিদারুণ বাস্তবতার কথা আবারও সবাইকে মনে করিয়ে দেয়ায় এ সম্মেলনের সফলতা।
তিনি আরও বলেন, এই সম্মেলনের সফলতা বলতে হলে বলতে পারি যে, দৃষ্টি আকর্ষণ এইটুকু আমার কাছে মনে হয়েছে। মূল অর্জন বাকিগুলো আমরা প্রস্তাব করেছি, আমরা অনুরোধ করেছি। বাকিগুলো অন্যদের হাতে তারা এটাকে কিভাবে সমাধান করবে। তারা কিভাবে সাড়া দেবে এটা নির্ভর করবে তাদের ওপর।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইশফাক ইলাহী চৌধুরী আরও বলেন,এই সম্মেলনে ফলে আসলে এটা কিছুই হয়নি। সত্যকথা বলতে কি বিশ্ব গণমাধ্যমে দেখুন কোথাও কোনো খবর নেই এই বিষয়ে।
চীন ও মিয়ানমার কিংবা ভারত কেউই অংশ নেয়নি রেহিঙ্গা সম্মেলনে। তাই সামনে ঈদের আগেই যে প্রত্যাবাসেনর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে সে বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে বলেও মত নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ২০১৫ সালের রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট এবং ২০১৬ ও ২০১৭ সালের সেনাবাহিনীর অভিযানের পূর্বে মিয়ানমারে ১.১ থেকে ১.৩ মিলিয়ন রোহিঙ্গা বাস করতেন। যাদের অধিকাংশের বাসস্থান ছিল মূলত ৮০-৯৮% রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে। ৯ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে দক্ষিণ-পূর্বের পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এছাড়া অন্যান্য প্রতিবেশী দেশসহ বেশ কিছু মুসলিম দেশে পালিয়ে যায়। ১০০,০০০-এর বেশি রোহিঙ্গা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচুত হয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত ক্যাম্পে রয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলায় ১২ জন নিরাপত্তা কর্মী নিহত হওয়ার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শুরু করে। এই অপারেশনে ৪০০-৩০০০ রোহিঙ্গা নিহত হন, অনেক রোহিঙ্গা আহত, নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হন। তাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং ৪০০,০০০ (মিয়ানমারের রোহিঙ্গার ৪০%) এর বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।