News update
  • Govt to cut savings certificate profit rates from January     |     
  • Gold prices hit fresh record in Bangladesh within 24 hours     |     
  • Election to be held on time, Prof Yunus tells US Special Envoy     |     
  • Moscow wants Dhaka to reduce tensions domestically, also with Delhi     |     
  • Saarc experts meet to reduce livestock-origin greenhouse gases     |     

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হুমকিতে উদ্বিগ্ন ভারত?

বিবিসি নিউজ, দিল্লি কৌশলগত 2025-02-06, 5:14pm

45435346-1bc7f4456fba7a1d102c801ddafb40911738840491.jpg




ভারত গত সপ্তাহে মোটরসাইকেলের আমদানি শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে। ১৬০০ সিসির বেশি ইঞ্জিনের হেভিওয়েট মোটরসাইকেলের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যদিকে, ছোট মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ওই শুল্ক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে।

ভারতের বাজারে আমেরিকান হার্লে ডেভিডসন মোটরসাইকেলের প্রবেশের বিষয়টাকে আরও মসৃণ করার জন্য এটা একটা আগাম পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।

এদিকে, দিল্লি আশা করছে এই সাম্প্রতিক পদক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শুল্ক সংক্রান্ত কোনও যেকোনো রকম হুমকি এড়াতে সাহায্য করবে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাইজে ফিরেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতিবেশী দেশ ও মিত্রদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের বিরুদ্ধে কড়া বাণিজ্য ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই প্রত্যাবর্তনকে চিহ্নিত করেছেন তিনি।

এই খেলায় ভারতের আশা, তারা কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু ভারতের দিক থেকে আমদানি শুল্ক হ্রাসের এই সিদ্ধান্ত কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করবে বা তার বাণিজ্য সংক্রান্ত পদক্ষেপকে প্রভাবিত করতে পারবে?

দিল্লি-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (জিটিআরআই) প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তবকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি বলেছেন, "কানাডা এবং মেক্সিকো আক্ষরিক অর্থেই যুক্তরাষ্ট্রের দুই অঙ্গ। তিনি (ডোনাল্ড ট্রাম্প) যদি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন, তাহলে সহজেই ভারতের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারেন।"

প্রসঙ্গত, গত মাসের শেষের দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর টেলিফোনে কথা হয়েছিল। কথোপকথনের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পরিমাণে অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। ন্যায্য বাণিজ্য ভারসাম্য বজায় রাখার বিষয়েও ভারতের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছিলেন।

প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম মেয়াদে মি. ট্রাম্প ভারতের ওপর চড়া শুল্ক আরোপ করেছিলেন। সেই সময় হার্লে ডেভিডসনের ওপর ১০০ শতাংশ আমদানি শুল্ককে "গ্রহণযোগ্য নয়" বলে ভারতের নিন্দা করেছিলেন।

'অন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলন' বলতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা মনে করেন, সেই সমস্ত বিষয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধও ঘোষণা করেছেন তিনি। এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তাকে বারবার ভারতের প্রসঙ্গ টেনে আনতেও দেখা গিয়েছে।

অতীতে এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি ভারতকে 'শুল্কের রাজা' বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। দুই দেশের মাঝে যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, ভারত সেই সম্পর্কের "বড় অপব্যবহারকারী" বলেও মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল তাকে।

ভারত তার শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ভোগ করে। ২০২৩ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ১৯০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

২০১৮ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্যদ্রব্য রফতানি ৪০ শতাংশ বেড়ে ১২৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পরিষেবা সংক্রান্ত বাণিজ্য ২২ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ভারতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রফতানির পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে ৭০ বিলিয়ন ডলারে।

এদিকে, মোটরসাইকেলের পাশাপাশি একাধিক ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে ভারত। স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড ইনস্টলেশনের ক্ষেত্রে ওই শুল্ক কমিয়ে শূন্য করে দেওয়া হয়েছে।

ভারত এই আমদানি শুল্ক শূন্য করে দেওয়ার ফলে সেই মার্কিন রফতানিকারকরা উপকৃত হয়েছেন যারা ভারতে ২০২৩ সালে নয় কোটি ২০ লাখ ডলার মূল্যের স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড ইনস্টলেশন সরবরাহ করেছিলেন।

এছাড়াও সিনথেটিক ফ্লেভারিং এসেন্সের ওপর শুল্ক ১০০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করে দেওয়া হয়েছে (গত বছর এই যুক্তরাষ্ট্রের তরফে রফতানির পরিমাণ ছিল ২১০ লক্ষ ডলার ছিল)।

জলজ ফিডের জন্য মাছের হাইড্রোলাইজেটের শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশতে নামিয়ে আনা হয়েছে (২০২৪ সালে এই খাতে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৫০ লাখ ডলার)।

নির্বাচিত বর্জ্য এবং স্ক্র্যাপ আইটেমগুলোর ওপরেও শুল্ক তুলে দিয়েছে ভারত। এটা এমন একটা ক্ষেত্র যেখানে গত বছর ভারতে মার্কিন রফতানির পরিমাণ ছিল ২৫০ কোটি ডলার।

এদিকে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে যে জিনিস আমদানি করা হয়েছিল সেই তালিকার শীর্ষে রয়েছে, অপরিশোধিত তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্য (১৪০০ কোটি ডলার), লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস বা এলএনজি, কয়লা, মেডিকেল ডিভাইস, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, মেটাল (ফেলে দেওয়া ধাতব পদার্থ), টার্বোজেট, কম্পিউটার এবং বাদাম।

মি. শ্রীবাস্তবের মতে, "ট্রাম্প ভারতের শুল্ক নীতির সমালোচনা করলেও, সাম্প্রতিক সময়ে (ভারতের পক্ষ থেকে) শুল্ক কমানোর যে পদক্ষেপ দেখা গিয়েছে, সেটা নীতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এটা বিভিন্ন খাতে মার্কিন রফতানি বাড়িয়ে তুলতে পারে।"

"প্রযুক্তি, অটোমোবাইল, শিল্প ও বর্জ্য আমদানিতে শুল্ক হ্রাসের সাথে সাথে ভারত বাণিজ্যকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে যদিও বিশ্বস্তরে বাণিজ্যিক পরিবেশ কিন্তু এখনও উত্তেজনার পরিস্থিতি অব্যাহত আছে।"

এদিকে, রফতানিকারক দেশ হিসেবে ভারতের পরিসর বেশ বিস্তৃত। বস্ত্র, ওষুধ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য থেকে শুরু করে পেট্রোলিয়াম তেল, যন্ত্রপাতি এবং কাটিং করা হীরা- অনেক কিছুই ভারত থেকে রফতানি করা হয়।

শুধু তাই নয়, স্মার্টফোন, অটো পার্টস, চিংড়ি, সোনার গয়না, জুতো এবং লোহা ও ইস্পাত সরবরাহ করে ভারত বিশ্ব বাণিজ্যে নিজেকে একটা মূল খেলোয়াড় হিসেবে তুলে ধরেছে।

মি. শ্রীবাস্তব বলেছেন, "এই বৈচিত্র্যময় পণ্যের পরিসর ভারতের বিস্তৃত রফতানি ভিত্তিকে শক্তিশালী করে তোলার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে (ভারতের) শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্ককেও প্রতিফলিত করে।"

"একসময় বিশ্বের সবচেয়ে সংরক্ষণবাদী অর্থনীতির দেশ ছিল ভারত। ১৯৭০ এর দশকে, আমেরিকান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জোসেফ গ্রিকো একে (ভারতকে) -সবচেয়ে সীমাবদ্ধ, জটিল... বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যবস্থা হিসাবে আখ্যা দিয়েছিলেন।"

এই 'অন্তর্মুখী দৃষ্টিভঙ্গির' কারণে বিশ্ব বাণিজ্যে ভারতের রফতানির ক্ষেত্রে সুস্থিত হ্রাস প্রত্যক্ষ করা গিয়েছিল। ১৯৪৮ সালে ভারতের রফতানি ২.৪২ শতাংশে থেকে কমে ১৯৯১ সালের মধ্যে। দাঁড়িয়েছিল মাত্র ০.৫১ শতাংশে।

'গ্লোবালাইজিং ইন্ডিয়া: হাও গ্লোবাল রুলস অ্যান্ড মার্কেটস আর শেপিং ইন্ডিয়াস রাইজ টু পাওয়ার' বইয়ের লেখিকা অসীমা সিন্হার মতে, "এই সময়টা স্বচালিত শিল্পায়ন অভিযান, রফতানি নৈরাশ্যবাদ এবং বৈশ্বিক জোটের প্রতি সন্দেহের দ্বারা পরিচালিত ছিল।

শেষপর্যন্ত পরিস্থিতির বদল হয় ১৯৯০ এবং ২০০০ এর দশকে। ১৯৯০ সালে যে গড় আমদানি শুল্ক ৮০ শতাংশ ছিল সেটি ২০০৮ সালে ১৩ শতাংশে দাঁড়ায়।

এদিকে, ভারতে উৎপাদন বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী 'মেক ইন ইন্ডিয়া' নীতি চালু করেন। তারপর থেকে শুল্ক আবার বেড়ে ১৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই অঙ্কটা কিন্তু চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি।

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ ধর মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির উপর ভিত্তি করে উচ্চ আমদানি করের বিরুদ্ধে 'পাল্টা ব্যবস্থা' নিতে চান। একইসঙ্গে বড় আকারের মার্কিন ঘাটতি রোখার জন্য বাণিজ্য পুনর্মূল্যায়নও করতে চান।

তার এই 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির নিশানায় রয়েছে ভারত।

মি. ধরের মতে, কৃষি বাজারে প্রবেশাধিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে রয়ে গিয়েছে।

ভারত ২০২৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি বাদাম, আপেল, ছোলা, মসুর ডাল এবং আখরোটের ওপর শুল্ক বাদ দিয়েছে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্ভবত সম্ভবত আরও বেশি দাবি করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কৃষিকে ঘিরে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে ভারত এই বিষয়ে অনড় থাকতে পারে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।

এই প্রসঙ্গে মি. ধর সতর্কতার সুরে বলেছেন, "ঠিক এখানেই আমরা কঠোর দর কষাকষি করব, এবং সেটা নিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

চীনের কথা মাথায় রাখলে দুই দেশের এই আসন্ন সংঘাত কমানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সম্পর্ক।

এই বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বিশ্বজিৎ ধর সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনথিভুক্ত ভারতীয় অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, ভারতের তরফে এই মার্কিন সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার ইচ্ছাটা কিন্তু একটা ইতিবাচক সংকেত পাঠিয়েছে।

পাশাপাশি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত সুসম্পর্ককের কারণেও কিছুটা সুবিধা মিলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমন্ত্রণে চলতি মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হোয়াইট হাউস সফরে যাওয়ার পর এই বিষয়ে কিছুটা স্পষ্টতা আসবে।