কুমিল্লার মুরাদনগরে চাঞ্চল্যকর ধর্ষণকাণ্ড নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কিছুতেই থামছে না। এরই মাঝে সোমবার সকালে লোমহর্ষক নির্যাতনের আরেকটি নতুন ভিডিও আগুনে ঘি ঢালার মতো অবস্থা হয়েছে। ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা যায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মুহাম্মদ আলী সুমনের নেতৃত্বে রমজান, অনিক, আরিফসহ ১৫-২০ জনের একটি চক্র ধর্ষক ফজর আলীকে পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন এবং হত্যার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি ভিকটিম নারীকে বিবস্ত্র করে দুইজনকে একসাথে করে হাত-পা বেঁধে ভিডিও ধারণ করছে।
এদিকে ধর্ষণের শিকার ওই নারী মামলা মোকদ্দমা নয়, এলাকার সকলের সাথে মিলেমিশে শান্তিতে থাকার অভিপ্রায় পুনর্ব্যক্ত করেছেন। অন্যদিকে সোমবার (৩০ জুন) সকালে ওই নারীর খোঁজ খবর নিতে আসেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ সামাজিক সংগঠনের ব্যক্তিরা।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে এক সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। স্থানীয়রা বিষয়টিকে পরকীয়া হিসাবে দাবি করলেও ভিকটিম নারী জানান তার সাথে ধর্ষক ফজর আলীর আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ পৃথক দুটি মামলায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে।
এদিকে সোমবার সকালে ধর্ষণকাণ্ডের নতুন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ‘তোদের বাপ আইছে’ নামক একটি ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি ভাইরাল করা হয়। ভিডিওটি স্থানীয় নুর মোহাম্মদ সহ বেশ কয়েকজন নেটিজেন শেয়ার করেছে। এতে দেখা যায় ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী সুমনের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একটি চক্র ধর্ষক ফজর আলীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। বিবস্ত্র করে বেঁধে নির্যাতনের পর তার শরীর হাত এবং মাথা থেকে রক্ত ঝরছে। ছাত্রলীগ সভাপতি সুমন নিজ হাতে পৈশাচিক কায়দায় ধর্ষক ফজর আলীকে নির্যাতন করছে। অপরদিকে সুমনের সহযোগী অনিক ওই নারীকে নিজ হাতে বিবস্ত্র করছে। পাশে থেকে রমজানসহ অন্যরা এসব ভিডিও ধারণ করছে। নতুন ভিডিও দেখে এলাকায় সমালোচনার মাত্রা তীব্র হয়েছে। এ যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকন বলেন, এটা দীর্ঘদিনের একটি পরকীয়ার সম্পর্ক। গত দুই মাস আগে ফজর আলীর ছোট ভাই শাহপরান ওই নারীর সাথে তার ভাইয়ের পরকীয়া নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল। তাদের পরকীয়ার বিষয়টি আমাদের এলাকার সকলেই জানে। তাছাড়া ওই পরিবারের সাথে ফজর আলীর আর্থিক লেনদেন রয়েছে। সেই সুবাদে তাদের নিয়মিত আসা-যাওয়ার খবরও এলাকায় চাউর হয়েছে। তবে ঘটনাটিকে এত বড় করার নেপথ্যের কারিগর হচ্ছে ছাত্রলীগ সভাপতি মুহাম্মদ আলী সুমন। তারা আগে থেকে ওঁৎ পেতে দুজনকে ধরেছে। পরে পরিকল্পিতভাবে বিবস্ত্র এবং নির্যাতন করে এসব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করেছে। ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে ওই চক্রটি ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে এ কাজ করে থাকতে পারে।
বাহেরচর এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রউফ বলেন, ফজর আলী একটা খারাপ লোক। এলাকায় বিভিন্ন নারীদের পেছনে ঘুরে ঘুরে অপকর্ম করাই তার কাজ। তার সাথে ওই নারীর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। এটা এলাকার সকলেই জানে।
স্থানীয় পেয়ারা বেগম বলেন, ফজর আলীর সাথে ভিকটিম নারীর চার বছর যাবত পরকীয়া প্রেম চলছিল। তাকে হাতেনাতে ধরার জন্যই সেদিন রাতে ওঁৎ পেতে বসেছিল মোহাম্মদ আলী সুমন, রমজান অনিকসহ ১৫-২০ জন। ফজর আলীর ভাই শাহ পরানের সাথেও ভিকটিমের সুসম্পর্ক রয়েছে।
ভিকটিম নারী বলেন, আমি না বুঝেই ফজর আলীর বিরুদ্ধে মামলাটি করেছি, পরিবার এবং এলাকার কারো সাথে পরামর্শ ছাড়াই মামলা করে আমি এখন আমার স্বামীর চাপের মুখে আছি। স্বামী এবং আমার পরিবারের লোকজন মামলা চালাতে অনীহা প্রকাশ করছে। আমি আমার সন্তানদেরকে নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই। কারো বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমা ভালো লাগেনা। আমি মামলাটি তুলে ফেলবো।
মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, নতুন কোনো ভিডিও এখনো আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি। আমরা মামলার অগ্রগতি নিয়ে কাজ করছি। সিনিয়র অফিসাররা মামলাটি অধিকতর তদন্তের কাজ তদারকি করছে।
তিনি বলেন, নতুন ভিডিও হাতে পেলে তা খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি ভাইরালের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আরটিভি