তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি)-এর বিরুদ্ধে গত প্রায় এক বছর ধরে বিচারিক দমনপীড়ন চলছে। মূলত দুর্নীতির অভিযোগে এই সময়ের মধ্যে দলটির কয়েকশ’ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন পদ্ধতিগত অনিয়মের অভিযোগে দলটির ২০২৩ সালের কংগ্রেসও বাতিল করার চেষ্টা করছে দেশটির আদালত।
তবে বসে নেই সিএইচপির নেতাকর্মীরাও। দেশের বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহারের মাধ্যমে দমন-পীড়নের অভিযোগে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ অনিয়মের অভিযোগে সিএইচপির ২০২৩ সালের কংগ্রেস অবৈধ ঘোষণা করা হবে কি না সে ব্যাপারে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) আঙ্কারার আদালতের সিদ্ধান্ত জানানোর কথা ছিল।
সিএইচপির আশঙ্কা, ওই সিদ্ধান্তের তাদের দলের নেতাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকে এর বিরুদ্ধে গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানী আঙ্কারায় তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। সিএইচপির লক্ষাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক ওই বিক্ষোভে যোগ দেয় বলে খবরে বলা হয়। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে ‘স্বৈরশাসক’ আখ্যা দিয়ে তার পদত্যাগের দাবি জানান।
সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভের মধ্যে সোমবার আদালত বিতর্কিত শুনানি আগামী ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করেছে।
সিএইচপির ওপর দমনপীড়ন কেন
২০২৩ সালে দলীয় কংগ্রেসের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করে সিএইচপি। সেই কংগ্রেসে সিএইচপি সদস্যদের ভোটের ভিত্তিতে দলের প্রেসিডেন্ট হন ওজগুর ওজেল। তবে সিএইচপির দলীয় কংগ্রেসে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে এবং বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এরপর সিএইচপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শুরু হয় ধরপাকড়।
আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের সিএইচপি বলছে, দুর্নীতির অভিযোগের দমনপীড়ন ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ এবং দলকে ‘অস্থিতিশীল করার চেষ্টা’। সেই সঙ্গে বিক্ষোভও চালিয়ে যায় দলটি।
তবে সিএইচপির এই অভিযোগ উড়িয়ে এরদোয়ানের সরকার বলছে, বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোয়ান সিএইচপিকে একটি আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত নেটওয়ার্ক বলে অভিহিত করে বলেন, দলটি ‘একটি অক্টোপাসের মতো যা তুরস্কের পুরো দেহ এবং এমনকি বিদেশেও প্রসারিত।
বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখেও সিএইচপির বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে যায় সরকার। সেই সঙ্গে চলতে তাকে ধরপাকড়। বিভিন্ন প্রতিবেদন মতে, এতে এখন পর্যন্ত সিএইচপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। যার মধ্যে ইস্তাম্বুল শহরের মেয়র একরেম ইমামোগলুসহ অন্তত ১৬ জন মেয়র রয়েছেন।
ইস্তাম্বুলের সিএইচপি দলীয় মেয়র একরেম ইমামোগলুকে এরদোগানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হয়। এ কারণে তিনি এখন সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। দুর্নীতির অভিযোগে গত মার্চ মাসে তাকে গ্রেফতার ও কারাদণ্ড দেয়া হয়। ফলে তুরস্কে এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ শুরু হয় এবং লিরার দামে তীব্র দরপতন ঘটে।
এরপর এখন সিএইচপির সামগ্রিক কাঠামো চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে ইস্তাম্বুলের একটি আদালত ২০২৩ সালের কংগ্রেসে অনিয়মের অভিযোগে সিএইচপির ইস্তাম্বুল প্রাদেশিক প্রধান ওজগার চেলিককে পদচ্যুত করার নির্দেশ দেয়। একই আদেশে সিএইচপির সাবেক ডেপুটি চেয়ারম্যান গুরসেল তেকিনকে অন্তর্বর্তী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
তবে তবে সিএইচপি এই রায়কে ‘বাতিল ও অকার্যকর’ বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং তেকিনকে দল থেকে বহিষ্কার করে। এর মাধ্যমে তারা এরদোয়ানের প্রশাসনকে একটি কঠোর বার্তা দেয়। এরপরও সিএইচপির ২০২৩ সালের কংগ্রেস অবৈধ ঘোষণার প্রশ্নে সোমবার শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়।
তার আগে রোববার রাজধানী আঙ্কারার তান্দোয়ান স্কয়ারে জড়ো হয় দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক। সমাবেশ বক্তব্য দেন স্বয়ং ওজগুর ওজেল। বলেন, ‘এই মামলা রাজনৈতিক, মামলার রায়ও রাজনৈতিক। আমাদের সহযোদ্ধারা নিরপরাধ। আদালত শুধু সংবিধানের বিরুদ্ধেই নয় বরং ভবিষ্যতের প্রেসিডেন্ট এবং ভবিষ্যতের সরকারের বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করেছেন। আমরা আমাদের প্রতিবাদ প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে।’ তথ্যসূত্র: আল জাজিরা