News update
  • Can Dhaka’s arms recovery drive ensure peaceful polls?     |     
  • ‘Unhealthy’ air quality recorded in Dhaka Monday morning     |     
  • BD peacekeepers' deaths: UN chief calls Dr. Yunus, offers condolence     |     
  • Bangladesh Plans Rockets, Satellites, and Space Industrial Park     |     
  • India willing to work together inspired by shared sacrifices of past     |     

ইরানের পারমাণবিক বোমা তৈরি ছাড়া উপায় নেই: আলজাজিরার বিশ্লেষণ

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক সংঘাত 2025-06-14, 5:35pm

img_20250614_173517-e5cc19f3b416753c7683a90bca1dfe8c1749900937.jpg




ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। এর ফলে তেহরান পারমাণবিক নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে বলে বিশ্লেষণমূলক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

তেহরানে হামলার পরে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের (আইসিজি) ইরানবিষয়ক বিশেষজ্ঞ আলী ভায়েজ বলেন, পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় উদ্বেগের ব্যাপার হলো, এই ধরনের আঘাত ইরানকে দ্রুত পারমাণবিক বোমা তৈরির দিকে ঠেলে দিতে পারে। 

ইরানের সংস্কারপন্থী ও কট্টরপন্থীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে একটি বিতর্ক ছিল যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো উচিত কি না।

ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক এবং ইনস্টিটিউট ফর ওয়ার অ্যান্ড পিস রিপোর্টিং-এর মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক রেজা এইচ আকবরির মতে, এই হামলা কট্টরপন্থী এবং অতি-কট্টরপন্থীদের অবস্থানকেই সম্ভবত সঠিক প্রমাণ করেছে, যারা বলে আসছিলেন যে পশ্চিমাদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করে ইরান কেবল সময় নষ্ট করছে। তাদের ভাষ্য হলো, সামরিক শক্তিতে দুর্বল অবস্থানে থেকে ইরান কখনই তাদেরকে তুষ্ট করতে পারবে না। 

এর আগে, ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত ইরান এবং বিভিন্ন পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে তার দেশকে প্রত্যাহার করে নিলে তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়।

তারও আগে, বারাক ওবামা ২০১৫ সালে এই চুক্তি করেন, যা পরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে অনুমোদিত হয়েছিল। এর লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করা যাতে তারা বোমা তৈরির পর্যায়ে না পৌঁছাতে পারে। এর বিনিময়ে ইরানের উপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

তখন এই চুক্তিটিকে কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখা হলেও ইসরায়েল শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিল। দশ বছর পর, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরান আবারও একই ধরনের একটি চুক্তিতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছিল। দৃশ্যত মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র আরেকটি আঞ্চলিক যুদ্ধে জড়াতে চায়নি। অন্যদিকে ইরানও নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি খুঁজছিল।

আকবরির মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে ইসরায়েলের এই হামলা স্বল্পমেয়াদে যেকোনো কূটনৈতিক সমাধানের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন, এটা কল্পনা করাও কঠিন যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনি এমন পরিস্থিতিতে কট্টরপন্থীদের পক্ষ নেবেন না। 

অতীতে, ইরান বাইরের আগ্রাসন ঠেকাতে মূলত তার ‌‘প্রতিরোধের অক্ষ’ এর ওপর নির্ভর করত। এই অক্ষের মধ্যে লেবাননের হিজবুল্লাহর মতো সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার ছিল। তবে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে হিজবুল্লাহর সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। নিহত হয়েছেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ।

এ ছাড়া, ডিসেম্বরে এক দশকের বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়ায় আসাদের পতন হয়। তিনি সপরিবারে পালিয়ে আশ্রয় নেন রাশিয়ায়। এর পর থেকে ইরানের পক্ষে সিরিয়ার মাধ্যমে হিজবুল্লাহকে রসদ সরবরাহ করার ক্ষমতাও সীমিত হয়ে পড়ে।

প্রতিরক্ষা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল স্টিফেনসের মতে, ট্রাম্প এখন ইরানের এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে এমন একটি চুক্তিতে আসতে চাপ দিচ্ছেন, যেখানে ইরানকে তার পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি ত্যাগ করতে হবে। 

শুক্রবার, ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ পোস্ট করেছেন যে, ইরানের এখনই একটি চুক্তি করা উচিত, নতুবা দেশটির ‘কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না’ এবং ইসরায়েলের পরবর্তী হামলা আরও ‘ভয়াবহ’ হবে। 

ইরানের জন্য সত্যিই ভালো কোনো বিকল্প নেই জানিয়ে স্টিফেন্স আল জাজিরাকে বলেন, হয় খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক ইস্যুতে আপস করার নির্দেশ দেবেন, অথবা তিনি যদি শক্ত অবস্থানে থাকেন, তাহলে আরও হামলা হবে এবং উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রাণহানি ঘটবে। যাই হোক না কেন, ইরান যদি বোমা তৈরির দিকে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে এখনই তা করা খুব কঠিন হবে।  

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের তুলনায় সামরিকভাবে দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি ছেড়ে দিতে নারাজ।

সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির (সিআইপি) ইরান-বিশেষজ্ঞ নেগার মোর্তাজাভি বলেন, ইরানের কর্মকর্তারা প্রায়শই লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির পরিণতির কথা উল্লেখ করেন। গাদ্দাফি ২০০৩ সালে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে তার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ত্যাগ করতে রাজি হয়েছিলেন।

এই চুক্তিটি হয়েছিল যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর তার তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু করেছিলেন। সে সময় বুশ মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘হয় আমাদের সঙ্গে থাকো, নয়তো আমাদের বিরুদ্ধে।’

গাদ্দাফি তার পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগ করার আট বছর পর, লিবিয়ায় গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীদেরকে সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যা পরে একটি সশস্ত্র বিদ্রোহে রূপ নেয়। পরিণতিতে গাদ্দাফির পতন ও শেষ পর্যন্ত প্রাণ হারাতে হয়। লিবিয়ার নেতার এই পরিণতি মাথায় রেখেই ইরান হয়ত আর সেই পথে যেতে চাইবে না। এর ফলে ইরান আরও দ্রুত তার পারমাণবিক কর্মসূচি সম্প্রসারণের চেষ্টা করতে পারে। আরটিভি