News update
  • Chief Adviser Dr Yunus pays homage to martyred intellectuals     |     
  • Martyred Intellectuals Day: A Nation’s Loss and Resolve     |     
  • EC seeks enhanced security for CEC, ECs, election officials     |     
  • Humanoid robots take center stage at Silicon Valley summit, but skepticism remains     |     
  • ‘Unhealthy’ air quality was recorded in Dhaka on Sunday     |     

ভারত ও পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলার যে চিত্র দেখলেন দুই সীমান্তের সাধারণ মানুষ

বিবিসি বাংলা সংঘাত 2025-05-07, 9:11pm

56456547-b884aa1881cd9bdf1f6349c051f39e841746630663.jpg




পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে বুধবার ভোরে যখন বিকট শব্দে তার বাড়ি কেঁপে ওঠে তখন মোহাম্মদ ওয়াহিদ ছিলেন গভীর ঘুমে।

"আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আরও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করলে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা শুরু হয়," বিবিসিকে বলছিলেন তিনি।

বিছানা থেকে লাফিয়ে নামেন এবং পরিবারের অন্যদের নিয়ে প্রতিবেশীদের সাথে বাইরের দিকে দৌড়ে যান তিনি।

"বাচ্চারা কাঁদছিলো, নারীরা এদিক-ওদিক দৌড়চ্ছিল। তারা নিরাপদ জায়গা খোঁজার চেষ্টা করছিলো।"

মি. ওয়াহিদ বাস করেন মুজাফফরবাদে। এটি পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের রাজধানী। এর অন্তত তিনটি জায়গায় বুধবার ভোরে ভারতীয়রা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

ভারতের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ভারত-শাসিত কাশ্মীরে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যার জবাবে এই হামলা চালিয়েছে।

পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকেই কাশ্মীরে হামলার জন্য দায়ী করছে ভারত। এতে কৌশলগত সমর্থন ছিল ইসলামাবাদের- এমন অভিযোগও করেছে দেশটি।

পাকিস্তান সবসময়ই এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

ভারত ও পাকিস্তান শাসিত উভয় কাশ্মীরে প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসির কাছে ভারতের হামলা ও পাকিস্তানের গোলাবর্ষণের পরবর্তী পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন।

পাকিস্তান বলেছে তাদের ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরও ৪৬ জন।

ভারতীয় সামরিক বাহিনী আরও জানিয়েছে সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে কমপক্ষে ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৩ জন আহত হয়েছে।

'চা বানানোর সময় মৃত্যু'

রুবি কাউর নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে ভারতীয় পুঞ্চ জেলায় বাস করতেন এবং ভারতীয়দের মধ্যে যারা নিহত হয়েছেন তিনি তাদের একজন।

তার চাচা বুয়াভা সিং বিবিসিকে বলেছেন যে রাত পৌনে দুইটার দিকে মিস কাউরের বাসার কাছে মর্টার শেল আঘাত হানে। তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং তার কন্যা আহত হয়।

"তার স্বামীর শরীর ভালো যাচ্ছিলো না। তিনি উঠেছিলেন স্বামীর জন্য চা বানাতে। ঠিক তখনই তার ঘরের একেবারে কাছেই মর্টার শেলটি আঘাত হানে," বলছিলেন তিনি।

তার মতে বুধবার ভোরে যেমন ভারী গোলাবর্ষণ হয়েছে তেমনটি তারা 'আগে আর দেখেননি'।

ওই এলাকায় কোনো কমিউনিটি বাঙ্কার ছিল না। ফলে সেখানকার মানুষজনকে তাদের ঘরবাড়িতেই নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে হয়েছে।

"গোলার টুকরো তার মাথায় এসে লেগেছিলো। ব্যাপক রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো তখন। দ্রুতই আমরা কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়," মি. সিং বলছিলেন।

ওই এলাকার আরেকজন অধিবাসী জানিয়েছেন, তারা বুধবার রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরেই বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন।

"শহর এবং নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি এলাকাজুড়ে ছিল আতঙ্কময় পরিস্থিতি," ফোনে বলছিলেন ড. জামরুদ মুঘল।

"সারা রাত মানুষ ঘুমাতে পারেনি। লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য দৌড়েছে। মূল শহরে ফরেস্ট অফিসের কাছে গোলা আঘাত হেনেছে এবং তাতে সেখানকার কাছাকাছি স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে," তিনি বলেন।

'এরপর কী হবে তা নিয়ে আতঙ্ক'

পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের মুহাম্মদ ইউনিস শাহ বর্ণনা করেছেন- কীভাবে ভারতীয়দের দিক থেকে আসা চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নানগাল সাহাদান শহরতলী এলাকার একটি এডুকেশনাল কমপ্লেক্সে আঘাত করে। সেখানে এর জেরে একটি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে।

"সেখানে বাচ্চাদের স্কুল ও কলেজ, একটি হোস্টেল এবং একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছিল," বলেছেন তিনি।

উদ্ধার অভিযান চলার সময় স্থানীয়রা জানান যে তারা সহিংসতা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এবং এরপর কী হবে তা নিয়ে তারা আতঙ্কিত।

"আমরা আতঙ্কিত। কী করতে হবে তা আমরা জানি না," বলছিলেন মি. ওয়াহিদ।

"লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছে এবং অনিশ্চয়তার অনুভূতি সবার মধ্যে"।

তার এলাকারই শাহনেওয়াজও একই কথা বলছিলেন। তিনি ও তার পরিবার 'মরিয়া হয়ে নিরাপদ জায়গার খোঁজ করেছেন' বলে জানান তিনি।

"আমরা বুঝতে পারছিলাম যে কিছু একটা হতে যাচ্ছে। আর এখন আমরা উত্তেজনা আরও বাড়ার আশঙ্কার মধ্যে আছি"।

দিল্লি জোর দিয়ে বলেছে, বুধবার রাতে তাদের পদক্ষেপ ছিল সুনির্দিষ্ট, পরিমিত এবং চরিত্রের দিক থেকে উত্তেজনা বাড়ানোর মতো নয়।

যদিও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের স্থানীয়রা বলছেন যেসব এলাকা আক্রান্ত হয়েছে, তার মধ্যে তাদের মসজিদ ও আবাসিক এলাকাও রয়েছে।

মি. ওয়াহিদ বিবিসিকে বলেছেন তাদের মসজিদে কেন হামলা হলো সেটি তিনি বুঝতেই পারছেন না। তার দাবি সেখানে হামলায় কয়েক ডজন নারী পুরুষ আহত হয়েছে।

"এটা বোঝা কঠিন। এটা ছিল সাধারণ একটি মসজিদ যেখানে আমরা দিনে পাঁচবার নামাজ পড়তাম। সেখানে সন্দেহজনক কিছু আমি কখনো দেখিনি।"

যদিও দিল্লি জোর দিয়ে বলেছে, বুধবার তাদের লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসীদের স্থাপনাগুলো এবং 'বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের' ভিত্তিতে এগুলোকে বাছাই করা হয়েছে।