News update
  • BSF halts fencing at Joypurhat border after BGB intervention     |     
  • 30 NCP leaders urge Nahid Islam not to form alliance with Jamaat     |     
  • Tarique offers fateha at graves of Pilkhana martyrs, father-in-law     |     
  • Navy detains 11 over smuggling diesel, cement to Myanmar     |     
  • Investors stay away as stocks turnover drops 7% despite index gains     |     

ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরীয় সেনা, যেভাবে পাল্টে দেবে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক সংঘাত 2024-11-01, 8:58am

fertertert-051762327f435ee96c22fc7f9ea65c4e1730429898.jpg




যখন প্রাণপণ যুদ্ধে লিপ্ত রাশিয়া ও ইউক্রেনের সৈন্যরা ঠিক তখনই নাটকীয়ভাবে এই লড়াইয়ে রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধের ময়দানে হাজার হাজার কোরীয় সেনা হাজির হয়েছেন বলে দাবি ইউক্রেনের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের। একই দাবি করে আসছে ইউক্রেনও। তবে এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কোনো কিছু বলেনি রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া। সত্যিই যদি রাশিয়ার পক্ষে সেনা পাঠিয়ে থাকে উত্তর কোরিয়া তা হলে এ যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি অনেকটাই পাল্টে যাবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।

জানা গেছে, রাশিয়ার হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে গত আগস্ট মাসে ইউক্রেন সীমান্তে অবস্থিত রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল দখল করে নেয় ইউক্রেনের সেনারা। পেন্টাগন দাবি করেছে, কুরস্ক অঞ্চলে উত্তর কোরীয় সেনাদের মোতায়েন করেছে রাশিয়া।

এর আগে ইউক্রেনের গোয়েন্দা বিভাগও লড়াইয়ের বিভিন্ন ফ্রন্টে উত্তর কোরীয় সেনাদের উপস্থিতির বিষয়টি জানায়। এমনকি লড়াইয়ে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক নগরীর কাছে ছয় উত্তর কোরীয় সেনার প্রাণহানির দাবি করেন উত্তর কোরিয়ার শত্রু রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং হিউন।

পাশাপাশি অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেড় হাজার উত্তর কোরীয় সেনাকে জাহাজে করে রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা। যুদ্ধক্ষেত্রে উত্তর কোরীয় সেনা মোতায়েনের দাবি করে রাশিয়ার অভ্যন্তরে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর অনুমতি দেয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

যদিও যুদ্ধক্ষেত্রে উত্তর কোরীয় সেনাদের উপস্থিতির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউক্রেন তাদের সপক্ষে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রমাণ প্রদর্শন করেনি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সামরিক সহযোগিতার বিষয়টি পুরোপুরি নাকচ করা যায় না।

এ ব্যাপারে আলোচনা আরও জোরদার হয় গত জুন মাসে উত্তর কোরিয়ায় রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঐতিহাসিক সফরে। এই সফরে মস্কো ও পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির ধারাগুলো যদিও প্রকাশ করা হয়নি। তবে ধারণা করা হয় এই সামরিক চুক্তির মধ্যে এ রকম ধারাও উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে এক পক্ষ আক্রান্ত হলে অপর পক্ষ তাকে সামরিক সহযোগিতা দেবে।

মূলত চুক্তির সম্ভাব্য এই ধারার পরিপ্রেক্ষিতেই ইউক্রেনের রণাঙ্গনে রাশিয়ার সহায়তা উত্তর কোরীয় সেনাদের উপস্থিতির ব্যাপারে ইউক্রেন ও তার মিত্রদের দাবি জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে ইউক্রেন ও তার মিত্রদের দাবি সত্ত্বেও ক্রেমলিন বরাবরই ইউক্রেন রণাঙ্গনে উত্তর কোরীয় সেনাদের উপস্থিতির বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। এ ব্যাপারে ক্রেমিলেন মুখপাত্র ডিমিত্রি পেসকোভ সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টিকে ‘আরেকটি মিথ্যা প্রচারণা’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

তবে এই জল্পনা-কল্পনাকে উসকে দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজে। সম্প্রতি ব্রিকস সম্মেলনে এক সাংবাদিক পুতিনকে জিজ্ঞেস করেন ইউক্রেনের রণাঙ্গনে উত্তর কোরীয় সেনাদের উপস্থিতি সংক্রান্ত স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি প্রসঙ্গে। সরাসরি উত্তর না দিয়ে জবাবে পুতিন বলেন, যদি ছবি থেকে থাকে, তবে তাতে কিছু তো প্রতিফলিত হবেই। অপরদিকে উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে মুখ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে।

ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছে উত্তর কোরিয়া গোপনে রাশিয়ায় অস্ত্র পাঠাচ্ছে। অবশ্য পিয়ংইয়ং ও রাশিয়া তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। তবে রাশিয়ার মিডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) এক সফরে রাশিয়ায় অবতরণ করেন উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো সন হুই। তবে এই সফরের এজেন্ডা কি সে ব্যাপারে মুখ খোলেনি কোনো পক্ষই।

এদিকে যদি ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে উত্তর কোরীয় সেনাদের উপস্থিত রাশিয়া স্বীকার করে নেয়, তবে তা রণাঙ্গনে প্রভাব ফেলার পাশাপাশি ব্যাপক প্রভাব ফেলবে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও ভূরাজনীতিতে। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও এই যুদ্ধে বহু আগে থেকেই বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবে দুই পক্ষেই লড়াই করছেন।

যদি উত্তর কোরীয় সেনাদের উপস্থিতি স্বীকার করে নেয় মস্কো কিংবা পিয়ংইয়ং। তবে এ লড়াইয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার পাশাপাশি সরকারিভাবে তৃতীয় রাষ্ট্র হিসেবে উত্তর কোরিয়ার অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত হবে। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ইউক্রেনের যুদ্ধে আরও অন্যান্য দেশের সরাসরি অংশ নেয়ার আশঙ্কার বিষয়টিও উড়িয়ে দেয়া যায় না। সেক্ষেত্রে ধীরে ধীরে ইউক্রেন যুদ্ধ আরও বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক এডওয়ার্ড হোয়েল আল জাজিরাকে বলেন, যুদ্ধের বাইরে থেকে রাশিয়াকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহকারী দেশ থেকে উত্তর কোরিয়া এর মাধ্যমে বর্তমানে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনে যুদ্ধের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়ার সেনাদের ইউক্রেনের রণাঙ্গনে উপস্থিতির বিষয়টি যুদ্ধক্ষেত্রের বর্তমান ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ ইতোমধ্যেই যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার বিপুল সংখ্যক সেনা হতাহত হয়েছেন। এ সংখ্যা ইউক্রেনীয়দের দাবি অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ছয় লাখ। তবে নিরপেক্ষভাবে এর সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলেও রাশিয়ার একটি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, রুশ সেনাদের মৃত্যুর সংখ্যা ৭১ হাজারের কম নয়। এ অবস্থায় যুদ্ধক্ষেত্রে উত্তর কোরীয় সেনাদের ‍উপস্থিতি রাশিয়ার সেনাদের ওপর চাপ কমাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

পাশাপাশি ইউক্রেনের রণাঙ্গনে উত্তর কোরিয়ার অংশগ্রহণের প্রভাব কোরীয় উপদ্বীপে চলমান উত্তেজনাতেও পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ইতোমধ্যেই গত ১৫ অক্টোবর উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী একটি সড়ককে বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেয় উত্তর কোরিয়া। তার কয়েক দিন আগে নিজেদের ভূখণ্ডে কয়েকটি দক্ষিণ কোরীয় ড্রোনের উপস্থিতির দাবি করে পিয়ংইয়ং।

বিশ্লেষকদের ধারণা, ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়াকে সরাসরি সহায়তা দেয়ার বিনিময়ে কোরীয় উপদ্বীপের উত্তেজনায় রাশিয়াকে আরও সক্রিয়ভাবে টেনে আনার চেষ্টা করবে উত্তর কোরিয়া। এ ব্যাপারে এডওয়ার্ড হোয়েল আল জাজিরাকে বলেন, ‘সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়টি হলো উত্তর কোরীয় সেনাদের বিনিময়ে হয়তো রাশিয়া পিয়ংইয়ংকে অত্যাধুনিক সামরিক প্রযুক্তি সরবরাহ করতে পারে। যা ভবিষ্যতে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে উত্তর কোরিয়া।

এদিকে ইউক্রেনের রণাঙ্গনে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের উপস্থিতির দাবি করে পশ্চিমা মিত্রদের কাছে তাদের দেয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার অভ্যন্তরে ব্যবহারের দাবি জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যদিও পশ্চিমারা এ ব্যাপারে এখনও কিয়েভকে সবুজ সংকেত দেয়নি। তবে ইউক্রেন হয়তো এই বিষয়টিকে পুঁজি করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অনুমতি দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমাদের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

যদিও এ ধরনের হামলার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার অভ্যন্তরে পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্রের হামলার কঠোর জবাব দেয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি।

বিশ্লেষকদের মতে, সত্যিই যদি রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অনুমতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা, তবে আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে এই যুদ্ধ। যা ভোগাবে আশপাশের সব পক্ষকেই।  সময় সংবাদ