
কড়া নিরাপত্তায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে করে কারাগারে পাঠানো হয় ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে। ছবি ভিডিও থেকে নেয়া
গত ১৭ বছরে বিভিন্ন সময় গুম-অপহরণ, নির্যাতন, খুন ও জুলাইয়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিন মামলায় ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় স্থাপিত সাব-জেলে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এই সাব-জেল কারা কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত হবে, যা সার্বিকভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন।
এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে তাদের জন্য আলাদা সাব-জেল স্থাপনের কারণ কী?
বুধবার (২২ অক্টোবর) সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়ে সেনা সদস্যরা এসেছেন, ওনাদের নিয়ে আসা হয়েছে। সেনা প্রশাসন বা সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, সেনাবাহিনীর প্রধান যেভাবে সহযোগিতা করেছেন, এটা অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার। তারা আইনের শাসনের প্রতি যে শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়েছেন, সেটা আমরা খুবই পজিটিভলি (ইতিবাচকভাবে) দেখছি।
তবে তাদের সাব-জেল বা অন্য কোথায় রাখা হবে, সেটা দেখা ও তদারকির দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। ওনারা যেটা যথোপযুক্ত মনে করবেন, সেটাই করবেন।
এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ১৫ জন আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। আমরা তিনটি আবেদন করেছি। এর মধ্যে জামিন আবেদন ২০ নভেম্বর শুনানি হবে। এছাড়া প্রিভিলেজ কমিউনিকেশন ও তাদের যেন সাব-জেলে রাখা হয় এটাও চাওয়া হয়।’
ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় স্থাপিত সাব-জেল নিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘এ বিষয়টি জেল কর্তৃপক্ষ দেখবেন। তাদের সেনানিবাসে যে সাব-জেল (উপ কারাগার) ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে নেয়া হয়েছে।’
এদিকে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কারা কর্তৃপক্ষ ঠিক করবে আসামিরা কোন কারাগারে থাকবে।
তিনি বলেন, তাদের কাস্টডিতে প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার মানে কারা কর্তৃপক্ষের অধীনে চলে যাবেন তারা। কারা কর্তৃপক্ষ তাদের কোথায় রাখবেন, অর্থাৎ কোন জেলে রাখবেন কোন সাব-জেলে রাখবেন, ঢাকায় রাখবেন না চট্টগ্রামে পাঠাবেন বা অন্য কোথাও রাখবেন এই অথোরিটি কারা কর্তৃপক্ষের অর্থাৎ সরকারের।
সাব-জেলে নিরাপত্তা কেমন
আসামিদের সেনানিবাসে একটি সাব-জেলে রাখা হবে বলে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। রানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের অধীনে এটি পরিচালিত হবে। এরইমধ্যে দায়িত্ব বুঝে নেয়া হয়েছে। আজকের জন্য ৩৫ জন কারারক্ষী সেখানে নিয়োজিত থাকবেন।
সহকারী কারা মহাপরিদর্শক মো. জান্নাত-উল ফরহাদ ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, আমরা বন্দির সংখ্যা হিসেবে কারারক্ষী নিয়োজিত করি। আজকের জন্য ৩৫ জন নিয়োজিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী কম বেশি হতে পারে।
অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তা
এদিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল ১০টার দিকে এই সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে থাকা কারা কর্তৃপক্ষের প্রিজনভ্যানে তোলা হয়।
১৫ সেনা কর্মকর্তা হলেন- র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে), র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত বিন আলম। ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।