
Tarique Rahman on way back home from London. Photo taken from his Facebook post put from the Biman commercial flight.
মোস্তফা কামাল মজুমদার
বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আজ দুপুরে ঢাকায় অবতরণ করবেন ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তথাকথিত ১/১১ শাসকদের দ্বারা বাধ্য হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিতসার জন্য তিনি দেশ ত্যাগ করেছিলেন।
বিমানটি প্রথমে সিলেটে অবতরণ করবে এবং এক ঘন্টা পর ঢাকায় আসবে। গত মধ্যরাতে তিনি লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে হাজার হাজার বাংলাদেশী প্রবাসীকে বিদায় জানিয়ে রওনা হন। যারা নেতার পরামর্শ অমান্য করে রাতের ঠান্ডার পরোয়া না করে তারা সেখানে গিয়েছিলেন।
তারেক রহমানের আগমন হবে ১৭ বছর পর দেশে তার ব্যক্তিগত উপস্থিতির প্রথম প্রহর। কার্যতঃ রাজনৈতিক এবং মানসিকভাবে তিনি সর্বদা বাংলাদেশে উপস্থিত ছিলেন। তারেক রহমান তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে বিএনপি পার্টি মেশিনকে পুনর্গঠিত করেছেন, আধুনিক ভিডিও কনফারেন্সিং প্রযুক্তির কল্যানে, ঘৃণ্য নির্যাতনকে উপেক্ষা করে।
২০২২ সালে ওয়েস্টিন ঢাকা হোটেলে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিএনপি নেতা রাষ্ট্রীয় কাঠামো মেরামতের ২৭ দফা সনদ (কাঠামোগত সংস্কার) ঘোষণা করেন, যা পরবর্তীতে বিএনপির জোট শরিকদের মতামত নিয়ে ৩১ দফা কর্মসূচিতে রূপান্তরিত হয়।
চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার সময় তারেক রহমান তার পায়ে হাঁটতে বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বাধীনভাবে নাড়াচাড়া করতে পারতেন না। বন্দী অবস্থায় অমানবিক নির্যাতনের ফলে তাঁর এই শারীরিক ক্ষতি হয়। সামরিক শাসকরা বলেছিলেন যে রাজনীতিতে জড়িত না হওয়ার শর্তে তাকে বিদেশ যেতে দেওয়া হয়েছিল। তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান এই নির্যাতনের ফলে আহত হয়ে অকাল মৃত্যুবরণ করেন। তাদের মা এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়া ছয় বছর ধরে রাষ্ট্রের সাজানো কারাবাসের পর শারীরিকভাবে পঙ্গু হয়ে গেছেন।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের উপর এই বর্বর নির্যাতন কেন? ১১ জানুয়ারী ২০০৭ সালে ১/১১-এর পট-পরিবর্তন যখন সংঘটিত হয়, তখন তাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন না। বিদেশী শক্তি এবং তাদের স্থানীয় সহযোগীদের সমর্থিত লোকেরা বাংলাদেশের তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের আর্থিক বা অন্য কোনও অন্যায় প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। তবুও তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল এবং কারসাজি করে কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল। বিশেষ জেলা জজ মোতাহার হোসেন তারেক রহমানকে অর্থ পাচারের অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়ার পর দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, কারণ তিনি তার আদালতে দেওয়া একটি তথ্যপ্রমান বিহিন লিখিত রায়, কয়েক মাস ধরে প্ররোচনার পরও, পড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
১/১১-এর মূল পরিকল্পনাকারীদের নির্দেশে কাজ করা একজন কর্মকর্তা তারেক রহমানের অসততার চিহ্ন খুঁজে না পেয়ে মন্তব্য করেছিলেন, “দেখো এই ছেলেটি কত চালাক। তার কোনও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই।”
যখন তাঁরা এ সমস্ত অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন, তখন আমরা পরিবারের সদস্যদের একাকীত্বের অনুভূতি সম্পর্কে অবগত ছিলাম। খালেদা নিজেই গণমাধ্যমকে বলেছেন, চাপের মুখে দেশ ছেড়ে যেতে রাজি না হলে নির্দয় অফিসাররা তার ছেলেদের তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। খালেদা তাদের চাপে মাথা নোয়াননি।
বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসনামলে ভার্চুয়াল বক্তৃতা এবং বিবৃতির মাধ্যমে তারেক রহমান যখন সাফল্যের সাথে দল পুনর্গঠন করে যাচ্ছিলেন, তখন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ থেকে সংবাদ মাধ্যমে তার বক্তব্য প্রকাশ নিষিদ্ধ করার নির্দেশ জারি করা হয়। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে জনতার অভ্যুত্থানের বিজয় না হওয়া পর্যন্ত এই মিডিয়া ব্ল্যাকআউট কার্যকর ছিল।
ব্ল্যাকআউট অদম্য তারেক রহমানকে থামাতে পারেনি। গৃহে বা বহিরঙ্গ্নে রাজনৈতিক সভাগুলিতে তার ভার্চুয়াল ভাষণ, প্রায়শই ইন্টারনেট সিগন্যাল ধীর বা বন্ধ করে দেওয়া সত্বেও, আন্দোলন জুড়ে অব্যাহত ছিল।
৫ আগস্ট থেকে তারেক রহমান গণমাধ্যমে পুরোপুরি উপস্থিত আছেন। কিছু বাধ্যবাধকতার কারণে তাকে গতকাল পর্যন্ত লন্ডনে থাকতে হয়েছে। আজ ২৫ ডিসেম্বর পবিত্র বড়দিনে, জনতার নেতা, সাহসি যোদ্ধা, স্বশরীরে দেশে ফিরে এসেছেন।