News update
  • Chief Adviser Dr Yunus pays homage to martyred intellectuals     |     
  • Martyred Intellectuals Day: A Nation’s Loss and Resolve     |     
  • EC seeks enhanced security for CEC, ECs, election officials     |     
  • Humanoid robots take center stage at Silicon Valley summit, but skepticism remains     |     
  • ‘Unhealthy’ air quality was recorded in Dhaka on Sunday     |     

খোঁজ নেয়নি সন্তানরা, বৃদ্ধাশ্রমে বাবা-মায়ের অশ্রুসিক্ত ঈদ

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিবিধ 2025-06-08, 7:56am

d150915cd30dc77e775f9df3caf40a4263b2b11e18cb3527-7e1520acc826076de031ac25750059671749347791.jpg




বৃদ্ধাশ্রমে আছে ঈদ সামগ্রী, কিন্তু নেই প্রিয়জনের ভালোবাসা। আর তাই চোখের জলে নিঃসঙ্গ ঈদ পালন করছেন তারা। বৃদ্ধাশ্রমের চার দেয়ালের মাঝে প্রিয় সন্তানের জন্য মুখ লুকিয়ে নীরবে কাঁদছেন বাবা-মা। অতীতের সুখ-গল্প আঁকড়ে ধরে বুকে পাথর চেপে জীবনযাপন করছেন। সময় 


আজ বড় অসহায় তারা। ঈদুল আজহার দিনও খোঁজ নেয়নি সন্তানরা। অথচ জীবনের সব সুখ তারা বিসর্জন দিয়েছেন সন্তানের জন্য। ফরিদপুরের শান্তি নিবাসে চোখের জলে নিঃসঙ্গ ঈদ কাটছে বাবা-মার। সন্তানের প্রতি ক্ষোভ-অভিযোগ থাকলেও প্রকাশ করছেন না, বুকের মধ্যে চেপে রাখছেন। এতকিছুর পরেও বৃদ্ধ মা-বাবারা চান তাদের সন্তান থাকুক দুধে-ভাতে।



বকুল বেগম। বয়স ষাটোর্ধ্ব। অসুস্থ অবস্থায় পরে রয়েছেন শান্তি নিবাসে। নিজ হাতে খেতে পারেন না, তাকে খাইয়ে দিতে হয়। কথাও তেমন বলতে পারেন না। তারপরও কথা বলার চেষ্টা করেন। বকুল বেগম সময় সংবাদকে জানান, বিয়ে হয়েছিল। স্বামীর আগের পক্ষের সন্তান ছিল। ওই সন্তানদের আদর যত্নও করতেন তিনি। কিন্তু সৎ মায়ের কপালে যা থাকে সেটাই ঘটেছে তার জীবনে। এক পর্যায়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয় সন্তানরা, পরে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে আশ্রয় হয় শান্তি নিবাসে। দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন এখানে। কেউ খোঁজ নেয় না তার।



আরেকজন লতিফ শিকদার। বয়স ৬০ বছর। তিনি শান্তি নিবাসে রয়েছেন এক বছর ধরে। লতিফ শিকদার কথা বলতে পারেন না। তবে কিছু বললে তিনি শুনতে পারেন। শান্তি নিবাসে কর্মরতদের কাছ থেকে জানা যায় তার সম্পর্কে।



লতিফ শিকদারের বাড়ি নড়াইল জেলায়। দর্জির কাজ করে সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। হঠাৎ করেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হন। এরপর আবার স্টোক করেন, ওই সময় থেকে তিনি কথা বলতে পারেন না। ছেলেরা হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়, কিন্তু এরপর আর কোনো খবর নেয়নি। কিছুটা সুস্থ হয়ে প্রতিবেশীর মাধ্যমে শান্তি নিবাসে এসে আশ্রয় নেন। বর্তমানে তিনি এখানেই রয়েছেন, তবে কথা বলতে পারেন না। সন্তানদের কথা বলতেই তার মুখ মলিন হয়ে যায়।

 

আরেকজন সাজ্জাদ শেখ। তিনি সরকারি চাকরি করতেন। স্ত্রী, সন্তানরা সবকিছু লিখে নিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। সব হারিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন তিনি। এরপর ভবঘুরে সাজ্জাদের ঠাঁই হয় শান্তি নিবাসে। আগের মতো আর সন্তানদের হাতে হাত রেখে যেতে পারেন না ঈদের কেনাকাটা করতে। শান্তি নিবাসের চার দেয়ালের মাঝে মুখ লুকিয়ে নীরবে ফেলেন চোখের পানি। গত ৮ বছর ২ মাস ধরে আছেন শান্তি নিবাসে।



সাজ্জাদ শেখ সময় সংবাদকে বলেন, ‘সবই আমার কপাল। বিয়ে করার পর স্ত্রীর নামে সব সম্পত্তি লিখে দিয়েছিলাম। স্ত্রী ও সন্তানরা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিল। এরপর দ্বিতীয় বিয়ে করি, সেই স্ত্রীও সম্পত্তি লিখে নিয়ে আমাকে বের করে দিল। পথে পথে ঘুরতে ঘুরতে ঠাঁই হলো শান্তি নিবাসে।’



তিনি বলেন, ‘সন্তান জন্ম দিয়ে ভুল করেছি, সম্পত্তি করেও ভুল করেছি। এত সম্পদ না থাকলে আমার সাথে এমনটি হতো না। এখন আমার কেউ খোঁজ নেয় না। তারা অনেক ভালো আছে। আমিও এখানে ভালো থাকার চেষ্টা করি। ভালোই আছি, ভুলের খেসারত দিচ্ছি। ছেলে মন্ত্রী হলেও তার কাছে যাবোনা। এখানে অনেক ভালো আছি।’



সাজ্জাদ শেখ, বকুল বেগমই নন, শান্তি নিবাসে রয়েছেন ময়না বেগম, ঝড়ী বেগম, আয়শা খাতুন, মনা সহ অনেকেই। সবারই গল্প একই রকম।



শান্তিনিবাসে পরিবারহীন বাবা-মায়ের সংখ্যা ১৫ জন। তাদের সবার ঈদ কাটছে পরিবারহীন। যাদের জীবনের সমস্ত সুখ বিসর্জন দিয়ে এসেছেন সন্তানের জন্য। সেই সন্তানদের ছাড়া শান্তিনিবাসে যত্নে থাকলেও ভালো নেই বাবা-মা।



শনিবার (০৭ জুন) ঈদুল আযহার দিন সকালে ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা এলাকায় অবস্থিত সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত শান্তি নিবাসে গিয়ে দেখা যায় মলিন মুখে ঈদ উদযাপন করছেন তারা। ঈদের দিন সকালে তাদের দেয়া হয়েছে উন্নত মানের খাবার। সকালে খিচুড়ি, সেমাই ও ডিম। দুপুরে পোলাও, গরুর মাংস, খাসির মাংস, রোস্ট ও মিষ্টি। রাতেও রয়েছে উন্নতমানের খাবার। দেয়া হয়েছে নতুন পোশাক।


শান্তি নিবাসে বেশিরভাগই পরিস্থিতির শিকার হয়ে এসেছেন। অনেকেই সন্তানদের অবহেলার শিকার। একজন মা সারাজীবন সন্তানদের লালন-পালন করে বড় করেছেন, কিন্তু বয়সের ভারে যখন তিনি অসহায় হয়ে পড়লেন, তখন তার জায়গা হলো বৃদ্ধাশ্রমে। বাবাদের গল্পও আলাদা নয়, যারা একসময় পরিবারের স্তম্ভ ছিলেন, আজ তারা যেন সেই পরিবারের বোঝা হয়ে গেছেন।


বিশেষ দিনগুলোতে হতাশা আর শূন্যতা নিয়ে সন্তানের স্মৃতি হাতড়ে বেড়ান বৃদ্ধাশ্রমে থাকা এসব মানুষ। সন্তানদের অপেক্ষায় থাকেন, হয়তো কেউ আসবে, হয়তো একটু খোঁজ নেবে এই আশায় তাদের দিন কাটে। কিন্তু সেই অপেক্ষার শেষ হয় না।

শান্তি নিবাসে বর্তমানে ১০ জন নারী ও ৫ জন পুরুষ রয়েছেন। এর মধ্যে তিন জন খুবই অসুস্থ। তাদের চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে এখানে। এর মধ্যে দুই জন নারী ও একজন পুরুষ কথা বলতে পারেন না।

শান্তি নিবাসে ময়না বেগম রয়েছেন দীর্ঘদিন। কথা হয় তার সাথে। ময়না বেগম সময় সংবাদকে জানান, তিনি বিয়ে করেননি। ভাইয়ের সাথেই থাকতেন। একপর্যায়ে ভাইয়ের স্ত্রী তার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন। তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা ঘাটে দিন কাটে তার। এক সময় ঠাঁই হয় শান্তি নিবাসে।

ময়না বেগম বলেন, ‘বাপের সম্পত্তি থেকেও আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। খারাপ ব্যবহার করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এখানে ভালো আছি। ঈদের আনন্দ এখানকার সবার সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছি। পরিবারের সদস্যদের কথা মনে পড়ে, কিন্তু কী করবো। যে কয়টা দিন বেঁচে আছি এখানেই কাটিয়ে দেব। সবকিছু ভুলে গিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করছি।’

আরেক বাসিন্দা আয়শা বলেন, ‘কেউ নেই আমার। এখানে আছি অনেকদিন। ঈদের আনন্দ এখানকার সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিয়েছি। সকালে নতুন পোশাক দিয়েছে, তা পরেছি। সেমাই দিয়েছে, খিচুরি ও ডিম খেয়েছি। দুপুরে মাংস, ভাত, মিষ্টি দিয়েছে। রাতেও ভালো খাবার আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু ঈদের দিনই নয়, সারা বছরই এখানে ভালো খাবার দেয়, যত্ন করে। অনেক ভালো আছি। কেউ নেই মনে হয় না। অসুস্থ হয়ে পড়লে এখান থেকেই চিকিৎসা দেওয়া হয়।’

ফরিদপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এ এস এম আলী আহসান জানান, শান্তি নিবাসে ১০ জন নারী ও ৫ জন পুরুষ রয়েছেন। এর মধ্যে দুই জন নারী ও একজন পুরুষ খুবই অসুস্থ, তাদের সুস্থ করতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যারা রয়েছেন তাদের থাকা-খাওয়া, চিকিৎসাসহ সব ব্যবস্থা এখান থেকেই করা হয়।

তিনি জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে সব নিবাসীকে নতুন কাপড় দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঈদের দিন সকালে খিচুরি, রুটি-সেমাই, মিষ্টিসহ বিভিন্ন খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুপুরে ও রাতে পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরু ও খাসির মাংসসহ বিভিন্ন খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।

উপ-পরিচালক জানান, এখানে যারা রয়েছেন তাদের নিজের বাবা-মায়ের মতো করেই যত্ন করা হয়। তাদের কখনো বুঝতে দেওয়া হয়না যে তারা বাড়িতে নেই, এখানে তাদের বাড়ির মতো করেই যত্ন করা হয়।