News update
  • "Govt may not stay in power working as “broker” of a foreign country”     |     
  • Arson attack forces UNRWA to shutter East Jerusalem place     |     
  • Husband arrested from Benapole for killing wife for dowry      |     
  • In Nairobi, Guterres reiterates appeal for end to Gaza war     |     
  • BGB seizes snake venom worth Tk 3 cr from Dinajpur border     |     

এমএইচ ৩৭০: ইতিহাসের 'সবচেয়ে রহস্যময়' বিমান দুর্ঘটনার পেছনে যেসব তত্ত্ব

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক বিবিধ 2024-03-08, 7:52pm

lfjiso9f8-154e3ad5c7445d1b8348700f2606f3f51709905956.jpg




বিমান চলাচলের ইতিহাসের ‘সবচেয়ে রহস্যময়’ ঘটনাগুলোর তালিকা তৈরি করতে বললে অনেক বিশেষজ্ঞই মালয়েশিয়ার এমএইচ ৩৭০’র হারিয়ে যাওয়াকে নিঃসংকোচে তালিকার শীর্ষে রাখবেন। দশ বছর আগে ২০১৪ সালের আটই মার্চ মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে বেইজিংয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করার ৪০ মিনিটের মধ্যে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিমানটির কী হয়েছে, তা আজও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

গত দশ বছরে বিমানটি ‘অদৃশ্য’ হয়ে যাওয়ার পেছনে সম্ভাব্য শত শত কারণ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা, গবেষণা হয়েছে। বিমান ছিনতাই, গুপ্তচরবৃত্তি, পাইলটের অসুস্থতা, জঙ্গি হামলা, আন্তঃদেশীয় রাজনীতিসহ বিভিন্ন তত্ত্ব নিয়ে হয়েছে আলোচনা-পর্যালোচনা। লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে বছরের পর বছর একাধিক দেশের কর্তৃপক্ষ খোঁজ চালিয়েছে বিমানের ধ্বংসাবশেষের। কালেভদ্রে বিমানটির কিছু ভাঙা অংশের খোঁজও পাওয়া গেছে।

কিন্তু এত সব প্রচেষ্টার পরও এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে কেউ জানাতে পারেনি যে বিমানটি এবং সেটিতে থাকা ২৩৯ জন আরোহীর ভাগ্য আসলে কী ঘটেছিল।

যেভাবে ‘গায়েব’ হয়ে গিয়েছিল বিমানটি

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে ২০১৪ সালের আটই মার্চ মধ্য রাতে, ১২টা ৪১ মিনিটে, উড্ডয়নের ৪০ মিনিটের মাথায় রাত ১টা ২০মিনিটে এমএইচ ৩৭০ এর সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ।

বিমানটি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরদিন মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে জানায় যে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে ভিয়েতানামের বায়ুসীমায় প্রবেশ করার মুহূর্তে বিমানটি রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

ঐ অনুমান অনুযায়ী পরদিন সকাল থেকেই মালয়েশিয়ার উত্তর-পূর্বে দক্ষিণ চীন সাগরে বিমানটির ধ্বংসাবশেষের খোঁজ শুরু হয় । মালয়েশিয়ার বিমান বাহিনী, কোস্ট গার্ড ও নৌ বাহিনী যৌথভাবে খোঁজ চালায়।

তবে দুদিন পর ১০ই মার্চ মালয়েশিয়ার সেনাবাহিনী যখন জানায় যে একটি ‘মিলিটারি রাডার’ দুর্ঘটনার পরদিন সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত বিমানটির গতিপথ অনুসরণ করেছে, তখন হঠাৎই হিসেব বদলে যায়।

১৫ই মার্চ মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক আনুষ্ঠানিকভাবে জানান যে বিমানটি আসলে দক্ষিণ চীন সাগরে নয়, মালয়েশিয়ার উত্তর-পশ্চিমে মালাক্কা প্রণালীর কাছে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল।

মিলিটারি রাডারের হিসেব অনুযায়ী বিমানটি বেইজিংয়ের উদ্দেশে যাওয়ার সময় ভিয়েতনামের বায়ুসীমায় ঢোকার আগমুহূর্তে তার গতিপথ পরিবর্তন করে এবং ফিরতি পথে মালয়েশিয়ার ওপর দিয়ে মালাক্কা প্রণালী হয়ে উত্তর-পশ্চিমে এগিয়ে যায় এবং আন্দামান সাগরের কাছাকাছি অঞ্চলে যাওয়ার পর রাডারের চোখ থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

এরপর ২৪শে মার্চ প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক নতুন পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে জানান যে বিমানটি ভারত মহাসাগরের দক্ষিণাংশে অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে বিধ্বস্ত হয়েছে।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি স্যাটেলাইট সেবা প্রদানকারী সংস্থার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয় মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংস্থা ইনমারসাটের দাবি অনুযায়ী, বিমান থেকে পাওয়া ইলেকট্রনিক সিগন্যালের ভিত্তিতে তারা সে সময়কার অনুসন্ধানের ফল প্রকাশ করেছিল।

পরবর্তীতে ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ১২টি দেশের বিমান ও নৌবাহিনী ভারত মহাসাগরের এক লক্ষ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের বেশি জায়গা অনুসন্ধান করেছে বিমানটির ধ্বংসাবশেষের খোঁজে। কিন্তু অনুসন্ধানী দল এখন পর্যন্ত বিমানের কোনো অংশ বা বিমানে থাকা ২৩৯ জন যাত্রীর কারো কোনো হদিস পাননি।

তবে ২০১৬ আর ২০১৭ সালে ভারত মহাসাগরে তানজানিয়ার কাছে লা রিইউনিয়ন দ্বীপ ও নিকটবর্তী মাদাগাস্কারে বোয়িং ৭৭৭ বিমানের বেশ কিছু অংশ খুঁজে পান এক অস্ট্রেলিয়ান পর্যটক।

যে কারণে বিমানটি আদৌ ভারত মহাসাগরেই বিধ্বস্ত হয়েছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করে থাকেন অনেক বিশেষজ্ঞ ও এই বিষয়ের গবেষক।

বিমানটির ভাগ্যে কী হতে পারে, এ বিষয়ে বেশ কিছু তত্ত্বও রয়েছে তাদের।

পাইলটের ভূমিকা

এমএইচ ৩৭০ হারিয়ে যাওয়ার কিছুদিন পর থেকেই বিমানের পাইলট এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়।

দুর্ঘটনার কয়েকদিন পরেই বিমানের পাইলট জাহারি আহমেদ শাহের বাসায় অভিযান চালিয়ে তার বাসা থেকে ফ্লাইট সিমুলেটর জব্দ করে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ ও এফবিআই। ফ্লাইট সিমুলেটরের সাহায্যে নির্দিষ্ট যাত্রাপথে ভার্চুয়ালি বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিতে পারেন পাইলটরা।

সিমুলেটর থেকে কী পাওয়া গেছে, তা নির্দিষ্টভাবে জানায়নি কর্তৃপক্ষের কেউই। কিন্তু ২০১৬ সালে এফবিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে জাহারি আহমেদ শাহের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া ফ্লাইট সিমুলেটরে একটি যাত্রাপথে অনুশীলন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যেটির গতিপথ এমএইচ ৩৭০ বিমানটির কথিত যাত্রাপথের সাথে মিলে যায়।

অর্থাৎ, এমএইচ ৩৭০ বিমানটি যেমন প্রথমে মালয়েশিয়া থেকে উত্তর-পূর্বে ভিয়েতনামের বায়ুসীমা পর্যন্ত গিয়ে (আনুষ্ঠানিক তথ্য অনুযায়ী) আবার ঘুরে মালয়েশিয়ার উপর দিয়ে পশ্চিমে এসে উত্তর-পশ্চিমে মালাক্কা প্রণালীর উপর গিয়ে (মিলিটারি রাডারে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী) এরপর দক্ষিণে ভারত মহাসাগরের দিকে গিয়েছিল (যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ইনমারসাটের তথ্য অনুযায়ী) – বিমানের ক্যাপ্টেন জাহারি আহমেদ শাহের বাসা থেকে পাওয়া ফ্লাইট সিমুলেটরেও তেমনই একটি যাত্রাপথ পাওয়া যায়।

এই তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর এমন জল্পনা তৈরি হয় যে বিমানের পাইলট কোনো একটি কারণে নিজ থেকেই বিমানটি বিধ্বস্ত করার সিদ্ধান্ত নেন।

যদিও ১৯৮১ সাল থেকে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের সাথে কাজ করা জাহারি আহমেদ শাহকে ব্যক্তিগত জীবনে সুখী ও স্বাভাবিক একজন মানুষ হিসেবেই জানতেন তার সহকর্মীরা।

বিমান হাইজ্যাক

এমএইচ ৩৭০ বিমানটি হাইজ্যাকারদের দ্বারা দখল হতে পারে – ২০১৯ সালে প্রকাশিত বই ‘দ্য টেকিং অব এমএইচ ৩৭০’তে এমন একটি তত্ত্ব উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বিমান চলাচল বিষয়ক সাংবাদিক জেফ ওয়াইজ।

মি. ওয়াইজের তত্ত্ব অনুযায়ী, কুয়ালালামপুর থেকে যাত্রার পর ভিয়েতনামের বায়ুসীমায় প্রবেশের আগ মুহূর্তে বিমানটির দখল নিয়ে নেয় ভেতরে থাকা এক বা একাধিক হাইজ্যাকার।

পাইলটের ককপিটে না গিয়ে প্লেনের ভেতর থেকে কীভাবে এর নিয়ন্ত্রণ নেয়া যায়, সে বিষয়েও ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন মি. ওয়াইজ।

তিনি তুলে ধরেন যে প্রতিটি বোয়িং ৭৭৭ বিমানের ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল সেন্টারে বিমানের ফ্লোরে অবস্থিত বিজনেস ক্লাসের সামনে একটি দরজা দিয়ে প্রবেশ করা যায়। এই ইলেকট্রনিক সেন্টার থেকে বিমানের সব ধরনের ইলেকট্রনিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করাসহ বিমান চালানোও সম্ভব বলে তার বইয়ে উল্লেখ করেন মি. ওয়াইজ।

তবে মি. ওয়াইজ এটিও উল্লেখ করেন যে এই পদ্ধতিতে কখনো কোনো বিমান চালানো হয়েছে বলে তার জানা নেই। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় কোনো বিমান চালানোর নজির না থাকলেও এই পদ্ধতিতে যে বিমান চালানো তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব, সেটিও উল্লেখ করেন তিনি।

বিমানে থাকা কার্গো

এমএইচ ৩৭০ বিমানটির হারিয়ে যাওয়া নিয়ে সম্ভবত সবচেয়ে বিতর্কিত ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ টির অবতারণা করেন ফরাসি সাংবাদিক ফ্লোরেন্স ডি চ্যাঙ্গি।

২০২১ সালে প্রকাশিত তার বই ‘দ্য ডিস্যাপিয়ারিং অ্যাক্ট: দ্য ইমপসিবল কেইস অব এমএইচ ৩৭০’ এ তিনি ধারণা প্রকাশ করেন যে বিমানটির এই পরিণতির পেছনে বিমানে থাকা একটি বিশেষ ‘কার্গো’ বা মালামালের ভূমিকা থাকতে পারে।

তার অনুসন্ধানে উঠে আসে যে ২০১৪ সালের সাতই মার্চ রাত ১১টা ২০ মিনিটে – অর্থাৎ বিমান যাত্রা শুরু করার এক ঘণ্টা বিশ মিনিট আগে – এমএইচ ৩৭০ বিমানটিতে প্রায় আড়াই টন ‘রহস্যময়’ মালামাল রাখা হয়।

শেষ মুহূর্তে বিমানে প্রবেশ করানো ঐ কার্গো বিমানবন্দরে এসেছিল কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে।

ঐ কার্গো সংক্রান্ত নথি পর্যালোচনা করে তিনি তার বইয়ে তুলে ধরেন যে শেষ মুহূর্তে বিমানে প্রবেশ করানো ঐ কার্গো কোনো ধরনের স্ক্যান করা ছাড়াই বিমানে তোলা হয়।

মিজ চ্যাঙ্গির তত্ত্ব অনুযায়ী, এই কার্গোটির কারণেই এমএইচ ৩৭০’কে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছিল। মিজ চ্যাঙ্গির ধারণা মতে, ঐ কার্গোর মাধ্যমে এমন কিছু স্থানান্তর করা হচ্ছিল যা কোনো কোনো বৈশ্বিক পরাশক্তির ইচ্ছাবিরুদ্ধ ছিল।

কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে ভিয়েতনামের বায়ুসীমায় প্রবেশ করার সময় কিছুক্ষণের জন্য যখন বিমানটি নিরপেক্ষ বায়ুসীমায় অবস্থান করছিল, তখন বিমানটিকে ধ্বংস করে দেয়া হয় বা সেটির দখল নিয়ে নেয়া হয় বলে ধারণা করেন মিজ চ্যাঙ্গি।

তার অনুমান অনুযায়ী, এমএইচ ৩৭০ দক্ষিণ-চীন সাগর অঞ্চলেই বিধ্বস্ত হয়েছে এবং সেটি কখনোই ভারত মহাসাগর অঞ্চলের দিকে যায়নি।

এরকম ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা ইনমারসাটের তথ্য (ভারত মহাসাগরে বিমানটির সিগন্যাল পাওয়া গেছে) উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে বা সংস্থাটি ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছে বলে ফ্লোরেন্স ডি চ্যাঙ্গি ধারণা প্রকাশ করেন।

ইনমারসাট তাদের বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ আনাকে ‘দু:খজনক’ হিসেবে উল্লেখ করে।

২০২৩ সালে প্রকাশিত ‘এমএইচ ৩৭০: দ্য প্লেইন দ্যাট ডিসাপেয়ার্ড’ তথ্যচিত্রে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইনমারসাটের ডেপুটি প্রধান টেকনিক্যাল অফিসার মার্ক ডিকিনসন ইনমারসাটের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন।

ফ্লোরেন্স ডি চ্যাঙ্গি বা জেফ ওয়াইজের উপস্থাপন করা তত্ত্বগুলোকেও অনেক বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ উড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাদের এসব তত্ত্বকে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

তবে এমএইচ ৩৭০’র সাথে কী হয়েছে তা নিশ্চিতভাবে যতদিন জানা যাবে না, ততদিন হয়তো এই রহস্যময় ঘটনা সম্পর্কে কোনো তত্ত্বই একেবারে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। বিবিসি বাংলা