
এক ভূমিকম্প কাঁপিয়ে দিয়েছে গোটা বাংলাদেশকে। শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে অনুভূত হওয়া এই কম্পনের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদীতে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫.৭। এতে অন্তত ১০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। রাজধানীতে হেলে পড়েছে বেশ কিছু ভবন। দেখা দিয়েছে ফাটলও।
এবারের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী রাজধানীর বেশ কাছে। আর এটাই শঙ্কার অন্যমত বড় কারণ। আবারো তাই প্রশ্ন, এমন বড় ধরনের ভূমিকম্পের পর কতটা নিরাপদ বাংলাদেশ?
দেশে ভূমিকম্পের উৎস মূলত দুটি। একটি পূর্বে অবস্থিত ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোন। অন্যটি উত্তরের ডাউকি চ্যুতি, এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক সাবডাকশন জোন। এবারের উৎপত্তিস্থল অর্থাৎ নরসিংদী ভূতাত্ত্বিকভাবে বার্মা প্লেট ও ইন্ডিয়া প্লেটের সংযোগস্থলের মাঝামাঝি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. তাহমিদ মালিক আল হুসাইনি বলছেন, ইন্ডিয়ান প্লেটের সঙ্গে ইউরেশিয়ান প্লেটের সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে উত্তর দিকে। আরেকটা বাংলাদেশের পূর্ব পাশে থাকা বার্মা প্লেটের সঙ্গেও সংঘর্ষ হচ্ছে। ফলে এর প্রভাব পড়ে সারা দেশে।
গবেষণা অনুযায়ী- এই সাবডাকশন জোনে প্রায় ৮.২ থেকে ৯.২ মাত্রার শক্তি জমা রয়েছে। আর এই শক্তি উন্মুক্ত হলে আরও বড় ধরনের কম্পনের শঙ্কা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা তাই এই ৫.৭ মাত্রার কম্পনকে বড় বিপদের আগাম বার্তা হিসেবে দেখছেন।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ হুমায়ুন আখতার বলেন, সাবডাকশন জোন আমরা ওটাকে বলি, যেখানে একটা প্লেট আরেকটা প্লেটের নিচে তলিয়ে যায়। পৃথিবীর যেকোনো সাবডাকশন জোনের ভূমিকম্প হচ্ছে ভায়াবহ, যেটা আমাদের দেশে বিরাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই জোনে বিপুল পরিমাণ যে শক্তি জমা রয়েছে, সেটার ক্ষুদ্রতম শক্তি বের হয়েছে। আরও যে শক্তি জমা রয়েছে তা নিকটবর্তী সময়ে আরও বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানার বার্তা বহন করছে।’
নগর পরিকল্পনাবিদ আদিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা বার বার বলে আসছি, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ভূমিকম্পের অতি ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনা এবং ভবন নির্মাণে ঝুঁকি মাথায় রাখার বিষয়টি দেখছি না। অনেক ভবন জলাশয়-জলাভূমির ওপর বানানো হচ্ছে। ভবনগুলোর নির্মাণের মান ঠিক রয়েছে কি না এগুলোর কোনোটাই নজরদারির মধ্যে নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজউক তাদের সক্ষমতা বাড়ায়নি। গত ২০-৩০ বছরে যে পরিমাণ জলাশয়-জলাভূমির ওপর ভবন হয়েছে এগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকবে। ঝুঁকির মাত্রা জানার পরও রাষ্ট্র এটি নিয়ে কাজ করেনি। ভূমিকম্প হলে ভবন বা আশপাশের এলাকা নিরাপদ থাকবে তার সুযোগ নেই। এমনকি আশ্রয় নেয়ার মতো খেলার মাঠও নেই।’
এই নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, ‘সারা দেশে ভবন নির্মাণ যে অবস্থায় রয়েছে, এর থেকে আরেকটু বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে যে দুর্যোগ নেমে আসবে, তা কল্পনাতীত। আজকের ভূমিকম্পে অনেক ভবন হেলে পড়েছে। পরবর্তীতে অল্প মাত্রার ভূমিকল্প হলে এগুলো ধসে পড়তে পারে। এটা নিয়ে কাজ না করলে আমাদের ধংসযজ্ঞ ও বিপন্নতা ঠেকানো যাবে না।’
পুরান ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ধরে তালিকা হলেও কাজ করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যার ফলাফল আমরা দেখতে পেয়েছি আজকে। নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের যে ভবনগুলো অত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। যেগুলো সংস্কার সম্ভব তা ঠিক করতে তাগাদা দিতে হবে।’