
গাজীপুর মহানগরীর দীর্ঘদিনের অন্যতম বড় সমস্যা-নাগরিকদের সৃষ্ট কঠিন বর্জ্য। সিটি করপোরেশন গঠনের পর ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বর্জ্য সংকট কাটেনি। তবে এবার এ বর্জ্য থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি)।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করতে গিয়ে নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘব ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের বিষয়ে জানান গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দীন আহমদ চৌধুরী।
তিনি জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এবং বিভিন্ন অঞ্চলে বাস ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের নিমিত্তে জমি অধিগ্রহণ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দীন আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য সংগ্রহ করে ইনসিনারেশনের (বর্জ্য নিষ্কাশন পদ্ধতি) মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এর মাধ্যমে পরিবেশবান্ধবভাবে বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহন, সম্পদ পুনরুদ্ধার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নগরবাসীর বর্জ্য নিয়ে দুর্ভোগ লাঘব হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নগরীর জলবদ্ধতা দূরীকরণ এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।’
তিনি আরও জানান, এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৭৮২.২৫ কোটি টাকা। গত জুনে এ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণ ও অন্যান্য জটিলতার কারণে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া বাস ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের মাধ্যমে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধিকরণ এবং যানজট নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক রকিবুল হাসান রাসেল বলেন, ‘এই প্রকল্পের অধীনে মোট ৩০০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরমধ্যে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানাধীন এলাকায় ১০০ বিঘা জমি অধিগ্রহণের প্রকল্প চলমান আছে। এ জমিতে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এই প্রকল্পের জন্য ইতিমধ্যে চার ধারা নোটিশ জারি করা হয়েছে। শিগগিরই ৭ ধারা নোটিশ জারি হলে আমরা জমির দখল বুঝে নিতে পারব।’
সিটি করপোরেশন এলাকায় মানুষের সৃষ্ট বিপুল পরিমাণ বর্জ্য প্রতিদিনই সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। দীর্ঘদিন ধরে একটি স্থায়ী ডাম্পিংয়ের জায়গার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছিল। অবশেষে এ জমি নির্বাচন, পরিদর্শন এবং দ্রুত অধিগ্রহণের নির্দেশনার মধ্যদিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গাজীপুর সিটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পটি মহানগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক ও কার্যকর করবে এবং পরিবেশ দূষণ কমাতে এটি বড় অবদান রাখবে।
এ ছাড়াও, প্রশাসক কোনাবাড়ী এলাকায় অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করা একটি মাঠ পরিদর্শন করেন। সেখানে কর্তৃপক্ষ একটি খেলার মাঠ নির্মাণ ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করার কথা জানায়।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন: সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল হাসান, করপোরেশনের সচিব মো. আমিন আল পারভেজ, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মো. আলম হোসেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা সোহেল রানা, গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সোহেল রানা, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুদীপ বসাক ও হারুন অর রশিদসহ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।