
ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে গুগল। প্রতিষ্ঠানটি তাদের শক্তিশালী জিমিনি এআই এর উপর ভিত্তি করে একটি পরীক্ষামূলক ব্রাউজিং এক্সপেরিমেন্ট চালু করেছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে Disco। গুগলের লক্ষ্য হলো এই নতুন টুলটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের দৈনন্দিন অনলাইন কাজকে আরও দ্রুত, গোছানো এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত করে তোলা।
আজকের যুগে মাল্টিটাস্কিংয়ের প্রয়োজনে আমরা প্রায়শই কাজের সুবিধার্থে অনেকগুলো ব্রাউজার ট্যাব খুলে রাখি—তা সে অফিসের গবেষণা হোক, রান্নার রেসিপি খোঁজা, কিংবা ভ্রমণের পরিকল্পনা। কিন্তু এই অসংখ্য ট্যাব সামলানো অনেক সময় ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে। গুগল এই সমস্যাটির সমাধান দিতেই নিয়ে এসেছে এ ব্রাউজার।
এ ব্রাউজারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষণীয় ফিচার হল GenTabs। এই বিশেষ ফিচারটি ব্যবহারকারীর খোলা সব ট্যাব বিশ্লেষণ করে বুঝে নিতে পারে তিনি আসলে কী করতে চাইছেন। এরপর সেই প্রয়োজন অনুযায়ী এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছোট, টাস্ক-ভিত্তিক ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করার প্রস্তাব দেয়।
যেমন শিক্ষার্থীরা কেউ যদি কোনো জটিল বিষয়ে একাধিক ট্যাব খুলে পড়াশোনা করেন, GenTabs সেই তথ্যগুলোকে একত্র করে সহজভাবে বোঝার জন্য একটি তথ্যভিত্তিক ওয়েব অ্যাপ তৈরি করে দিতে পারে।
ঠিক তেমনি ভ্রমণকারীদের জন্য হোটেল বুকিং, দর্শনীয় স্থান এবং যাতায়াতের রুটের তথ্য নিয়ে খোঁজাখুঁজি করলে, GenTabs সেগুলোকে সাজিয়ে একটি পরিপূর্ণ ট্রিপ প্ল্যানার অ্যাপ বানিয়ে দেয়।
রান্নার ক্ষেত্রে একাধিক রেসিপি খোলা থাকলে, সেগুলোকে একত্রিত করে একটি খাবারের মেনু বা পরিকল্পনার অ্যাপ তৈরি করা সম্ভব।
বাজারে প্রচলিত অনেক এআই চ্যাটবটই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। তবে GenTabs-এর বিশেষত্ব হলো, এটি কেবল তথ্য পরিবেশন করে না। বরং, ব্যবহারকারীর খোলা ট্যাব এবং পূর্ববর্তী Gemini চ্যাট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সরাসরি কাজের উপযোগী, ইন্টার্যাক্টিভ অ্যাপ তৈরি করে দেয়। পরবর্তীতে সাধারণ নির্দেশ বা কথা বলার মাধ্যমেই ব্যবহারকারী সেই অ্যাপ আরও পরিবর্তন বা সাজিয়ে নিতে পারেন।
একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, GenTabs দ্বারা তৈরি সমস্ত কনটেন্টেই ব্যবহৃত তথ্যের মূল সূত্রের লিঙ্ক দেওয়া থাকবে। ফলে তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকবে না।
এই মুহূর্তে ব্রাউজারটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে না। প্রথম ধাপে অল্প সংখ্যক ব্যবহারকারীকে Google Labs-এর মাধ্যমে এটি ব্যবহার করে মতামত দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। বর্তমানে এটি শুধুমাত্র macOS ব্যবহারকারীদের জন্য চালু হচ্ছে এবং আগ্রহীদের একটি ওয়েটলিস্টে নাম লেখাতে হবে। ভবিষ্যতে ব্যবহারকারীর মতামতের ভিত্তিতে এতে নতুন ফিচার যোগ করা হবে।
সব মিলিয়ে, নতুন এই ব্রাউজার গুগলের সেই প্রচেষ্টার পরবর্তী ধাপ, যেখানে ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা কেবল তথ্য খোঁজার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, ব্যবহারকারীর কাজ অনুযায়ী নিজে থেকেই স্মার্ট এবং স্বয়ংক্রিয় সমাধান তৈরি করে দেবে। এটি ভবিষ্যতে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ধরনই বদলে দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।