সব জটিলতা এড়িয়ে অবশেষে সাড়ে নয়শো কোটি টাকায় দুটি মাদার ভ্যাসেল কিনছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। এবারই প্রথম নিজস্ব টাকায় জাহাজ কেনার অনুমতি পেয়েছে সরকারি সংস্থাটি। চীন থেকে পুরোপুরি প্রস্তুত জাহাজ কেনা হবে। আর আগস্টেই যুক্ত হবে শিপিং করপোরেশনের বহরে।
গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে নিজেদের টাকায় দুইটি মাদার ভ্যাসেল কেনার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল বিএসসি। তবে নানামুখী জটিলতায় বার বার সেই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অবশেষে চলতি মাসেই টেন্ডার আহ্বানের মাধ্যমে শুরু হয়েছে জাহাজ কেনার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া। প্রতিটি জাহাজের সম্ভাব্য দর ধরা হয়েছে ৪৫০ থেকে ৪৭৫ কোটি টাকা। আর জাহাজ কেনার পুরো টাকা দেয়া হবে বিএসসির নিজস্ব তহবিল থেকেই।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, বিএসসি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব সক্ষমতায় দুটি বড় আকারের বাল্ক ক্যারিয়ার কিনতে যাচ্ছে।
জটিলতার কারণে আগেই সময় ক্ষেপণ হওয়ায় এবার চীনে তৈরি হওয়া একেবারেই রেডিমেড জাহাজ কেনা হচ্ছে। ১৯৯ মিটার দৈর্ঘ্য, ৩৩ মিটার প্রস্ত এবং ১৮ মিটার গভীরতার বাল্ক ক্যারিয়ার হিসেবে পরিচিত প্রতিটি জাহাজ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন পণ্য বহন করতে সক্ষম। চট্টগ্রাম নৌ বাণিজ্য অধিদফতরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ, যে সব আন্তর্জাতিক কনভেনশন্স রয়েছে, রীতিনীতি রয়েছে সেগুলো মেনে চলা ধীরে ধীরে সহজ হবে।
স্বাধীনতার পর বিএসসির বহরে জাহাজ ছিল ৩৫টি। তবে নানা দুর্ঘটনা ও জটিলতায় কমতে কমতে জাহাজ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫টিতে। এদিকে চলতি বছরেই যুক্ত হচ্ছে সাড়ে ৯০০ কোটি টাকা দামের ২টি জাহাজ। আর এতে কর্মসংস্থান হবে অন্তত ১০০ নাবিকের।
আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অনুযায়ী, যে কোনো দেশের সমুদ্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ দেশীয় ক্যারিয়ার, ৪০ শতাংশ বিদেশি ক্যারিয়ার এবং বাকি ২০ শতাংশ দেশি ও বিদেশি ক্যারিয়ার যৌথভাবে পরিচালনা করে। বর্তমানে বাংলাদেশি মালিকানাধীন ১০২টি জাহাজ দিয়ে মাত্র ১১ শতাংশ পণ্য বহন সক্ষম। মার্চেন্ট মেরিনার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, জাহাজ সংখ্যা বাড়ুক এটি সবাই চায়। কারণ এতে কর্মসংস্থান বাড়বে। দেশের মেরিটাইম খাতের সক্ষমতাও বাড়বে।
অন্তত ২০ বছর পণ্য বহনে সক্ষম এসব জাহাজ থেকে বছরে ২০০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বিএসসি। এরমধ্যে সংস্থাটির বছরে লাভ হবে দেড়শ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে আগস্ট কিংবা সেপ্টেম্বরেই শুরু হবে জাহাজ দুইটির বাণিজ্যিক যাত্রা। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, জুলাই মাসের মধ্যে টেন্ডার যাচাই-বাছাই সম্পন্ন করে আগস্ট মাসের মধ্যেই বহরে যুক্ত করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এর আগে সবশেষ ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় ১ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকায় ৩টি করে মোট ৬টি জাহাজ কিনেছিল বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।