News update
  • Remittance surges to $2.68 billion in 29 days of November     |     
  • Probe body says Hasina had 'green signal' for BDR Carnage     |     
  • BDR mutiny was conspiracy to destabilise BD: Inquiry chief     |     
  • Teesta Bundh ‘renovation’ in Rangpur turns into a 'sand bonanza'     |     
  • সমুদ্র থেকে লাইটার জাহাজে লাফিয়ে উঠলো ৩ মণ ইলিশ     |     

সেন্টমার্টিনে যাচ্ছে ৩ জাহাজ, ১২ নির্দেশনা মানাতে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক পর্যটন 2025-12-01, 12:41pm

06132ae7fe64a207952a0e584e29e80f7c0352cdb6516249-1-685e64d93e5fe39243600df8128a83541764571291.jpg




নানা আলোচনা, নীতি, সিদ্ধান্ত পেরিয়ে বহু প্রতীক্ষিত সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাত্রা করল ৩টি জাহাজ। যেখানে দুই হাজার পর্যটকের রাত্রিযাপনের সুযোগ থাকলেও চলতি মৌসুমের প্রথম যাত্রায় সেন্টমার্টিন যাচ্ছে ১২০০ পর্যটকরা। যারা সেন্টমার্টিন যেতে পেরে দারুণ উৎফুল্ল। বলছেন, ১২ টি নির্দেশনা মেনেই ভ্রমণ করবেন সেন্টমার্টিন। আর জাহাজ উঠা থেকে শুরু সবখানে নির্দেশনা মানাতে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) চলতি মৌসুমে সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রথম যাত্রা, যা দীর্ঘ ১০ মাস পর। তাই ভোর না হতে কক্সবাজার নুনিয়ারছড়া ঘাটে উপচে ভিড় পর্যটকদের। সড়কে লেগেছে দীর্ঘ যানজট, অনেকেই সড়কে বসে সারছেন সকালে নাস্তা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেন্টমার্টিন যেতে পর্যটকদের দীর্ঘ সারি, তাও এক লাইনে নয়; করা হয় কয়েকটি লাইন। আর চলছে ১২ নির্দেশনার মাইকিং। প্রতিটি স্তরে রয়েছে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, প্লাস্টিক কিংবা পলিথিন দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা, করা হচ্ছে সচেতন। কঠোর নির্দেশনা মানাতে হাজির জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান বলেন, ‘এমভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বারো আউলিয়া, কেয়ারি সিন্দাবাদ ও কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন নামে চারটি জাহাজ কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি পেয়েছে।’

তিনি বলেন, সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে পর্যটক আসা-যাওয়ার সময় জাহাজগুলোকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। দুই হাজারের বেশি পর্যটক যেতে দেয়া হচ্ছে না। এ জন্য নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট ও সেন্টমার্টিন জেটিঘাটে পৃথক তল্লাশির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

প্রশাসনের অনুমতি থাকলেও নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে সেন্টমার্টিন থেকে আসতে হবে, তাই জাহাজ ছাড়েনি কর্তৃপক্ষ। আর রাত্রিযাপনের সুবিধা থাকায় আগামী দুই মাস কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে প্রতিদিন ৬টি জাহাজ চলাচল করবে বলে জানায় জাহাজ মালিকদের সংগঠন।

সেন্টমার্টিন রুটের পর্যটকবাহি জাহাজ মালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলছেন, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমবি বার আউলিয়া ও কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন এই ৩ টি জাহাজ সকাল সাড়ে ৭ টায় সেন্টমার্টিন শুরু করেছে। যেখানে প্রায় ১২ পর্যটক রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘২ হাজারের অধিক কোন টিকেট বিক্রি করা হবে না। সরকারি সিদ্ধান্ত মেনেই চলবে জাহাজ। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই দুই মাস কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়াস্থ বিআইডব্লিউটিএ-এর ঘাট থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক নিয়ে জাহাজ চলাচল করবে।’

এদিকে সকাল ৭টায় জাহাজ ছাড়ার কথা থাকলেও প্রথম দিন হওয়ায় ৩টি জাহাজ ছাড়ে সকাল সাড়ে ৭টায়। তবে পর্যটকরা ছিলেন খুবই উৎফুল্ল। জাহাজে ছবি তোলা থেকে শুরু করে গান-বাজনা কিংবা প্রকৃতি উপভোগে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে তারা বলেন, সেন্টমার্টিন ভ্রমণে প্রশাসনের সব নির্দেশনা মানতে রাজি তারা।

ভ্রমণপিপাসু ফরিদুল আলম বলেন, ‘সেন্টমার্টিন গিয়েছিলাম ২০১৫ সালে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম। এখন বিয়ে করেছি বউকে সঙ্গে নিয়ে সেন্টমার্টিন যাচ্ছি। প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে সেন্টমার্টিন যাত্রাটা খুবই উপভোগ করছি।’

আরেক পর্যটক মুহিব খান বলেন, ‘সেন্টমার্টিন ভ্রমণ সরকার ১২টি নির্দেশনা দিয়েছে। যার কঠোরতা জাহাজে উঠতে দেখা গিয়েছি। আমরা সব নির্দেশনা মেনেই সেন্টমার্টিন ভ্রমন করব। সেন্টমার্টিন পরিবেশ রক্ষা করা সবারই দায়িত্ব।’

আর ট্যুরিস্ট পুলিশ জানায়, পর্যটকদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তারা।

ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। তাই জাহাজ ঘাট থেকে শুরু জাহাজে এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’

আগামি ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দুই মাস পর্যটক নিয়ে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়াস্থ বিআইডব্লিউটিএ-এর ঘাট থেকে সকাল ৭টায় সেন্টমার্টিন ছেড়ে যাবে জাহাজ। আর বিকেল ৩ সেন্টমার্টিন থেকে কক্সবাজার উদ্দেশ্য রওনা গবে জাহাজগুলো।

মানতে হবে ১২টি নির্দেশনা

সেন্টমার্টিন দ্বীপের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সেন্টমার্টিন ভ্রমণের ব্যাপারে গত ২২ অক্টোবর ১২টি নির্দেশনাসহ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন।

সরকারি প্রজ্ঞাপন মতে, নভেম্বরে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় দ্বীপটি ভ্রমণ করতে পারবেন। রাত যাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি দুই মাস রাত যাপনের সুযোগ থাকবে।

এ ছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১২টি নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে বিআইডব্লিউটিএ এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি পাবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। সেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।

তথ্য অনুযায়ী, আগামী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যেতে পারবেন পর্যটকেরা। আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার ৯ মাসের জন্য দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও এবার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক ভ্রমণ করতে পারবেন না।

পর্যটকদের ভ্রমণকালে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়–বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষেধ। সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।

ভ্রমণকালে নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না এবং একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক, যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।