
কন্যার সুস্থতা ও স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারার আশায় মানত করেছিলেন গাজীপুরের বাসিন্দা শেফালী আক্তার। মহান আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করায় শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে এসে মানত আদায় করেছেন তিনি।
শেফালী আক্তারের চার বছরের মেয়ে জান্নাত দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক জটিলতায় ভুগছিল এবং স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারছিল না। সন্তানের কষ্টে দিশেহারা হয়ে তিনি আল্লাহর কাছে মানত করেন মেয়ে হাঁটতে পারলে পাগলা মসজিদে এসে দান করবেন। সম্প্রতি জান্নাত সুস্থ হয়ে হাঁটতে শুরু করলে পরিবারসহ গাজীপুর থেকে কিশোরগঞ্জে ছুটে আসেন শেফালী আক্তার।
মসজিদ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, শেফালী আক্তার নগদ অর্থসহ বিভিন্ন সামগ্রী দান হিসেবে পাগলা মসজিদ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন। এ সময় মসজিদ প্রাঙ্গণে উপস্থিত মুসল্লি ও দর্শনার্থীদের মাঝে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
মানত আদায় শেষে শেফালী আক্তার বলেন, একজন মা হিসেবে সন্তানের কষ্ট সহ্য করা খুব কঠিন। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে মানত করেছিলাম। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন। তাই কষ্ট হলেও এই দূর পথ পাড়ি দিয়ে মানত আদায় করতে এসেছি। মেয়ের সম্পূর্ণ সুস্থতার জন্য আবারও আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি।
এ সময় ছোট্ট জান্নাতকে কোলে নিয়ে তার নানি হোসনে আরা বলেন, নাতি হাঁটতে পারলে মানত ছিল। সে এখন হাঁটতে পারে। তাই মানত পূরণ করতে টাকা ও কোরআন শরিফ দান করেছি।
পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ নানা মানত ও দান নিয়ে এই মসজিদে আসেন। সন্তানদের সুস্থতা, পারিবারিক সমস্যা ও জীবনের সংকট কাটানোর আশায় অনেকেই এখানে মানত করেন। তিন থেকে চার মাস পরপর দানবাক্স খোলা হলে কোটি কোটি টাকার দান পাওয়া যায়, যা দেশের অন্যান্য মসজিদের তুলনায় ব্যতিক্রম।
মসজিদ কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, দানবাক্স থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে এতিমখানা পরিচালনা, মাদরাসা, সামাজিক কল্যাণমূলক কাজ এবং মসজিদের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা বলেন, এবার তিন মাস ২৭ দিন পর দানবাক্স খোলা হয়েছে। রেকর্ড ৩৫ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। ব্যাংক কর্মকর্তা ও মাদরাসার ছাত্ররা টাকা গণনার কাজ করছেন। মানুষের বিশ্বাস থেকেই এখানে দান আসে, আর প্রশাসনের মাধ্যমে সুষ্ঠু তদারকি করা হয়।
স্থানীয় মুসল্লি ও এলাকাবাসীর মতে, পাগলা মসজিদ শুধু একটি উপাসনালয় নয় এটি মানুষের বিশ্বাস, আশা ও আস্থার প্রতীক। শেফালী আক্তারের মতো অসংখ্য মানুষের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার ঘটনা এই মসজিদের প্রতি মানুষের গভীর বিশ্বাসেরই প্রতিফলন।
প্রসঙ্গত, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার হারুয়া এলাকায় অবস্থিত পাগলা মসজিদ দীর্ঘদিন ধরেই দেশের অন্যতম আলোচিত দানপ্রাপ্ত মসজিদ হিসেবে পরিচিত। মসজিদ কমপ্লেক্স সম্প্রসারণের জন্য আন্তর্জাতিক মানের ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। নতুন এই কমপ্লেক্সে একসঙ্গে ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন এবং থাকবে ২০০টি গাড়ির পার্কিং সুবিধা।