News update
  • Govt reaffirms commitment to distribute school books by Jan     |     
  • Dhaka’s air turns ‘unhealthy’ on Sunday morning     |     
  • BD’s leather sector stuck at $1bn; could tap $5bn: Experts      |     
  • RU suspends ward quota reinstatement amid student protests     |     
  • Airports across Europe face disruptions due to cyberattack     |     

কুয়াকাটাগামী রিজার্ভ বাসে অতিরিক্ত টোল আদায়ে ক্ষুব্ধ পর্যটকরা

ট্যাক্স 2023-02-09, 6:31pm

patuakhali-toll-slips-78fe8e5480892584ce14c4ee148f5d461675945893.jpg

Patuakhali Toll Slips



পটুয়াখালী: পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে আগত পর্যটকদের পিকনিক পার্টির রিজার্ভ বাস থেকে কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের তিনটি সেতু পারাপারে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। টোল ইজারাদারের লোকজন রাতে বাস চালকদের জিম্মি করে দ্বিগুন থেকে তিনগুন পর্যন্ত টোল আদায় করে থাকে। প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন রকমের ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে চালকদের টাকা দিতে বাধ্য করে এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগালও করে থাকে। এমনকি অতিরিক্ত পরিমান টাকা উল্লেখ করা রশিদও প্রদান করে। হয়রানির শিকার হয়ে বাস চালক ও পর্যটকদের মধ্যে দিন দিন ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতারিত হয়ে গন্তেব্যে ফিরে যাচ্ছে পর্যটকরা। এভাবে চলতে থাকলে দিন দিন পর্যটন শিল্প প্রসারে বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা আছে বলে মন্তব্য করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব ৭৪ কিলোমিটার। কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে কুয়াকাটা যেতে ২১ কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি নদীর উপর তিনটি সেতু রয়েছে। ঢাকা-পটুয়াখালী কুয়াকাটা মহাসড়কের কলাপাড়া শহর সংলগ্ন আন্ধারমানিক নদীর উপর শেখ কামাল সেতু, হাজিপুর সোনাতলা নদীর উপর শেখ জামাল সেতু ও শিববাড়িয়া নদীর উপর শেখ রাসেল সেতু।

চালক ও সুপারভাইজারদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে টোল রশিদে দেখা যায়, গত ২০ জানুয়ারী শেখ কামাল সেতুর রশিদে একটি বড় বাসের  (চেয়ারকোচ) ভাড়া ১৮০ টাকার স্থলে রাখা হয়েছে ২৫০ টাকা। ২১ তারিখ একই বাস গন্তব্যে ফিরে যাওয়ার সময়ও রাখা হয়েছে ২৫০ টাকা। একই ভাবে শেখ জামাল সেতুতে ৯০ টাকার স্থলে ভাড়া রাখা হয়েছে ১৮০ টাকা। গন্তব্যে ফিরে যাওয়ার সময় আবারও ১৮০ টাকা রাখা হয়েছে। শেখ রাসেল সেতুতে ৯০ টাকার স্থলে একই ভাবে ১৮০ টাকা রাখা হয়েছে। খুলনার কয়রা থেকে মিনিবাস নিয়ে আসা চালকের অভিযোগ তার মিনিবাসেও শেখ জামাল সেতুতে ১০০ টাকা ভাড়া নির্ধারিত থাকলেও আদায় করা হয়েছে ২৫০ টাকা। আর শেখ জামাল ও রাসেল সেতুর ৫০ টাকার স্থলে ১৮০ টাকা রাখা হয়েছে। 

চালক ও সুপারভাইজারের অভিযোগ, সিন্ডিকেট করে তিনটি সেতুর টোল আদায় করে থাকে ইজারাদাররা। এমনকি পুলিশ সদস্যরা ডিউটিতে থাকলেও তর্ক-বিতর্ক শুনে না দেখার ভান করে অন্যদিকে চলে যান তারা। 

খুলনা জেলার কয়রা থেকে রিজার্ভ বাস নিয়ে কুয়াকাটায়  আসা চালক মো. শাহিন জানান, ২০ জানুয়ারী ভোর রাতে কুয়াকাটায় আসার সময় কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটা পৌঁছতে শেষ তিনটা সেতুর টোল দিতে গিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছে। তিনি বলেন, টোলঘরে তাদের চাহিদামত অতিরিক্ত টোল দিতে না চাইলে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করে থাকে। হাজিপুর শেখ জামাল সেতু ও মহিপুর শেখ রাসেল সেতুর নির্ধারিত ৫০ টাকার টোল ১৮০ টাকা রাখছে। আর শেখ কামাল সেতুর নির্ধারিত ১০০ টাকার টোল দিতে হয়েছে ২৫০ টাকা। এত বেশী টোল কেন জিজ্ঞাসা করলে ওরা বলে ভাড়া এইটাই। না হলে তুমি ব্রীজ পারাইয়া এপাড়ে আইছো কেন? ব্রীজ পারাইয়া ব্যাগে যাও।

তিনি আরও জানান, এভাবে অতিরিক্ত টোল আদায় করলে মালিক-মহাজনরা ব্যবসা করতে পারবে না। ভাড়াতো এইটা না, আসলে আমরা যে ভাড়াটা হিসাব করে মহাজনের কাছ থেকে নিয়ে আসি। ভাড়া যদি বেশী দিতে হয় তাহলে আমাদের বেতন থাকে না। আমাদের পকেট থেকে টোল দিতে হবে। অভিযোগ করে চালক আরও বলেন, তারা (ইজাদাররা) যেটা চাইবে সেটাইতো দেয়া লাগবে। দুর দুরান্ত দিয়া আসছি। যদি আমার গাড়ীটা আটকাইয়া দেয় তাইলে পার্টিরাতো বুঝবে না। তাই বাধ্য হয়ে দিতে হচ্ছে। 

চাঁদপুর থেকে রিজার্ভ চেয়ার কোচ নিয়ে আসা তিশা পরিবহনের সুপারভাইজার মো. জসিম জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর আমি পার্টি নিয়ে কমপক্ষে ১০ বার কুয়াকাটা গেছি। বিশেষ করে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার পিকনিক পার্টি রিজার্ভ নিয়ে কুয়াকাটায় যাই। এছাড়াও সরকারি ছুটি কিংবা যে কোন উৎসবের টানা ছুটিতে রিজার্ভ বাস নিয়ে আসি কুয়াকাটায়। দেশের সব প্রান্তেই বাস নিয়ে যাই। দেশের কোথাও সরকার নির্ধারিত টোলের অতিরিক্ত আদায় করতে দেখিনি। কলাপাড়া শহরের পর তিনটি নদীর উপর টোল আদায় করছে ইচ্ছা মত। চেয়ারকোচে ১৮০ টাকা নির্ধারিত ভাড়া নিচ্ছে ২৫০ টাকা। শেখ জামাল ও রাসেল সেতুতে ১০০ টাকার স্থলে নিচ্ছে ১৮০ টাকা। প্রতিবাদ করলে তারা গালমন্দ করে জোরপূর্ব টাকা হাতিয়ে নেয়। আবার অতিরিক্ত টাকার রশিদও দিচ্ছে। টোলের লোকজন বলে আসলে আসেন, নাইলে ঘুরাইয়া চলে যান। আপনাদের আসা লাগবে না। এখানে লাউকাঠী নদীর উপর পটুয়াখালী সেতুর টোল ঘরে ভাড়া বেশী নেয় না ১৩৫ টাকা নেয় ঠিকই কিন্তু রাতে তারা পৌর সভার টোল বাবদ ১০০ টাকা করে আদায় করে থাকে। 

পর্যটক সোহাগ রহমান বলেন, কুয়াকাটা যাওয়ার পথে রাত সাড়ে তিনটার দিকে চালক ও সুপাভাইজারের সাথে টোল কর্তৃপক্ষের ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। এগিয়ে শুনতে পাই অতিরিক্ত টোল চাওয়ায় বাসের চালক ও সুপারভাইজারের সাথে ইজাদারের লোকজনের সাথে কথাকাটাকাটি হচ্ছে। টোল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন পিকনিক পার্টির বাসে এই হারেই টোল দিতে হবে। না হলে বাস ঘুরিয়ে গন্তব্যে চলে যাও। কেন উঠেছো ব্রীজে।

ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনস্ অব কুয়াকাটা (টোয়াক) এর সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, সপ্তাহের সরকারি ছুটির দিন গুলোতে শতাধিক পিকনিক পার্টির বাস আসে কুয়াকাটায়। কোন কোন শুক্রবার তারও বেশী পিকনিক পার্টি আসে। সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে যদি সেতুর টোল বেশী আদায় করা হয় সেটা প্রথমত এটা পর্যটকদের হয়রানির একটা অংশ। দ্বিতীয়ত কুয়াকাটার প্রতি পর্যটকদের একটা বিরূপ ধারনা তৈরী হবে। কোথাও প্রবেশের পথেই যদি বাঁধা আসে তাহলে পুরো ট্যুরটাই তার নষ্ট হয় বা মানসিক অবস্থা ভাল থাকে না। 

তিনি আরও বলেন, সরকারি যে ভাড়াটা নির্ধারিত আছে সেটা নিতে পারে। কমতো আর নিতে পারবে না। কিন্তু সেটা (টোল) নেয়ার পাশাপাশিও ভাল ব্যবহার আসা করতে পারে ট্যুরিস্টরা। সেটা না করে যদি বেশী ভাড়া আদায় করে তাহলে দুই দিকেই আমাদের জন্য খারাপ। একদিকে পর্যটকের সাথে আমরা বিরূপ আচরন করতেছি, আর দ্বিতীয়ত কুয়াকাটার প্রতি তার একটা খারাপ ধারনা তৈরী হবে। পরবর্তীতে ব্যাক করার পরে সে কুয়াকাটার প্রতি সে পজেটিভ প্রচার করবে না। এটা আমাদের জন্য একবারে একটা দুঃসংবাদ। এটা থেকে যে কোনভাবে হোক প্রশাসনিক অথবা যে কাঠামোতেই হোক এটা বন্ধ করা উচিৎ বলে আমরা মনে করি।

শেখ রাসেল সেতুর ইজারাদার মেসার্স খান ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী আবুল বাশার বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায় করার বিষয়টি তার জানা নাই। তবে আমার লোকজনকে বলে দিয়েছি। কারো কাছ থেকে একটি টাকাও বাড়তি নিবে না। আপনি বলছেন আমি বিষয়টি দেখতেছি।

শেখ জামাল সেতুর ইজারাদার মেসার্স রফিক এন্টারপ্রাইজের পরিচালক মো. জুয়েল হাসান বলেন, বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখছি। পর্যটকদের সাথে খারাপ আচনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা মোটেই সত্য নয়। আপনাকে যারাই বলেছে সেটা মিথ্যা বলেছে। কারন আমার লোকজনকে আমি বলে দিয়েছি কারো সাথে খারাপ আচরন করবা না।

শেখ কামাল সেতুর ইজারাদার নাজমুস সায়াদাত বলেন, আমিতো টোলে অনেক দিন ধরে যাই না। খোজ খবর নিয়ে দেখছি বিষয়টা কি? 

কুয়াকাটা পৌর সভার মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা সহ প্রতি বৃহস্পতি ও শুক্রবার পিকনিক পার্টির পর্যটকরা বাস নিয়ে কুয়াকাটায় ঘুরতে আসেন। পর্যটকবাহী বাসে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। এটা আমার আওতার বাইরে। তবে পর্যটকরা আমাদের মেহমান। টোলের ভাড়া নির্ধারন করা আছে। যদি এর বাইরে কোন ইজারাদার বা তার লোকজন বেশী ভাড়া আদায় করে তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। 

এ বিষয়ে পটুয়াখালী সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম আতিক উল্লাহ বলেন, টোলের ইজারাদাররা সরকারি নিয়ম কানুন মেনেই স্বাক্ষর করে ইজারা নিয়ে থাকেন। প্রত্যেক টোলপ্লাজায় নির্ধারিত মূল্য তালিকা উল্লেখিত বোর্ড টাঙ্গানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর যদি কোন ব্যত্যয় হয় বা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকে তাহলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমনকি ইজারা বাতিল পর্যন্ত করা হবে।

কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়টি তার জানা ছিল না। নির্ধারিত টোল আদায়ের বাইরে যদি কোন ইজারাদার অতিরিক্ত টোল আদায় করে থাকে তবে তা খতিয়ে দেখে সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলীকে নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। - গোফরান পলাশ