News update
  • Brazil Launches Fund to Protect Forests and Fight Climate Change     |     
  • UN Warns Conflicts Are Devastating Ecosystems Worldwide     |     
  • Flood-hit Kurigram char residents see little hope in politics, elections     |     
  • Air quality of Dhaka continues to be ‘unhealthy’ Friday morning     |     
  • BNP pledges to implement signed July Charter     |     

নোভাক জকোভিচ কি নাদাল-ফেদেরারকে ছাপিয়ে টেনিসের সর্বকালের সেরা অ্যাথলেট?

বিবিসি বাংলা টেনিস 2025-01-25, 11:11pm

43534543-76ac405b647d57c23e121969e4a0e9221737825073.jpg




বছরের প্রথম গ্র্যান্ডস্ল্যামটা নোভাক জকোভিচের সবচেয়ে প্রিয়, সেই মঞ্চের সেমিফাইনালে নোভাক বেড়িয়ে যাওয়ার সময়, হয়তো শেষবারের মতো কোর্ট ছাড়ার সময় রড লেভার অ্যারেনায় 'বু' বা দুয়োধ্বনি শুনছেন।

দুয়োধ্বনি মেনে নিয়েছেন জকোভিচ, ম্যাচ শেষেই জানান, "অনেক পয়সা খরচ করে লোকে এমন একটা ম্যাচ দেখতে আসে, সেখানে আমি হতাশ করেছি, এটাই স্বাভাবিক"।

জার্মানির আলেকজান্ডার ভেরেভ ফাইনাল খেলবেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইতালিয়ান ইয়ানিক সিনারের বিপক্ষে।

ফাইনালে পা রাখা ভেরেভ কোর্টেই মাইক্রোফোন হাতে বলেন, "আমরা জানি অনেকেই অনেক টাকা দিয়ে এখানে খেলা দেখতে এসেছেন কিন্তু একজন চোট পাওয়া প্লেয়ারকে দয়া করে দুয়ো দেবেন না, গত ২০ বছরে জকোভিচ টেনিসের জন্য সম্ভাব্য সব করেছেন"।

বা পায়ে টেপ পেঁচানো, অনেক দিন ধরেই বয়ে চলা চোট থেকে সেরে উঠেই এই আসরে নাম লিখিয়েছিলেন জকোভিচ, আর আসরের ১০ বারের পুরুষ একক চ্যাম্পিয়ন সেমিফাইনালে চোটের কারণে প্রথম সেঁটের পর আর চালিয়ে নিতে পারলেন না।

এমন এক দৃশ্যায়নের পর জকোভিচ আর ফিরবেন কি না টেনিস কোর্টে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়, একই সাথে আরও একটি প্রশ্নের উদয় হয়, জকোভিচ কি সর্বকারের সেরা পুরুষ একক হিসেবে ক্যারিয়ার শেষ করবেন?

স্পেনের কার্লোজ আলক্যারাজের বয়স তখন পাঁচ বছর যখন নোভাক জকোভিচ প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা হাতে নিয়েছিলেন, ২০০৮ সালে।

আলক্যারাজের সাথে জকোভিচের দ্বৈরথ কী প্রমাণ করে?

স্পেনের কার্লোজ আলক্যারাজের বয়স তখন পাঁচ বছর যখন নোভাক জকোভিচ প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা হাতে নিয়েছিলেন, ২০০৮ সালে।

এর ১৪ বছর বাদে সেই আলক্যারেজ যখন মাঠে এসে নিজের আবির্ভাব জানান দিলেন, জকোভিচ তখনও স্বমহিমায় উজ্জ্বল, নামের পাশে ২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম, পুরুষ টেনিসে যা সর্বোচ্চ।

সেই আলক্যারেজ জকোভিচকে টানা দুই উইম্বলডন ফাইনালে হারিয়েছে, তখনও ২০ এ পা দেননি এই স্প্যানিশ।

আলক্যারেজের সাথে জকোভিচকে হারতে হয়েছে, তিন দফায়। জকোভিচ যদিও সামগ্রিক লড়াইয়ে এগিয়ে, প্যারিস অলিম্পিকেও জিতেছেন এই সার্বিয়ান।

তবু ৩৭ বছর বয়সে এসে তাকে নতুন করে একটা লড়াই কাঁধে নিতে হয়েছে, যেটা গড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন অব্দি।

মঙ্গলবার ২১শে জানুয়ারি যেভাবে কার্লোস আলক্যারেজের সাথে প্রথম সেট হেরে ঘুরে দাঁড়ালেন 'বুড়ো জকোভিচ' তাতে টেনিস দুনিয়া বিস্ময় প্রকাশ করেছে।

এই লড়াকু মানসিকতাই জকোভিচকে আলাদা করে তোলে।

জকোভিচ সেরাদের সময়ে সেরা হয়ে উঠেছেন

রাফায়েল নাদাল ও রজার ফেদেরার, এই দুই টেনিস মহারথী একজন কাঁদামাটির টেনিসে সেরা আরেকজন গ্রাস কোর্টে অপ্রতিরোধ্য।

এমনও সময় গিয়েছে টেনিসে টানা ১১টি গ্র্যান্ডস্ল্যামে চ্যাম্পিয়ন হয় সুইজারল্যান্ডের রজার ফেদেরার নতুবা স্পেনের রাফায়েল নাদাল।

এই দুজনের যৌথ জয়রথ থামাতে তৃতীয় শক্তির উত্থানের প্রয়োজন ছিল, সেই তৃতীয় শক্তি হয়ে এলেন সার্বিয়ার নোভাক জকোভিচ।

দু হাজার আট সালে জকোভিচ যখন প্রথম টেনিসের মেজর ট্রফি জেতেন তার আগের ১১টি গ্র্যান্ড স্ল্যামে জয়ী ছিলেন নাদাল অথবা ফেদেরার।

অর্থাৎ ২০০৯ সালে গ্র্যান্ডস্ল্যাম জয়ের দিক থেকে টেনিসের 'বিগ থ্রি' এর পরিসংখ্যান ছিল এমন, ফেদেরার ১৩, নাদাল ৫, জকোভিচ ১।

এর ১৩ বছর পর ২০২২ সালে এসে গ্র্যান্ডস্ল্যাম জয় তিনজনের সমান ২০টি করে হয়।

বর্তমানে জকোভিচ সবাইকে ছাড়িয়ে। ২৪টি গ্র্যান্ডস্ল্যামের মালিক, নাদালের ২২টি, ফেদেরারের ২০টি।

এর বাইরে নাদাল ও ফেদেরারের বিপক্ষে মুখোমুখি দেখাতেও জকোভিচের জয় বেশি।

বর্তমানে জকোভিচ সবাইকে ছাড়িয়ে। ২৪টি গ্র্যান্ডস্ল্যামের মালিক, নাদালের ২২টি, ফেদেরারের ২০টি।

গ্র্যান্ডস্ল্যাম তো সংখ্যামাত্র, জকোভিচের নামের পাশে এমন কিছু তথ্য-উপাত্ত আছে যা তাকে টেনিসের মঞ্চে সেরাদের সেরা করে তোল্যে, যেমন রেকর্ড ৪২৮ সপ্তাহ পুরুষ এককের এক নাম্বার থাকা, ৮ বছর জভোকিচ বছর শেষে অ্যাসোসিয়েশন অফ টেনিস প্লেয়ার্স র‍্যাংকিং-এর শীর্ষে ছিলেন।

টেনিসের চার শীর্ষ আসর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, রোলা গাঁরো, উইম্বলডন, ইউএস ওপেন- চারটিতেই জয় পেলে এটাকে ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম বলা হয়, জকোভিচ ক্যারিয়ার গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন তিন বার।

অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতে সেটাকে ক্যারিয়ার গোল্ডেন স্ল্যামে নিয়ে গেছেন জকোভিচ, তার আগে ক্যারিয়ার গোল্ডেন স্ল্যাম আছে শুধু রাফায়েল নাদাল ও আমেরিকান আন্দ্রে আগাসির।

২০১৭ সালের কনুইয়ের চোট আর কোভিড পরবর্তী সময়ে টিকা সম্পর্কিত জটিলতা না থাকলে জকোভিচের গ্র্যান্ডস্ল্যাম শিরোপা আরও বেশি থাকতো।

জকোভিচকে রোবোটিক বলা হয়, তবুও তিনিই সেরা

টেনিসের সবচেয়ে জনপ্রিয় নামগুলোর একটি রজার ফেদেরার, টেনিসের সবচেয়ে অভিজাত সাদা পোশাকের খেলা উইম্বলডনের কোর্টে ফেদেরার আধিপত্য ছিল অন্যরকম, অনেকের মতেই রাজকীয়।

একটা প্রজন্মের কাছে টেনিস মানেই ফেদেরার, শান্ত সৌম্য হাসি আর জনসাধারণের কাছে অমায়িক এক চরিত্র ফেদেরার।

ফেদেরারের নাম এতটাই জনপ্রিয় যে যারা টেনিস খুব একটা দেখেন না, তাদের প্রিয় খেলোয়াড় কে, এমন প্রশ্নের জবাবে অনেকের মাথাতেই এই নামটাই চলে আসে।

আর ফেদেরারের সময়ে তার খ্যাতি ও গ্র্যান্ডসল্যামে ভাগ বসান স্প্যানিশ তারকা রাফায়েল নাদাল।

তিনি আবার কাঁদামাটির কোর্টের রাজা।

ফ্রেঞ্চ ওপেন, যেটি রোলা গাঁরো নামে পরিচিত সেখানে নাদালের ১৪টি একক শিরোপা, ফেদেরারের খেলায় ছিল সৌন্দর্য্য, নাদালের খেলায় টেনিস প্রেমীরা খুঁজে পেতেন এক দুর্বিনীত লড়াকু মনোভাব।

জকোভিচ এদিক থেকে আলাদা, খানিকটা দুর্ভাগাই বলা যায়, টেনিসের প্রাপ্তির খাতায় এই সার্বিয়ান যা পেয়েছেন তার বেশিরভাগই শিরোপায়, টেনিস প্রেমীদের একটা অংশ জকোভিচকে নাদাল-ফেদেরারের মতো করে ভালোবাসেননি।

সাথে যোগ হয়েছে জকোভিচের অকপট সব বক্তব্য, কোভিডের টিকা দিতে না চাওয়া যে কারণে একটি ইউএস ওপেন, দুটি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে অংশই নিতে পারেননি তিনি, একবার কোর্টে গিয়েও ভিসা বাতিল হয়েছে তার।

নাদাল বা ফেদেরারের চেয়ে দক্ষতার দিক থেকে জকোভিচকে এগিয়ে রাখেন টেনিস বিশ্লেষকেরা, সেখানেই দুর্ভাগা জকোভিচ, অনেকে তার টেনিস খেলাটায় মজা খুঁজে পাননা, যে বলটা নাদাল বা ফেদেরার বা অন্য কোনও টেনিস খেলোয়াড় কষ্ট করে, কায়দা করে প্রতিপক্ষের কাছে পাঠান, সেটিকে জকোভিচ সহজ করে তোলেন, যে কারণে তার নামের পাশে তকমা জোটে 'রোবোটিক'।

বিশ্ব টেনিসের সাবেক তারকা বর্তমানে জকোভিচের কোচ ব্রিটিশ টেনিস প্লেয়ার স্যার অ্যান্ডি মারে বলে দিয়েছেন, "জকোভিচ এখনই সর্বকালের সেরা টেনিস তারকা, যদি সে ৩৮/৩৯ বছর বয়স পর্যন্ত খেলে যেতে পারে, যদি সে আরও দুই একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম সময়ের সেরাদের হারিয়ে জিতে যেতে পারে তবে সে টেনিস না, বিশ্বের সব স্পোর্টের সেরা অ্যাথলেট হিসেবেই নাম পাবে"।

কার্লোজ আলক্যারেজের বিপক্ষে অতিমানবীয় পারফরম্যান্সে জকোভিচের কোয়ার্টার ফাইনাল জয়ের পর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফকে এই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অ্যান্ডি মারে।