
হঠাৎ কেঁপে ওঠে রাজধানী। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ভূমিকম্প হচ্ছে টের পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন মানুষ। ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাট সব জায়গায় হুড়োহুড়ি লেগে যায়। চারিদিকে আতঙ্ক বিরাজ করতে থাকে। চিৎকার-চেঁচামেচি তো ছিলই। কে কীভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে ফাঁকা স্থানে অবস্থান নেবে, সেই চেষ্টা চলতে থাকে। আজ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে এমন চিত্র দেখা গেছে রাজধানীজুড়ে।
শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভয়াবহ ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা বলেন, আজ সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী। অন্যদিকে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫, কেন্দ্রস্থল নরসিংদীর মাধবদী।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভবন দুলে ওঠে। অফিস, বাসাবাড়ি ও বাজার এলাকায় মানুষ দ্রুত ভবন থেকে বেরিয়ে খোলা জায়গায় চলে যায়। কম্পন থেমে যাওয়ার পরও অনেকে কিছুক্ষণ নিচে অবস্থান করেন।
সেগুনবাগিচা এলাকার বাসিন্ধা রবিউল আলম বলেন, কিছু বুঝে উঠার আগেই এক ঝাঁকুনি দিয়েছে আতঙ্কে দৌড়ে রাস্তায় নেমে যায়।
সিরাজুল ইসলাম নামের একজন ওয়ালটন কোম্পানিতে চাকরি করেন। ভূমিকম্প শুরু হলে তিনি তার দুই সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে কীভাবে ঘর থেকে বের হবেন, সেই আতঙ্কে আতঙ্কিত। তিনি চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকেন বাসায়। বলতে থাকেন, ‘দ্রুত বের হও। এখনি আবার ভূমিকম্প হতে পারে।’ এরপর তিনি স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে রাজধানীর দিলু রোডের সড়কে নেমে যান।
সড়কে গিয়ে সিরাজুল ইসলাম দেখেন, অনেকে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, রাস্তায় গিয়ে দেখি, মানুষ আর মানুষ। এসব দৃশ্য কেউ ভিডিও করছিলেন, আবার কেউ মহান আল্লাহকে ডাকছিলেন। তার কাছে নিরাপদ থাকার প্রার্থনা করছিলেন।
রাজধানীর কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা ইমরান হোসেন। তিনিও ভূমিকম্পের সময় রাস্তায় নেমে যান। তিনি বলেন, এমন ভূমিকম্প আমি আমার জীবনে দেখিনি। মনে হচ্ছিল, সব উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে। আমি আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে রাস্তায় চলে আসি। আলহামদুলিল্লাহ, পরে আর অসুবিধা হয়নি।
ঢাকা এবং এর আশপাশের এলাকা ছাড়াও ময়মনসিংহ, গাজীপুর, চাঁদপুর, নীলফামারী, সীতাকুণ্ড, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, পটুয়াখালী, বগুড়া, বরিশাল ও মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন জেলায় ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। হঠাৎ দুলুনিতে অনেকেই বাড়িঘর থেকে বেরিয়ে আসেন।
ময়মনসিংগের গফরগাঁও উপজেলা পাগলা থানার বাসিন্ধা মমতাজ বেগম বলেন, ‘ভূমিকম্পের ঝঁকিতে বসা থেকে পরে যাই। আল্লাহ রহমত করেছেন কোনো ক্ষতি হয়নি।’
গাজীপুরের শ্রীপুরের বাসিন্ধা সারোয়ার হোসেন রুবেল বলেন, ‘ভূমিকম্পে এত বড় ঝাঁকুনি দিয়ে শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারিনি। আতঙ্কে সবাই রাস্তায় নেমে আসেন।’
কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জের বাসিন্ধা নার্গিস আক্তার বলেন, ‘আমাদের এখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমার নাতনি ওয়ারিসা বলে, ছাদের ওপর বল পড়ে বিল্ডিং কেঁপে উঠছে।’
এদিকে, রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশাল এলাকার আরমানিটোলায় ভূমিকম্পের সময় একটি সাততলা ভবনের ছাদের রেলিং ধসে নিচে পড়ে। এতে তিন পথচারী আহত হন। হাসপাতালে নেওয়া হলে তারা মারা যান।
বংশাল থানার ডিউটি অফিসার এসআই আশিস কুমার ঘোষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, একটি ভবনের ছাদের রেলিং ধ্বসে নিচে পড়ে। এতে তিন পথচারী নিহত হয়েছেন।
তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয়রা জানান, নিহতরা সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত হয়েছেন।
এদিকে, ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ইন্সপেক্টর আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আরমানিটোলায় রেলিং ধসে তিনজন নিহত হয়েছেন। খিলগাঁও নির্মাণাধীন ভবন থেকে পার্শ্ববর্তী দোতলা একটি ভবনে একটি ইট পড়ে একজন আহত হওয়ার খবর আমরা পাই। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাইনি। ইট পড়ার সত্যতা পাওয়া গেছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র বলছে, সূত্রাপুর স্বামীবাগ আট তলা একটি ভবন অন্য একটি ভবনে হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। সূত্রাপুর স্টেশন ঘটনাস্থলে গেছে।
সূত্র জানায়, কলাবাগানের আবেদখালী রোড একটি সাততলা ভবন হেলে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশন থেকে একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গমন করেছে। এখনও হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। ভবন ঠিক আছে, লোকজন আতঙ্কিত হয়ে ফোন করেছিল। এনটিভি