পাঁচ দফা দাবির দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হলে হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
পাঁচ দফা দাবির দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হলে হল ছাড়বে না ঢাকা মেডিকেল কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় ঢামেক কর্তৃপক্ষের অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) কর্তৃপক্ষের ঘোষণার পরও কলেজ ত্যাগ বা আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত থেকে সরেননি শিক্ষার্থীরা। বরং তারা পাল্টা ঘোষণা দিয়েছেন কলেজ প্রশাসনের একতরফা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন এবং হল ত্যাগ করবেন না।
এর আগে সকাল থেকে পাঁচ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।
এরপর বিকেলে কলেজ প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে ২২ জুন দুপুর ১২টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম বলেন, ঢামেকের একাডেমিক ভবন ও হোস্টেলের অবকাঠামোগত দুরাবস্থা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চলমান অচলাবস্থা নিরসনকল্পে একাডেমিক কাউন্সিলের আজ এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ একাডেমিক কাউন্সিল ছাত্রছাত্রীদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে। সেজন্য এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। আবার অনেকবার নোটিশ দেয়া সত্ত্বেও এবং বিকল্প আবাসন তৈরি করা সত্ত্বেও কয়েকটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অসহযোগিতায় হল খালি করা যাচ্ছে না।
অধ্যক্ষ জানান, নতুন ব্যাচ কে-৮২ স্বপ্রণোদিত অথবা প্ররোচিত হয়ে তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম বয়কট করে। ফলে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রমে অচল অবস্থা সৃষ্টি হয়। অচলাবস্থার নিরসনের লক্ষ্যে রোববার (২২জুন) বেলা ১২টার মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পেশাগত এমবিবিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী এবং বিদেশি শিক্ষার্থীরা এর আওতামুক্ত থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ মে থেকে পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে কয়েকবার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম বরাবর স্মারকলিপিও দেন তারা।
পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো:
১. ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাসের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজেট পাস করতে হবে।
২. নতুন আবাসন ব্যবস্থা তৈরির আগ পর্যন্ত বসবাসের জন্য বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. নতুন আবাসন ও বিকল্প আবাসনের বাজেট আলাদাভাবে পাস করতে হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪. পুরনো একাডেমিক ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা পরিত্যক্ত ঘোষণা করে অন্যত্র স্থানান্তর এবং নতুন ভবনের জন্য বাজেট পাস করতে হবে।
৫. কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে প্রতিনিধি নিযুক্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তৌহিদুল আবেদিন তানভীর নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, সাত থেকে আট বছর ধরে আমাদের এ সমস্যা। আমরা বিভিন্ন সময় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। গত ২৮ মে থেকে আমরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করি। এরমধ্যে কয়েকবার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও অধ্যক্ষ বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু আমাদের কোনো আশ্বাস দেয়া হয় না। এরপর ৬ জুন থেকে সব একাডেমিক কাজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এসে দেখে গেছেন। মন্ত্রণালয় থেকে যদি আমাদের আশ্বাস দিত বা আমাদের সঙ্গে কথা বলত, তাহলে আমরা অন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতাম।
তবে এসময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সব ধরনের সেবা কার্যক্রম চালু থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।