News update
  • UN Calls for Calm in Bangladesh After Protest Leader’s Killing     |     
  • DMP issues 7 traffic directives for Osman Hadi’s Janaza     |     
  • Vested quarter fuelling chaos to impose new fascism: Fakhrul     |     
  • Hadi’s namaz-e-janaza at 2:30pm Saturday     |     
  • Jashore’s Gadkhali blooms with hope; flowers may fetch Tk4 bn      |     

সাকরাইনের নামে নৈরাজ্যকে না বলি

উৎসব 2025-01-13, 10:30pm

shakrain-festival-of-old-dhaka-5aa1a04c850776ad1a403b5e46032be91736785821.jpg

Shakrain Festival of Old Dhaka.



চারপাশে নদী ঘেরা সুনসান ঢাকা একটা সময়ে পৃথিবীর সেরা শহর ছিল। সবুজ এই শহরের আতিথেয়তায় ছুটে আসত সবাই । ছিমছাম সাকরাইন ছিল স্থানীয় মানুষের অন্যতম আনন্দ বিনোদনের অবলম্বন। ঘরে ঘরে পাড়া মহল্লা হয়ে যেত একাকার। পারিবারিক পরিবেশে উদযাপন হত সাকরাইন। সাধ্য অনুযায়ী রান্নাবান্না, পিঠাপুলি তৈরি আর জামাই বাড়ির জন্য লাটাই উপহার থাকত ঐতিহ্যবাহী সাকরাইনে।

হাল আমলে পুরান ঢাকার মানুষের জীবন-ব্যাবস্থায় সাকরাইন হয়ে উঠেছে এক বিভীষিকা। ১৪ই জানুয়ারি আগের রাত থেকেই প্রায় ছাঁদের দখল চলে যায় উঠতি বয়সী তরুণদের কাছে , পুরান ঢাকার ভবন মালিকের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ; বিশেষত সূত্রাপুর কোতয়ালি এলাকায় । ফজরের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগেই ভবন গুলো কেঁপে উঠা শুরু করে প্রচন্ড শব্দ বোমায়। আশে পাশে অচেনা তরুন-তরুণীর মুখ। সরু গলিতে সারাদিন গুন্ডা নামক যানটির বিকট হর্ন। বিকেল গড়াতেই চোখ ঢুলু ঢুলু , টলায়মান পায়ে ছেলে মেয়েগুলো ঝুমতে থাকে গলির এ মাথা ও মাথা ; দেখা মেলে অদ্ভুত আকৃতির চুল-পোষাকের বাহার। আহারে প্রিয় মা-বাবা জানতেও পারেনা তার সন্তানের বেড়ে উঠা ! সন্ধ্যা হতে ভয়াবহ আতসবাজি ; যার রেশ চলে পরদিন পর্যন্ত !

এদিকে ঘরের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠদের জীবন যায় যায়। শিশু- কিশোরেরা ছটফট করতে থাকে নির্মল বিনোদনের আশায় । ঘরের বউঝিরা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, সকল বাইরের কাজকর্ম। মুসল্লিদের ঘাড় মারিয়ে প্রতিনিয়ত সামনের কাতারে দাঁড়ানো ব্যাক্তিটিও ভূলে যায় সৎ প্রতিবেশির দায়িত্ব । মসজিদ মন্দিরে দাঁড়িয়ে থাকাও দায়। কোন রকমে দিনটা পাড় করলেই বাঁচে এলাকার মানুষজন ।

গত কয়েক বৎসরে পুরান ঢাকার উৎসব সাকরাইন এভাবেই বদলেছে । হয়ে উঠেছে মানুষের জীবনের জন্য বিড়ম্বনা । এমনকি উচ্চ ছাদ থেকে পরে মৃত্যুরও ঘটনা ঘটেছে। অনেকেই পুরান ঢাকাকে এড়িয়ে চললেও ১৪ জানুয়ারি ঠিকই ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে জড়ো হয় এখানে । ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে অর্থায়ন করা হয় সম্ভবনাময় তরুণদের । দখল দেওয়ার অনুরোধ আসে ছাঁদের জন্য । পুরান ঢাকার শিক্ষা-সংস্কৃতি-পরিবেশ কিংবা ঐশ্বর্য মন্ডিত ভবনগুলোর উন্নয়ন নিয়ে তেমন কোন প্রতিবেদন প্রকাশ না করলেও , মানুষকে কষ্ট দেয়া উৎসবের সংবাদ প্রচারে চলে কাড়াকাড়ি ; চ্যানেলে চ্যানেলে উৎসবের বেসাতি আর সাক্ষাত্কারের ছড়াছড়ি!

সাকরাইন উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ টাকা অপব্যয় করে আতশ বাজি করা হয়। ফূর্তির নামে নির্লজ্জতায় ডুবে যায় সমাজের একটা অংশ। সাকরাইনকে অবলম্বন করে কর্পোরেট ব্যবসায়ীর দল সক্রিয় হয়ে ওঠে এই দিনে। জিম্মী করে ফেলে পুরান ঢাকাকে। কথায় আছে, লজ্জা উঠে গেলে কোন কিছু করতেই বাধা মানে না। নগ্নতা আর উম্মাদনার জ্বলন্ত স্বাক্ষী হয়ে থাকে দিনটি।

১৪ জানুয়ারি পৌষ মাসের শেষ দিনে হয়ে থাকে ঘুড্ডি উৎসব যা সাকরাইন নামে পরিচিত । কেমন ছিল পুরান

ঢাকার সেই দিনগুলো ? আগের দিন বাজার থেকে সূতা

কিনে লেপদি---রঙ,কাচের গুঁড়া, সিরিজ কাগজ যোগে মাঞ্জা দেওয়া হতো ; নিজের না থাকলে বড় ভাইদের বাড়তি লাটাইটাতে।যোগাড় করা হতো লগ্গা মানে বাঁশ। লগ্গার মাথায় বাঁধা হতো বড়ই গাছের কাঁটা , সহজে কাঁটা পড়া ঘুড়ি ধরার জন্য । টাকা-পয়সার টানাটানি থাকলেও অগ্রিম জমা দিয়ে আনা হতো মাইক।

মোড়ের হোটেলগুলোয় চায়ের কেটলিতে ধোয়া উঠার আগেই ঘুড্ডিবাজরা উঠে যেত ছাঁদে। শুধুমাত্র ফজর নামাজ শেষের অপেক্ষা । মাইক ছেড়ে হাতে লাটাই আকাশে রঙ বেরঙের ঘুড্ডি---চোখদার মালাদার চশমাদার চক্ষুদার পঙ্খীরাজ গাহেলদার আরও কত নামের ! নাস্তায় রাতের দুধে ভেজানো বাখরখানি কিংবা সকালে তৈরী পিঠা-মোয়া। শ্বশুর বাড়ি হতে উপহারে প্রাপ্ত লাটাই পিঠার ভাগবাটোয়ারা চলত পাড়াপড়শির সাথে। সারাদিন একে অপরের ঘুড্ডি কাঁটাকাটি কিংবা বিজয়ীর ছাদ হতে সদলবলে চিৎকার ভাকাট্টা লোট লোট লোট ! ! !

ঐশ্বর্য মন্ডিত ঢাকার গর্বিত বাসিন্দা হিসেবে সহকর্মীরা আমার কাছে জানতে চান সাকরাইন নিয়ে, অনেকেই দাওয়াত পেতে উদগ্রীব। বদলে যাওয়া উৎসব নিয়ে আমি বিব্রত। ঢাকার ভেতরে বাইরে থেকে আত্মীয়রা উঠবে কারও ছাদে। আমিও ঘুড্ডি উড়াতে চাই ; বন্ধু বান্ধব সন্তানদের নিয়ে। তবে ঐতিহ্যের নামে প্রতিবেশীর প্রতি জুলুম কিংবা মানুষকে কষ্ট দিয়ে নয়। একদিন এসবের হিসাব দিতে হবে। আসুন সাকরাইনের নামে এই নৈরাজ্যকে না বলি। ঐতিহ্য আর আতিথেয়তা শহর ঢাকাকে রক্ষায় এগিয়ে আসি। আমাদের ভালোবাসাই শহর ঢাকাকে বাঁচিয়ে রাখবে।– প্রেস বিজ্ঞপ্তি