News update
  • Young disabled people of BD vow to advocate for peace     |     
  • World Leaders Urged to Defend Human Rights and Justice     |     
  • Vegetable prices remain high, people buy in small quantities     |     
  • Off-season watermelon brings bumper crop to Narail farmers     |     
  • Climate Change Drives Deadly Floods, Storms, and Water Crises     |     

চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যে কারণে অ্যাকাউন্ট খুলছে বাংলাদেশ

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক অর্থনীতি 2024-03-25, 7:03am

tyyyy-9be6da24e6f636870e20c553b40921461711328666.jpg




চীনের সঙ্গে সরাসরি লেনদেন চালু করতে সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়নায় অ্যাকাউন্ট খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। ডলারের বিকল্প মুদ্রায় লেনদেন বাড়াতেই বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক এই উদ্যোগ নিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বিবিসি বাংলাকে জানান, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে আমরা অ্যাকাউন্ট মেইনটেইন করি।"

"ইউয়ান আমাদের অফিসিয়াল অ্যাপ্রুভ কারেন্সি। এতদিন খোলা হয়নি। এখন আমরা এই অ্যাকাউন্ট খুলতে চাচ্ছি। তবে কবে নাগাদ এই অ্যাকাউন্ট খোলা হবে টাইমলাইন এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে প্রক্রিয়া অগ্রসর হয়েছে", আরও জানান তিনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঋণ পরিশোধই এই উদ্যোগের অন্যতম উদ্দেশ্য।

এর ফলে ডলারের উপর নির্ভরতা কমবে বলে মনে করেন ব্যাংকাররা।

কারণ যখন অন্য মুদ্রায় লেনদেন করা যাবে তখন বৈদেশিক মুদ্রার চাপ ডলারের উপর পড়বে না।

ইউয়ানে লেনদেন করে ডলার সংকট কাটাতে চায় বাংলাদেশ

বিশ্বের অন্যত্র যেখানে বাংলাদেশের অ্যাকাউন্ট

বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড, সুইটজারল্যান্ড, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইতালি, ফ্রান্স-সহ ১১টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

‘নস্ট্রো’ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের লেনদেন নিষ্পত্তি হয়।

চীনের সঙ্গে লেনদেন নিষ্পত্তিতে এইচএসবিসি বেশি ব্যবহার হয় ।

২০২২ সাল থেকে চীনের মুদ্রা ইউয়ানে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

তীব্র ডলার সংকটের কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের বিষয়টি আলোচনায় আসে।

বিশ্বের পাঁচটি দেশের মুদ্রাকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ 'হাই ভ্যালু কারেন্সি' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। চীনের ইউয়ান তাদের মধ্যে অন্যতম।

২০১৬ সালে আইএমএফ-এর কারেন্সি বাস্কেটে ইউয়ান স্বীকৃতি পেয়েছে। এরপর থেকে আইএমএফ-র পর্যালোচনায় মুদ্রা হিসেবে ইউয়ান আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়েছে।

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের মাধ্যমেই বাংলাদেশের অধিকাংশ লেনদেন হয় ।

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেরও বেশির ভাগ রক্ষিত আছে সেখানে।

বাংলাদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় অন্য যে কোনও দেশের লেনদেন নিষ্পত্তির বার্তা পাঠানোর একমাত্র উপায় ‘সুইফট’।

বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার-ব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন-টিই (সুইফট) ব্যবহার করে।

ডলারের প্রভাব কমিয়ে বিকল্প মুদ্রায় লেনদেন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাইরে বড় অর্থনীতির কয়েকটি দেশ বেশ আগে থেকে চেষ্টা করছিল। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে রাশিয়া ও চীন।

গত বছরের জুলাই থেকে ভারতের সাথে সরাসরি রুপিতে লেনদেন করার ব্যবস্থা চালু হয়েছে।

২০১৬ সাল থেকে রাশিয়া বাংলাদেশকে তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লেনদেনের বার্তা প্রেরণ ব্যবস্থা ফাইন্যান্সিয়াল মেসেজিং সিস্টেমে (এসপিএফসি) যুক্ত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে।

ইউয়ানকে কেন গুরুত্ব?

বাংলাদেশের রূপপুরে রাশিয়ার ঋণে যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প হচ্ছে করোনা পরবর্তী সময়ে তার ঋণের কিস্তি ফেরত দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।

২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমেরিকা ও ইউরোপ রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন রকম নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়ার অর্থনৈতিক লেনদেনের রাস্তা সংকীর্ণ করে দেয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের প্রাথমিক কাজের জন্য নেওয়া বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধও বাধাগ্রস্ত হয়।

যুদ্ধের পর ডলারের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র-সহ অনেক দেশই সুদের হার বাড়িয়ে দেয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর ডলার চলে গেছে। বাংলাদেশে ২০২১ সালে ৮৪ টাকায় থাকা ডলার এখন ১১৭ টাকা থেকে ১১৯ টাকায় কিনতে হয়।

আর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি অনুসারে ঋণের প্রথম ধাপের সুদের কিস্তি শোধ হচ্ছিলো ডলারে।

এই যুদ্ধের জেরে পশ্চিমা দেশগুলো ২০২২ সালে আর্থিক লেনদেনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সুইফট থেকে রাশিয়াকে বের করে দেয়। ফলে ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে জটিলতায় পড়ে বাংলাদেশ।

রূপপুর প্রকল্পের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছিল বাংলাদেশ।

যার ঋণের কিস্তি শোধ ২০২৭ সালের মার্চ থেকে শুরু হওয়ার কথা।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ রূপপুরের ঋণ শোধ করতে হবে ২৮ বছরে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এর ফলে দেশটির পাওনা প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার সোনালী ব্যাংকে একটি ‘স্ক্রো’ অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে জমা রাখা হচ্ছে।

বৈশ্বিক ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ও রাশিয়া ডলারের বিকল্প মুদ্রা ইউয়ানে ঋণ শোধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। যেটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত চীনা নেটওয়ার্ক ক্রস বর্ডার ইন্টার-ব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেম (সিআইপিএস) নামে পরিচিত।

চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা ও দেশটির লেনদেন ব্যবস্থায় যুক্ত হয়ে রাশিয়ার ঋণ শোধের এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এরই প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সালের এপ্রিলে রূপপুরের পাওনা রাশিয়াকে পরিশোধ না করে পিপলস ব্যাংক অব চায়নার মাধ্যমে পরিশোধের জন্য একটি প্রটোকল চুক্তি সই হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল চলতি মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে চীনের আমন্ত্রণে দেশটি সফরে যায়। এ সময় চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অব চায়নার সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিনিধি দলটি।

একই সাথে ওই ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা ও লেনদেনের বার্তা প্রেরণের মাধ্যম 'দ্য ক্রসবর্ডার ইন্টার-ব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেমে' (সিআইপিএস) যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয় ওই বৈঠকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বিবিসি বাংলাকে জানান, “প্রত্যেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরই অ্যাকাউন্ট খোলার কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। আমাদের সাথে অনেকের রয়েছে। আমাদেরও রয়েছে অনেক ব্যাংকে। ইতোমধ্যেই চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে টাইমলাইন বলা যাবে না এখনই।”

যদিও রূপপুরের বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের সাথে এই অ্যাকাউন্ট খোলার সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন তিনি।

“কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পর্ক কোনও স্পেসিফিক অ্যাকাউন্টের কারণে হয় না। ওভারঅল কারণে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এটার সাথে কোন সম্পর্ক নেই”, জানান তিনি।

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক

চীন ও ভারত এই দুটি দেশ থেকেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে থাকে। তবে রফতানি দুই দেশেই খুব কম হয়।

অথচ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে মোট রফতানি আয়ের ৮৫ শতাংশের মতো আসে ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে চীন থেকে আমদানি হয়েছে এক হাজার ৭৮৩ কোটি ডলার। যা মোট আমদানির ২৬ দশমিক ১০ শতাংশ।

অথচ দেশটিতে রফতানি হয়েছে মাত্র ৬৮ কোটি ডলার।

আগের অর্থ বছরে দেশটি থেকে দুই হাজার ৮৮ কোটি ডলারের আমদানি হয়েছিল। যা ছিল মোট আমদানির ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।

আর রফতানি আয় এসেছিল এক বিলিয়ন ডলারেরও কম।

ব্যাংকাররা বলছেন, বিশ্বের স্বীকৃত পাঁচটি কারেন্সির একটা বাস্কেট আছে।

এগুলোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বাণিজ্যের লেনদেন করা যায়। তবে, অন্য বৈদেশিক মুদ্রা ছাপিয়ে ডলারের প্রভাব এখনও বেশি।

এক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে আরেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে এসব স্বীকৃত বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভ রাখা হয়।

বাংলাদেশ যখন অন্য দেশের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করবে তখন এটাকে বলে ‘নস্ট্রো’ অ্যাকাউন্ট।

আর অন্য দেশ বাংলাদেশে যে অ্যাকাউন্ট করবে সেটাকে বলা হয় ‘ভ্রস্ট’ অ্যাকাউন্ট। এসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেনের কাজ সম্পন্ন হয়।

সাবেক ব্যাংকার নুরুল আমিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ইউয়ান স্বীকৃত ফরেন কারেন্সি। যেহেতু রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আছে, তাই এখন ভায়া হয়ে এই ইউয়ানে ট্রানজাকশন হবে। যদি সবাই অ্যাক্সেপ্ট করে তবে তাতে সমস্যা নাই।”

“এখানে মূল বিষয় হচ্ছে ডলারের ডিপেন্ডেন্স কমবে। যখন আমি অন্য বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন করব তাহলে ওই ফরেন কারেন্সির চাপটা ডলারের উপর পড়ে না।"

"এভাবেই বিভিন্ন কারেন্সিতে শিফট করা যাবে। যে কোনওসেন্ট্রাল ব্যাংক এ ধরনের কনভারশন করতে পারে”, বলেন মি. আমিন। বিবিসি বাংলা