News update
  • Kenya floods death toll at 228 as crisis persists     |     
  • Floods in Brazil kill at least 57, force 70,000 from homes     |     
  • Sundarbans fire: Low tide delaying dousing operation     |     
  • 2 Bangladeshis seriously injured in ‘landmine explosion’ near Myanmar border     |     
  • Japan, India reject Biden's describing them as xenophobic countries     |     

ভারতীয় ধনকুবের আদানি কীভাবে একদিনে ২৫০০ কোটি ডলার হারালেন

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক অর্থনীতি 2023-01-29, 1:48pm

img_20230129_134916-c28c1b9e86d6f9023a6db1a75f84a4411674978615.png




বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি গৌতম আদানির জন্য এ সপ্তাহটা ছিল রোলারকোস্টারের মতো। নিজের চোখের সামনেই তিনি দেখলেন তার প্রায় ২৫০০ কোটি ডলারের ব্যক্তিগত ধনসম্পদ উধাও হয়ে গেছে।

গত তিন বছরে তার বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম দশগুণ বেড়ে যাওয়ায় ৬০ বছর বয়সী এই ভারতীয় ব্যবসায়ী এশিয়ার সবচেয়ে ধনী এবং বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হন।

কিন্তু এ সপ্তাহেই নিউইয়র্ক-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিতর্কিত এক রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের মূল্যে ধস নামে।

বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে পাওয়ার জন্য আদানি গ্রুপ এখন যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছে।

কিন্তু কে এই গৌতম আদানি? কেমন করে তিনি এতো ধনসম্পদের মালিক হলেন, এবং কেনই বা তার বিশাল বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য এরকম ঝড়ের মুখে পড়ল?

মধ্যবিত্ত পরিবার

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের ব্যবসায়ী গৌতম আদানি স্কুলে লেখাপড়া শেষ করেন নি ।

এর পর তিনি তার পিতার গার্মেন্টস ব্যবসায় যোগ না দিয়ে, হীরার ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন।

আরো পরে তিনি তার ভাইয়ের প্লাস্টিক কারখানা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৮৮ সালে তিনি আদানি এক্সপোর্টস নামের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন- যা পরে আদানি এন্টারপ্রাইজেসে পরিণত হয়। তার বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে এটিই মুখ্য প্রতিষ্ঠান।

আজকের দিনে ভারতীয় তিনটি বৃহৎ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গৌতম আদানি এন্টারপ্রাইজেস একটি। এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে।

গৌতম আদানির বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ভারতে সমুদ্র বন্দর ও বিমানবন্দর পরিচালনাকারী বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সর্ববৃহৎ কোম্পানি, সিমেন্ট উৎপাদনকারী দ্বিতীয় বৃহৎ প্রতিষ্ঠান।

আদানি গ্রুপের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে যে মি. আদানি হচ্ছেন প্রথম প্রজন্মের ব্যবসায়ী যার চোখে “দেশ গঠনের জন্য কল্যাণকর প্রবৃদ্ধি অর্জনই মূল দর্শন।”

এই গ্রুপের পরিচালিত অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান ভারত সরকার বেশ ভালোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৩ সালে গোয়ায় গৌতম আদানির ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেসময় বিজেপি নেতা মি. মোদী ছিলেন গুজরাট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

সমালোচকরা বলেন যে ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর আদানি গ্রুপ জাহাজ চলাচল ও বিমানবন্দর পরিচালনার বেশ কয়েকটি বড় ধরনের কাজ পায়।

বিরোধী দলগুলো এসব ঠিকাদারি কাজকে স্বজনপ্রীতির প্রমাণ হিসেবেও উল্লেখ করেছে।

মি. আদানি এসব অভিযোগ দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এসব কাজের টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই তার কোম্পানি এসব কাজ পেয়েছে।

“আমি আপনাদের বলতে চাই যে আপনি তার (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী) কাছ থেকে ব্যক্তিগত কোনো সুবিধা নিতে পারবেন না,” ইন্ডিয়া টিভিকে বলেন মি. আদানি।

“নীতিমালা নিয়ে আপনি তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন, দেশের স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করতে পারেন, কিন্তু এসব নীতিমালা সবার জন্যই তৈরি করা হয়েছে, শুধুমাত্র আদানি গ্রুপের জন্য নয়,” বলেন তিনি।

তবে ভারতে যে দ্রুত গতিতে মি. আদানির ধনসম্পদ বেড়ে উঠেছে, তা নিয়ে দেশটিতে কথাবার্তা হচ্ছে।

নরেন্দ্র মোদী যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, সেসময় গৌতম আদানির সম্পদের পরিমাণ ছিল ৭০০ কোটি ডলার। কিন্তু এই সম্পদ বাড়তে বাড়তে গত বছর ১৫০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।

এই হিসাব ভারতের লাখ লাখ মানুষের অবস্থার একেবারে বিপরীত। দেশটিতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও, ৬০% মানুষ দৈনিক ৩.২০ ডলারের নিচে আয় করে, যে উপার্জনকে বিশ্বব্যাংক দারিদ্রের সীমা হিসেবে নির্ধারণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনামলের প্রথম সাত বছরে মাথাপিছু আয় ৫০ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে।

যে রিপোর্টের কারণে ধ্বস

বিনিয়োগ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ বুধবার তাদের রিপোর্টে মি. আদানির বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে “কর্পোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির” অভিযোগ করেছে।

নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক এই কোম্পানির “শর্ট-সেলিং” এর ব্যাপারে বিশেষত্ব রয়েছে। এই পদ্ধতিতে কোনো কোম্পানির শেয়ারের মূল্য পড়ে গেলে, সুবিধা অর্জনের জন্য, ওই শেয়ারের ব্যাপারে আর্থিক অবস্থান নিয়ে থাকে।

হিনডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টে মরিশাস এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের মতো বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে বিভিন্ন কোম্পানিতে আদানি গ্রুপের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

রিপোর্টেও এও দাবি করা হয় যে আদানি গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির “উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঋণ” রয়েছে - যা পুরো গ্রুপটির আর্থিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে তুলেছে।

প্রতিবেদনে আরো অভিযোগ করা হয় যে ভারতে লেনদেন হওয়া শেয়ারের মূল্য নিজেদের পক্ষে নির্ধারণ করার জন্য এসব অফশোর কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে।

আদানি গ্রুপ অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে এই রিপোর্টের প্রতিবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও তারা অস্বীকার করেছে।

“পরিষ্কারভাবে, আদানি গ্রুপের কোম্পানির শেয়ার মূল্যের ওপর এই রিপোর্ট এবং তার অসমর্থিত তথ্যের ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। হিনডেনবার্গ রিসার্চ নিজেরাই স্বীকার করেছে যে আদানির শেয়ার পড়ে যাওয়া থেকে তারা লাভবান হবে,” বলছে আদানি গ্রুপ।

মি. আদানি এই হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন।

এর পরপরই হিনডেনবার্গ তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে যে তারা এবিষয়ে আদালতে লড়াই করতে প্রস্তুত।

সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়

এই রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর আদানি গ্রুপের সম্পদের মূল্য ৪৮০০ কোটি ডলার কমে গেছে।

এর ব্যাপক প্রভাবের কারণে শুধু ভারতে নয়, তার বাইরেও এই রিপোর্টের প্রভাব পড়তে পারে।

ভারতীয় ম্যাগাজিন ইন্ডিয়া টুডে গৌতম আদানিকে ‘নিউজমেকার অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

কিন্তু বিভিন্ন সময়ে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মি. আদানি তার ধনসম্পদের পরিমাণ এবং প্রভাবকে খুব বড় কিছু বলে উল্লেখ করেন নি।

“এই র‍্যাংকিং এবং সংখ্যা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়,” ইন্ডিয়া টুডেকে তিনি একথা বলেন। বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় তার অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এগুলোর সবই মিডিয়ার বাড়াবাড়ি।”

“মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার জন্য সুযোগ ও সক্ষমতা কাজে লাগানো এবং দেশ গঠনের জন্য প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে অবদান রাখা আমার জন্যে অনেক বেশি সন্তোষজনক এবং গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন তিনি।

গৌতম আদানির কোম্পানি হিনডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টের যে জবাব দিয়েছে তা থেকে ধারণা করা যায় যে মি. আদানি চুপ করে বসে থাকবেন না এবং তিনি তার কোম্পানির ক্ষতি হতে দেবেন না।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে মি. আদানি শুক্রবার ভারতের জ্বালানি মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং তার কোম্পানিকে ঘিরে এই বিতর্কের কোনো প্রভাব যাতে শেয়ার বিক্রি করে ২৫০ কোটি ডলার তোলার পরিকল্পনার ওপর না পড়ে সেবিষয়েই তিনি জোর দিচ্ছেন। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।