
পুরুষদের শুক্রাণু সাধারণত ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়স থেকে কমতে শুরু করে। এই বয়সে শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান দুটোই হ্রাস পায় এবং শুক্রাণু উৎপাদন প্রক্রিয়া কিছুটা ধীর হয়ে যায়। তবে, একজন পুরুষ ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সেও সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হতে পারেন।
প্রায় ২ বছর আগে ৮৩ বছর বয়সে চতুর্থ সন্তানের বাবা হয়েছেন হলিউড অভিনেতা আল পাচিনে। খবরটি দেখে অনেকের মনেই হয়তো কৌতূহল জাগতে পারে, কত বছর বয়স পর্যন্ত এক জন্য পুরুষ বাবা হতে পারেন?
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য—৪৩ বছর বয়স পার হলেই দ্রুত কমতে শুরু করে পুরুষের শুক্রাণুর গুণগত মান। শুধু তাই নয়, এতে ভবিষ্যৎ সন্তানের জিনগত ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
ব্রিটেনের খ্যাতনামা ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউটের গবেষকরা ২৪ থেকে ৭৫ বছর বয়সী ৮১ জন সুস্থ পুরুষের শুক্রাণু বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুক্রাণুর জিনে ‘মিউটেশন’ বা পরিবর্তন ঘটে। গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি বছর গড়ে শুক্রাণুতে ১ দশমিক ৬৭টি নতুন জিনগত পরিবর্তন যোগ হয়। অর্থাৎ যত বয়স বাড়ছে, শুক্রাণুর ডিএনএ ততটাই পরিবর্তিত হচ্ছে।
ম্যাচুরিটাস জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদেরও বাবা হওয়ার ক্ষমতা কমতে থাকে। এক্ষেত্রে শুক্রাণুর উৎপাদন কমে আসে, এমনকি এর গুণগত মানও কমতে থাকে।
নারীদের ক্ষেত্রে মেনোপজের পরে সন্তান ধারণের সম্ভাবনা আর থাকে না। তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে বিষয়টি তেমন নয়। পুরুষদের শরীরে শুক্রাণু তৈরি কখনো বন্ধ হয় না। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুক্রাণুর জেনেটিক মিউটেশন হয়। ফলে শুক্রাণুর ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্থ হয়, ও পুরুষদের বাবা হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।
গবেষণায় আরও জানা গেছে, ৪০ বছরের পরে পুরুষদের বাবা হওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। বাবা হলেও শুক্রাণুর গুণগত মান কমে যাওয়ার কারণে সন্তানের স্বাস্থ্যের উপরে তার খারাপ প্রভাব পড়ে। এক্ষেত্রে প্রিক্ল্যাম্পসিয়া বা প্রি ম্যাচিউরড বেবি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
বাবার বয়স যদি বেশি হয়, তাহলে শিশুর স্নায়ুজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি হয়। জন্মের সময়ে শিশুর জন্মকালীন ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হতে পারে। বাবার বয়স হলে সদ্যোজাতর হার্টের সমস্যা এমনকি খিঁচুনিও হতে পারে।
গবেষকদের মতে, পুরুষদের শুক্রাণুর মান সবচেয়ে বেশি উৎকৃষ্ট থাকে ২৫-৩০ বছরের মধ্যে। তাই এ সময়ের মধ্যে বাবা হওয়া সবচেয়ে ভালো।
তবে শরীরিক অবস্থা ভালো থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ৩২-৩৩ বছর পর্যন্ত বাবা হলে কোনো সমস্যা হয় না। যদিও বর্তমানে অনেকেই বেশি বয়সে বাবা হন।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, যারা ভবিষ্যতে সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাদের উচিত সুস্থ জীবনযাপন বজায় রাখা, ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে দূরে থাকা এবং প্রয়োজনে আগেভাগেই শুক্রাণু সংরক্ষণ করে রাখা।