
উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) কিংবদন্তি এ গায়িকার ৭৩তম জন্মদিন।
রুনা লায়লা 'গানের রানি', 'সুরসম্রাজ্ঞী' এবং 'সুরের দেবী' হিসেবে সমধিক পরিচিত। তিনি বাংলাদেশে চলচ্চিত্র, পপ, ফোক, আধুনিক ও উচ্চাঙ্গ সংগীতের জন্য বিখ্যাত। তবে বাংলাদেশের বাইরে গজল শিল্পী হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে তার সুনাম রয়েছে।
শৈশব থেকেই সংস্কৃতি চর্চার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত তিনি। চার বছর বয়সেই নাচের শিক্ষা নেয়া শুরু করেন রুনা লায়লা। সে সময় গানের প্রতি কিন্তু তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। বড় বোন দীনা লায়লা গান শিখতেন। ওই সময় খেলার ফাঁকে বড় বোনের সঙ্গে তিনিও বসে যেতেন রেওয়াজে, তবে সেটা নিয়মিত নয়। সে সময় গানের ওস্তাদ তার স্মৃতিশক্তি ও তাল, লয় আর সুরের জ্ঞান দেখে মুগ্ধ হন।
ওস্তাদ রুনার মাকে একদিন অনুরোধ করেন যেন তাকে গান শিখতে দেয়া হয়। মাও দ্বিধা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যান। মাত্র ১৪ বছর বয়সে সংগীতজীবনে পা রাখেন। আজ তিনি বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করা কণ্ঠসম্রাজ্ঞী, উপমহাদেশের প্রখ্যাত গানের মানুষ।
বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী ও মা আমেনা লায়লার দ্বিতীয় সন্তান রুনা লায়লা। সংগীত জীবনে ক্যারিয়ারের বয়স ৫৯ বছরেরও বেশি। দীর্ঘ এ সংগীত ক্যারিয়ারে বাংলা, হিন্দি, উর্দু, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, গুজরাটি, স্প্যানিশসহ ১৮টি ভাষায় ১৩ হাজারেরও বেশি গানে কন্ঠ দিয়ে রীতিমতো রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। রুনা লায়লাই বাংলাদেশের একমাত্র শিল্পী যিনি বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান - এ তিন দেশেই সমানভাবে জনপ্রিয়।
আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা নারী কণ্ঠশিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন রুনা লায়লা। পেয়েছেন মেরিল প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার। বাংলাদেশে স্বাধীনতা পদকসহ তার ঝুলিতে রয়েছে দেশের আরও বিভিন্ন পুরস্কার। কিংবদন্তি এ শিল্পী শুধু বাংলাদেশেই পুরস্কার পাননি, পুুরস্কার পেয়েছেন ভারত ও পাকিস্তানেও।
ভারতে দাদা সাহেব ফালকে সম্মাননা, সায়গল পুরস্কারসহ ৩টি সম্মানজনক পুরস্কার পেয়েছেন। পাকিস্তানে দুইবার পেয়েছেন সবচেয়ে সম্মানজনক নিগার পুরস্কার। আরও পেয়েছেন ক্রিটিক্স পুরস্কার, গ্র্যাজুয়েট পুরস্কার (২ বার) ও জাতীয় সংগীত পরিষদ স্বর্ণপদক।
তিনি শুধু গানই নয়, চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘শিল্পী’ নামক চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন। চলচ্চিত্রটি ইংরেজি চলচ্চিত্র দ্য বডিগার্ড-এর ছায়া অবলম্বনে চিত্রিত।
তিনি সুরকার হিসেবেও অনবদ্য। সুরকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। তার সুর করা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন আশা ভোসলে, হরিহরণ, রাহাত ফাতেহ আলী খান, আদনান সামী, আঁখি আলমগীরসহ বর্তমান প্রজন্মের একাধিক শিল্পী।
তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘ও মেরা বাবু চেল চাবিলা’, ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’, ‘সাধের লাউ’, ‘গুড়িয়াসি মুন্নি মেরি’, ‘যখন থামবে কোলাহল’, ‘আজ রাত সারারাত জেগে থাকবো’ ইত্যাদি।
প্রিয় এ শিল্পীর জন্মদিন উদ্যাপনে কোক স্টুডিও বাংলা সিজন থ্রিতে আবারও নতুন আঙ্গিকে তৈরি করেছেন ‘দামা দম মাস্ত কালান্দার’ গানটি। রুনা লায়লার গাওয়া নতুন গানটি কোক স্টুডিও বাংলার ইউটিউবে চ্যানেলে প্রকাশ পেয়েছে রোববার (১৬ নভেম্বর)। যা হৃদয় জয় করেছে সংগীতপ্রেমীদের।