News update
  • Khaleda Gets Eternal Farewell from Over a Million of Hearts     |     
  • Sea of Mourners Gathers to Pay Tribute to Khaleda Zia     |     
  • State mourning begins, state funeral for Khaleda Zia at 2 pm     |     
  • Kamal Hossain: Khaleda Zia was ‘a patriot and democratic guardian'     |     

মিয়ানমারে জান্তা সরকার কি ভেঙ্গে পড়ার হুমকিতে?

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক সংঘাত 2024-02-02, 10:40am

00da3e00-c0f4-11ee-b6f4-1169f6693117-ea2c6d6841ab0b39c7a8cad0bc8f4fab1706848850.jpg




জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে মিয়ানমার পরিস্থিতি। দেশটির বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের সাথে সীমান্তবর্তী প্রদেশে সামরিক সরকারের লড়াই এখন তুঙ্গে। এই সংঘাতের আঁচ মিয়ানমারের সীমান্ত ছাপিয়ে বাংলাদেশেও লাগছে গত বেশ কয়েকদিন ধরে।

বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গুলি ও মর্টারের শব্দে প্রকম্পিত। এখানে আরাকান আর্মির সাথে তীব্র সংঘাত হচ্ছে মিয়ানমার সৈন্যদের।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরাও সতর্ক অবস্থানে আছে। তবে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে যারা বসবাস করছেন তাদের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক কাজ করছে।

রাখাইন অঞ্চলে আরাকান আর্মি যেভাবে শক্তি বাড়িয়ে বিভিন্ন এলাকা দখল করে নিয়েছে তাদের বিচলিত হয়ে পড়েছে মিয়ানমার সরকার।

এখন থেকে তিন বছর আগে মিয়ানমারে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসিকে -কে হটিয়ে ক্ষমতা নেয় সামরিক সরকার।

এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জান্তা বিরোধী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ জোরালো হতে থাকে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। একই সাথে মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন তাদের শক্তি আরো বাড়িয়ে তোলে। এসব গ্রুপও জান্তা সরকারের সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করে।

তিন বছরের মাথায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির শান ও রাখাইন প্রদেশে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছে।

মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত, তারা এ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

“এই সংঘাত একটি ভিন্নমাত্রার ও জটিল বিষয়। এখানে নানা ধরণের পক্ষ জড়িত আছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন ব্রাসেলাস-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের টম কিন।

পরিস্থিতি এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এই সংঘাত কিভাবে শেষ হবে তার কোন সুস্পষ্ট নিশানা দেখা যাচ্ছে না।

গত তিন বছরে এসব গোষ্ঠী মিয়ানমারে ৩০০’র বেশি সামরিক চৌঁকি এবং ২০টি শহর দখল করে নিয়েছে।

প্রশ্ন উঠছে মিয়ানমারের সামরিক সরকার কি ভেঙ্গে পড়ার হুমকিতে আছে? প্রভাবশালী দেশ চীন এখানে কী ভূমিকা রাখছে?

চীনের ভূমিকা

মিয়ানমারের উপর একটা সময় চীনের বেশ প্রভাব ছিল। কিন্তু সে প্রভাব এখন অনেকটাই খর্ব হয়েছে।

তারপরেও মিয়ানমার সামরিক জান্তা সরকার ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একমাত্র মধ্যস্থতাকারী হিসেব চীন রয়েছে।

গত জানুয়ারি মাসে চীনের মধ্যস্থতায় তিনটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ও জান্তা সরকারের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে। কিন্তু সেটি কোন ফল দেয়নি।

এরপরেও বিভিন্ন স্থানে সংঘাত অব্যাহত আছে। তবে এই অস্ত্র-বিরতি চুক্তি শুধু চীন সীমান্ত সংলগ্ন শান প্রদেশের জন্য।

এই প্রদেশটিতে ১৯৪৮ সালে মিয়ানমারের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে সংঘাত চলমান আছে।

এই প্রদেশে বিদ্রোহীরা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সফলতা পেয়েছে। চীনের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও শান প্রদেশে বিক্ষিপ্ত সংঘাত চলছে। তবে দেশের অন্য জায়গায় এই যুদ্ধবিরতি কোন কাজে লাগেনি।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, চীন এখানে মধ্যস্থতা করেছে তার নিজের স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য। এখানে মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি গৌণ বিষয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নর্দার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক থারাফি থান এশিয়ান টাইমসে এক নিবন্ধে লিখেছেন – মিয়ানমারের অস্থিরতা যাতে সীমান্ত ছাপিয়ে চীনের ভেতরে না যায় সে জন্য তারা বেশ উদ্বিগ্ন।

যুদ্ধবিরতি নিয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে বিবৃতি দিয়েছে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, চীনের সীমান্তে তাদের অধিবাসীদের ক্ষতি না করা এবং মিয়ানমারের ভেতরে চীনের প্রকল্পে যারা কাজ করছে তাদের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সে নিশ্চয়তা দিয়েছে উভয়পক্ষ।

এখানে উভয় পক্ষ বলতে সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং মিয়ানমারের সৈন্যদের বোঝানো হয়েছে। এজন্যই চীন মিয়ানমারে অস্থিরতা শান্ত করার চেষ্টা করছে।

মিয়ানমার জান্তা সরকারের উপর চীন 'খুশি নয়' বলে উল্লেখ করেন ব্রাসেলাস-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের টম কিন।

কারণ, চীনের বিভিন্ন অপরাধী-চক্র শান প্রদেশে কিংবা মিয়ানমারের ভেতরে বসে নানা ধরণের সাইবার অপরাধ, মাদক, মানব-পাচারের সাথে জড়িত।

বিষয়টি চীনের জন্য সমস্যা তৈরি করলেও মিয়ানমার জান্তা সেটি দমনের কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

টম কিন বলছিলেন, “চীনের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের শান প্রদেশে অস্ত্র-বিরতির জন্য চীন চেষ্টা করলেও রাখাইনে অস্ত্র বিরতি নিয়ে তাদের তেমন কোন তৎপরতা নেই।

আরাকান আর্মি যতদিন পর্যন্ত রাখাইনে চীনের স্বার্থের উপর আঘাত করবে না ততদিন পর্যন্ত চীন কিছু বলবে বলে মনে হয়না”।

মিয়ানমারের যুদ্ধবিরতি চীনের চাওয়ার উপর এখন আর খুব বেশি নির্ভর করেনা। কারণ, ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে মিয়ানমারে যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের সাথে চীনের ভালো সম্পর্ক থাকে। এর আগে অং সান সুচির সরকারের সাথেও তাদের ভালো সম্পর্ক ছিল।

“আমার মনে হয় চলমান সংঘাতে চীন কোন পক্ষ নেবেনা। তারা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকেও মদদ দেবেনা, মিয়ানমার সামরিক সরকারকেও সাহায্য করবেনা,” বলেন টম কিন।

ব্যাংকক-ভিত্তিক বিশ্লেষক ডেভিড স্কট ম্যাথিসন বিবিসি বাংলাকে বলেন, মিয়ানমারে সংঘাতের সময় চীন চাইবে তার স্বার্থ রক্ষা করতে।

“চীন তার নিজের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি জড়িত,” বিবিসি বাংলাকে বলেন মি. ম্যাথিসন।

তাছাড়া মিয়ানমার-জুড়ে সব পক্ষকে একসাথে করে একটি যুদ্ধবিরতি করানোর সামর্থ্যও চীনের নেই বলেন মনে করেন মি. ম্যাথিসন।

মিয়ানমারে কোন ধরণের রাজনৈতিক পরিবর্তন হলে সেটি চীন কিভাবে দেখবে সেটিও একটি বড় বিষয়। এক্ষত্রে পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আমলে নেবে চীন।

তবে মিয়ানমারে জান্তা বিরোধী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্মেন্ট বা এনইউজি, যারা দেশের বাইরে থেকে পরিচালিত, তাদের ব্যাপারে চীনের আপত্তি রয়েছে বলে মনে করেন টম কিন। কারণ, ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টকে পশ্চিমা দেশগুলো সমর্থন দেয়।

যদিও এনইউজি এই ধারণা পরিবর্তনের চেষ্টা করছে এবং তারা চীন নিয়ে একটি নীতিও প্রকাশ করেছে।

কিন্তু তারপরেও তারা যে পশ্চিমা-সমর্থিত নয় এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন বলে মনে করেন টম কিন।

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে যদি স্থিতিশীলতা না আসে তাহলে সেটি চীনের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে থাকবে।

হুমকির মুখে সামরিক জান্তা?

ব্যাংকক-ভিত্তিক বিশ্লেষক ডেভিড স্কট ম্যাথিসন বিবিসি বাংলাকে বলেন, মিয়ানমারের জান্তা সরকার হুমকির মুখে পড়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে বিদ্রোহীদের প্রতিরোধের মুখে তারা সহসা ভেঙ্গে পড়বে কী না, সেটি এখন বলা কঠিন বলে তিনি মনে করেন।

মি. ম্যাথিসন বলেন, সংঘাত যেভাবে চলছে এবং সেনাবাহিনীর যে শক্তি আছে তাতে মনে হচ্ছে এটার সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকবে এবং দীর্ঘমেয়াদে সেনাবাহিনীর পরাজয় হতেও পারে।

তবে, সেটা কতদিন লাগবে কিংবা সেটা কীভাবে হবে তা বলা কঠিন।

মিয়ানমারে এখন যে পরিস্থিতি সেটিকে নজিরবিহীন বলে বর্ণনা করছেন ব্রাসেলাস-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের টম কিন।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছে।

“কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে মিয়ানমার জান্তা সরকার ভেঙ্গে পড়ার হুমকিতে আছে। এই সংঘাত মূলত রাখাইনে ও শান প্রদেশে সীমান্তবর্তী এলাকায় সীমাবদ্ধ রয়েছে। দেশের ভেতরের দিকে এখনো ছড়ায়নি।”

এটা নিশ্চিতভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরো জটিল করবে। আরাকান আর্মি রাখাইনে একটি রাজনৈতিক শক্তি। রোহিঙ্গারা যেসব এলাকায় বসবাস করতো এবং এখনো যেসব এলাকায় তারা বসবাস করে সেখানে আরাকান আর্মি তাদের শক্তি প্রতিষ্ঠা করেছে।

মি. ম্যাথিসন বলেন, রাখাইনে সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিলম্ব হবে। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো।

একটা যুদ্ধবিরতি হলেও সেটি টেকসই হবেনা বলে মনে করেন টম কিন। অস্ত্র-বিরতি হলেও সংঘাত যে কোন সময় শুরু হবে। সেখানে একটা সংঘাতে পরিবেশ থাকবে সেখানে গিয়ে রোহিঙ্গারা নিরাপদে বসবাস করতে পারবে না।

“আরাকান আর্মির সাথে আলোচনা না করে সেখানে রোহিঙ্গাদের কিভাবে ফেরত পাঠানো যাবে?” প্রশ্ন তোলেন টম কিন।

যদিও রোহিঙ্গাদের প্রতি আরাকান আর্মি দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। তারা রোহিঙ্গাদের শত্রু মনে করেনা। তিনি মনে করেন, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিকে সতর্কতার সাথে দেখতে হবে বাংলাদেশকে। বিবিসি নিউজ বাংলা।