News update
  • Sea of Mourners Gathers to Pay Tribute to Khaleda Zia     |     
  • State mourning begins, state funeral for Khaleda Zia at 2 pm     |     
  • Kamal Hossain: Khaleda Zia was ‘a patriot and democratic guardian'     |     
  • High medicine prices threaten healthcare of poor communities     |     

ডলারের উর্ধ্বগতিতে বিপদে বাংলাদেশের বহু মানুষ

গ্রীণওয়াচ ডেস্ক ব্যাঙ্কিং 2022-07-28, 9:06pm




বাংলাদেশে ডলারের দাম খোলাবাজারে সর্বোচ্চ ১১০ টাকায় পৌঁছানোর পর যাদের জরুরি ভিত্তিতে ডলার প্রয়োজন, তারা বড় সমস্যায় পড়েছেন।

বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য যাদের বিদেশে যেতে হচ্ছে, তারা সঙ্কটে পড়েছেন। একইসাথে শিক্ষার জন্য বিদেশ যাত্রাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই নানা সমস্যার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, খোলাবাজারে মানি চেঞ্জারগুলোতে ডলার নিয়ে কোন কারসাজি হচ্ছে কীনা তা খতিয়ে দেখতে তারা ১০টি টিম মাঠে নামিয়েছে ।

ডলারের বাজার উর্ধ্বমুখী হওয়ায় বিদেশে চিকিৎসার খরচ সামলাতে যারা হিমশিম খাচ্ছেন - তাদের মধ্যে আছেন ঢাকার একজন নারী যিনি ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য গত তিন মাসে দুই বার ভারতে গেছেন।

আগামী সপ্তাহে তাকে আবার ভারত যেতে হচ্ছে। কিন্তু এবার তিনি সঙ্কটে পড়েছেন ডলার নিয়ে।

নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানিয়েছেন, ভারতে এই দফায় চিকিৎসার জন্য তার যে পরিমাণ ডলারের প্রয়োজন, ১১০ টাকা বা তারও বেশি দাম দিয়ে তিনি ব্যাংক এবং এমনকি খোলাবাজার থেকেও পর্যাপ্ত ক্যাশ ডলার সংগ্রহ করতে পারেননি।

এই নারী এখন ক্রেডিট কার্ডে ডলার এনডোর্স করে তার ওপর ভর করেই চিকিৎসার জন্য ভারত যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, "ডলারের দাম অনেক বেশি। তারপর ব্যাংকে পাওয়া যাচ্ছে না, তারা দিচ্ছে না।"

"এখন ক্রেডিট কার্ড নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু সব জায়গায় তো ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা যায় না। ডলারের দাম বেশি হওয়ায় আমার চিকিৎসা খরচ বেড়ে যাচ্ছে" - বলেন ঐ নারী।

বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যাচ্ছেন এমন অনেকেও সমস্যায় পড়ছেন। তাদের একজন এইচ এম মর্তুজা - যিনি যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করতে যাচ্ছেন ।

তিনি জানিয়েছেন, ডলারের চড়া দামের কারণে তাকে এখন বিমান ভাড়া থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর সেখানকার খরচসহ সব কিছুর জন্য বাড়তি অর্থ যোগাড় করতে হচ্ছে।

এইচ এম মর্তুজা বলেন, "এখন ডলারের উর্ধ্বমুখী বাজারের কারণে আমার খরচ ২৫ শতাংশ বেশি হবে। এছাড়া ডলারের সঙ্কটের কারণে বিমানের টিকেটের দামও বেড়ে গেছে।"

তিনি উল্লেখ করেন, যে টিকেট ৭০ হাজার টাকায় আগে পাওয়া যেত। তিনি এখন সেই টিকেট কিনেছেন এক লাখ ৭২ হাজার টাকায়।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর খরচের জন্য তার সাথে কিছু ডলার নিতে হচ্ছে, সেই ডলার কিনতেও তাকে বাড়তি অর্থ গুণতে হচ্ছে।

মি: মর্তুজা বলেন, "আমার মত শিক্ষার্থী আরও যারা যাচ্ছে, তাদের চতুর্মুখী সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।"

বিদেশে বেড়াতে যাওয়ার ক্ষেত্রেও বাধার সৃষ্টি করছে ডলারের অস্থির বাজার। উত্তরাঞ্চলীয় জেলা বগুড়ার একজন ব্যবসায়ী মাহাদী হাসান কয়েকজন বন্ধুর সাথে দুবাই বেড়াতে যাবেন আগামী সপ্তাহে।

কিন্তু তিনি বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে গিয়ে ডলার কিনতে পারেননি। মি: হাসান দেখছেন যে খোলাবাজারে দফায় দফায় ডলারের দাম বাড়ছে।

এখন তার দুবাই যাওয়ার সময় যত ঘনিয়ে আসছে, এই যাত্রা নিয়ে তার অনিশ্চয়তা অনিশ্চয়তাও ততই বাড়ছে।

তিনি বলেন, "আমি যখন ব্যাংকে যাচ্ছি, ব্যাংক বলছে, তাদের কাছে ডলার নাই। মানি চেঞ্জাররা প্রতিমুহূর্তে দাম বাড়াচ্ছে।"

"দুই দিন আগে আমি সকালে যখন মানি চেঞ্জারে যাই, তারা প্রতি ডলার ১০২ টাকা চায়। ভাবলাম দাম বেশি পরে কেনা যাবে। সেদিনই দুই ঘণ্টা পর গেলাম, তখন ১০৬ টাকা চাইলো।

"আমি সেদিন আর কিনলাম না। পরদিন আমার কাছে ১১০ টাকা চাইলো। আজ বুধবার আবার মানি চেঞ্জারে গেলাম, তারা ১১২ টাকা চায় প্রতি ডলার। এটা অন্য রকম একটা পরিস্থিতি" - বলেন মি: মর্তুজা।

বাজারে তদারকিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের টিম

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বশেষ নির্ধারিত ডলারের বিনিময় হার হচ্ছে ৯৮ টাকা ৮৩ পয়সা। কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ১০০ টাকার ওপরে বিভিন্ন দামে বিক্রি করছে।

আর মানি চেঞ্জারগুলো বিক্রি করছে ১০৬ টাকা এবং তার চেয়েও বেশি দামে। গত মঙ্গলবার খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম উঠেছিল ১১২ টাকা।

যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক মঙ্গলবার ৫০ লাখ ডলার বাজারে ছেড়েছে। এনিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ছয় মাসে সাড়ে সাতশো কোটি ডলারের বেশি ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করেছে।

এছাড়া আমদানি কমাতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার পরও ডলারের বাজার যে অস্থির থাকছে, সেজন্য খোলাবাজারের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

"খোলাবাজারে বিশেষ করে মানি চেঞ্জাররা অন্য কোন কারসাজি করলো কীনা - সেটা সরেজমিনে খতিয়ে দেখবে আমাদের ১০টি টিম" বলেন মি: ইসলাম।

মানি চেঞ্জারদের সমিতি ডলারের বাজারে কোন কারসাজির সন্দেহ বা অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এই সমিতির সভাপতি এ কে ইসমাইল হক বলেছেন, বিদেশ ফেরত যারা ডলার নিয়ে আসেন, তাদের কাছ থেকে মানি চেঞ্জাররা ডলার কিনে থাকে বা সংগ্রহ করে থাকে।

এই বিদেশ ফেরত লোকজন আরও চড়া দামের আশায় ডলার ছাড়ছে না বলে মি: হক উল্লেখ করেন।

"আমাদের সমস্যা হচ্ছে, যাদের কাছ থেকে আমরা ডলার সংগ্রহ করি, তারা ভাবছে দাম আরও বাড়বে। সেজন্য তারা বিক্রি করছে না এবং আমরাও কিনতে পারছি না। ফলে আমরা ডলারের সঙ্কটে পড়েছি।"

তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, ডলারের বাজারের কারসাজির অভিযোগ প্রমাণ হলে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তথ্য সূত্র বিবিসি বাংলা।