নতুন শতাব্দীর শুরুতে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট আসার ফলে মানবজীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছিল, যার কারণে অনেক প্রবীণ ও মধ্যবয়সী মানুষ নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে চাকরি হারিয়েছিলেন। ঠিক একই ধরনের সম্ভাবনা এখন সৃষ্টি হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর যুগে।
বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি 'সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট, জবস, এআই অ্যান্ড ট্রেড' নামে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে জানিয়েছে যে, এই এআই বিশ্বজুড়ে চাকরির বাজারে বিরাট প্রভাব ফেলবে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার ছয়টি দেশ—ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই দেশগুলোতে সাত শতাংশ চাকরি খেয়ে নেবে এআই।
বিশ্বব্যাংকের এই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, এআই প্রযুক্তির কারণে ব্যবসায়িক সংস্থা এবং তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত 'মাঝারি শিক্ষিত' এবং তরুণ কর্মীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়বেন।
সংস্থাটি আশঙ্কা করেছে, বিশ্বের উন্নয়নশীল অর্থনীতির ১৫ শতাংশ চাকরি এআই আগ্রাসনে নিশ্চিহ্ন হতে পারে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অফিসের অনেক কাজ কমিয়ে দেবে, যার ফলে যারা হিসাবের কাজ (অ্যাকাউন্টস) এবং গ্রাহক সেবা (কাস্টমার সার্ভিস) দেন, তাদের চাকরি হারানোর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
একটি উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে যে, কম বেতনের নিম্ন আয়ের কর্মীরা তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিতে আছেন। অন্যদিকে, অভিজ্ঞ কর্মীদের চাকরি হারানোর সম্ভাবনাও কম। সব মিলিয়ে, পুরো বিশ্ব নতুন করে এক বড় সংকটের মুখে পড়তে চলেছে বলে বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কেবল গুগল সার্চের মতো তথ্য দেখানোতেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি পুরো প্রবন্ধও লিখতে পারে। একসময় ধারণা ছিল, এআই কখনোই সৃজনশীল হতে পারবে না, কিন্তু এখন এআই ছবি আঁকা, সিনেমা তৈরি, গল্প ও কবিতা লেখার মতো কাজও করে ফেলছে।
যদিও এআই এখন একটি নির্দিষ্ট ছক বা কাঠামো মেনে এসব সৃজনশীল কাজ করে, তবুও প্রশ্ন উঠেছে—ভবিষ্যতে কি এআই ছকভাঙা ও নতুন ধরনের সৃজনশীল কাজ করতে পারবে? এই বিষয়ে এআই-এর 'গড ফাদার' জেফ্রি এভারেস্ট হিন্টন পরিষ্কার কোনো ইঙ্গিত দেননি।